২০০১ সালেও বাংলাদেশের রিজার্ভ বা বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন এমন জায়গায় ছিল যে, আমদানির মূল্য চুকাতে টান পড়ত। ওই বছর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধ করতে হলে রিজার্ভ ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসত।
এত কম রিজার্ভ থাকলে দেশের ‘ভাবমূর্তি নষ্ট হবে’ বলে সে বছর প্রথমবারের মতো আকুর আমদানি বিল বাকি রাখতে বাধ্য হয়েছিল বাংলাদেশ।
২০ বছর পর সেই রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। রিজার্ভ এখন এতই উদ্বৃত্ত যে অন্য দেশকে বৈদেশিক মুদ্রা ধার দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ।
শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের শরণাপন্ন হওয়ায় দেশটিকে অন্তত ২০ কোটি ডলার ধার দিতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন এক মর্যাদার আসনে বসতে চলেছে বাংলাদেশ।
৪০ বছর আগে ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল মাত্র ১২ কোটি ডলার। এখন সেই রিজার্ভ ৩৭৫ গুণ বেড়ে ৪ হাজার ৫০০ কোটি (৪৫ বিলিয়ন) ডলারের চূড়ায় অবস্থান করছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বেশি রিজার্ভ আগে কখনোই ছিল না। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক রিজার্ভ বাড়তে বাড়তে এই মাইলফলক অতিক্রম করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আরও সুখবর দিয়ে বলছে, আগামী দুই বছরের মধ্যে এই রিজার্ভ ৭০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলছেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলার হবে।
তবে এই দীর্ঘ পথ মোটেও মসৃণ ছিল না। কখনো কখনো হোঁচট খেয়েছে। আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে।
অনেক সময় রাজনীতিতেও ইস্যু হয়েছে এই রিজার্ভ। এটি বাড়লে সরকারের সাফল্য হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। আবার কমে গেলে বিরোধী দলের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে সরকারকে।
আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের শেষ দিকে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন ১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি নেমে আসে। বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন রিজার্ভে ছিল ১ বিলিয়ন ডলারের সামান্য বেশি।
সে সময় আকুর বিল বাবদ ২০ কোটি ডলার পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু তাতে রিজার্ভ ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসত। আর রিজার্ভ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফসহ দাতাদের সহায়তা পাওয়া যাবে না, এই বিবেচনায় আকুর দেনা পুরোটা শোধ না করে অর্ধেক দেওয়া হয় তখন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ওই একবারই আকুর বিল বকেয়া রাখা হয়েছিল বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয়ের খরচ হিসাবে বর্তমানে হাতে থাকা রিজার্ভ দিয়ে ১১ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
এশিয়ার নয় দেশ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে, তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়। বাংলাদেশকে দুই মাস পরপর পরিশোধ করতে হয় আকুর বিল।
দুই বছরে হবে ৭০ বিলিয়ন ডলার
করোনাভাইরাস মহামারির থাবায় বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কাজ করছে সরকার। তার অংশ হিসেবে ২০২০ সাল শেষে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে করোনার অভিঘাত নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তাতে বলা হয়, মহামাররিকালেও বাংলাদেশের রিজার্ভ মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েছে। এতে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রবাসী আয়ে উল্লম্ফন অব্যাহত রয়েছে। প্রতি মাসেই বাড়ছে এই সূচক। এই ইতিবাচক ধারা সামনের দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।
আর তাই আগামী দুই বছর অর্থাৎ, ২০২৩ সালের মধ্যে রিজার্ভ বেড়ে ৭০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছুঁতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন দ্বিতীয়। ২৮ মে ভারতের রিজার্ভ ছিল ৫৯২ বিলিয়ন ডলার। গত ২১ মে পাকিস্তানের রিজার্ভ ছিল ২৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশের অর্ধেক। নেপালের ১১ বিলিয়ন ডলার। শ্রীলঙ্কার মাত্র ৪ বিলিয়ন ডলার।
রিজার্ভ একেবারে তলানিতে নেমে আসার কারণেই বন্ধুপ্রতিম দেশ শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের শরণাপন্ন হওয়ায় দেশটিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ২০ কোটি ডলার ধার দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি রিজার্ভ রয়েছে চীনের। দেশটির রিজার্ভের পরিমাণ এখন ৩ হাজার ২০০ বিলিয়ন ডলার।
১২ কোটি ডলার দিয়ে শুরু
স্বাধীনতার পর প্রায় এক দশক বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়নের (রিজার্ভ) কোনো তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নেই। হয়তো ওই সময়ে পণ্য রপ্তানি থেকে তেমন কোনো আয় দেশে আসেনি। রেমিট্যান্সও আসা শুরু হয়নি, বিদেশি ঋণ সহায়তাও মেলেনি। তাই রিজার্ভে কোনো বিদেশি মুদ্রার মজুতও ছিল না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ১৯৮১-৮২ অর্থবছর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে বিদেশি মুদ্রার মজুত জমতে শুরু করে। ওই অর্থবছর শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১২ কোটি ১০ লাখ ডলার।
পাঁচ বছর পর ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছর শেষে সেই রিজার্ভ বেড়ে হয় ৭১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ১৯৯১-৯২ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলারের ‘ঘর’ অতিক্রম করে ১ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। পরের ১৯৯২-৯৩ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়।
৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছর শেষে। ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছর শেষে তা কমে ২ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে তা আরও কমে ১ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
এরপর ১৯৯৭-৯৮ থেকে ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছর পর্যন্ত রিজার্ভ দেড় থেকে দুই বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ওঠানামা করে।
২০০০-০১ অর্থবছরে রিজার্ভ কমে ১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি নেমে আসে। ওই অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার থাকলেও অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে তা ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারে নেমে গিয়েছিল। তখনই আকুর বিল পুরোটা পরিশোধ না করে অর্ধেক করা হয়েছিল।
এরপর অবশ্য কখনই রিজার্ভ ১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি আসেনি। ২০০১-০২ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ বেড়ে হয় ১ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার।
২০০৫-০৬ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা ১৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।
এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। বেড়েই চলেছে অর্থনীতির এই সূচক।
২০১৪ সালের ১০ এপ্রিল রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ‘ঘর’ অতিক্রম করে। পরের বছর ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। ২০১৬ সালের জুনে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।
মহামারির মধ্যেও রেকর্ডের পর রেকর্ড
মহামারির মধ্যেও একের পর এক রেকর্ড হয়েছে রিজার্ভে। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার মাস গত বছরের মার্চ শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, মহামারির এই সময়েই রিজার্ভ বেড়েছে সাড়ে ১২ বিলিয়ন ডলার।
করোনা মহামারির মধ্যেই ২০২০ সালের ৩ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ২৪ জুন সেই রিজার্ভ আরও বেড়ে ৩৫ বিলিয়ন ডলার হয়।
এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই ৩০ জুন রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এক মাস পর ২৮ জুলাই রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরও অতিক্রম করে। তিন সপ্তাহ পর গত ১৭ আগস্ট রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।
তথ্যে দেখা য়ায়, মাত্র দেড় মাসে ৩৪ বিলিয়ন ডলার থেকে রিজার্ভ ৪ বিলিয়ন ডলার বেড়ে ৩৮ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।
২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর রিজার্ভ ছাড়ায় ৩৯ বিলিয়ন ডলার। ৮ অক্টোবর ছাড়ায় ৪০ বিলিয়ন ডলার। ২৯ অক্টোবর অতিক্রম করে ৪১ বিলিয়ন ডলার। ৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায় ১৫ ডিসেম্বর।
দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ৩০ ডিসেম্বর ৪৩ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে রিজার্ভ।
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন আরেকটি মাইলফলক অতিক্রম করে ৪৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।
গত ২৮ এপ্রিল অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। কিন্তু গত ৪ মে আকুর ১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।
গত তিন সপ্তাহে তা আবার বেড়ে ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছুঁইছুঁই করছে। গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে ছিল ৪৪ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার।
খুশি অর্থমন্ত্রী
মহামারিকালে রিজার্ভ রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ায় খুবই খুশি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মূলত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করেই রিজার্ভ একটার পর একটা রেকর্ড গড়ছে।’
এই কঠিন সময়ে বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অবদান রাখার জন্য তিনি প্রবাসীদের কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
অর্থমন্ত্রী একই সঙ্গে বলেন, ‘এই রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে সরকারের বড় ভূমিকা আছে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স আনতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
‘অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে সরকার তার সঙ্গে ২ টাকা যোগ করে স্বজনকে ১০২ টাকা দিচ্ছে। এতে প্রবাসীরা উৎসাহিত হচ্ছেন। বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘এই কঠিন সময়েও আমাদের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো ভালো অবস্থায় আছে। সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে রিজার্ভ ও রেমিট্যান্স। আমি আশা করছি, আগামী দিনগুলোতেও রেমিট্যান্সের এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে। আর তাতে ২০২১-২২ অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই আমাদের রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করবে।’
আত্মতুষ্টিতে না ভোগার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের
তবে রিজার্ভ বৃদ্ধিতে আত্মতুষ্টিতে না ভোগার পরামর্শ দিয়েছেন দুই অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ও আহসান এইচ মনসুর।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটা বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে। রেমিট্যান্স বাড়ার কারণে রিজার্ভ বেড়েছে ঠিক। কিন্তু আমদানি ব্যয় কমাও কিন্তু রিজার্ভ বাড়ার একটি কারণ। এ ছাড়া কোভিড মোকাবিলার জন্য বিশ্বব্যাংক-আইএমএফসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা বেশি বেশি ঋণ সহায়তা দিয়েছে। সেটাও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে। সে পরিস্থিতিতে যদি রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয়, বিদেশি ঋণ এখনকার মতো না আসে তখন কিন্তু রিজার্ভে চাপ পড়বে।’
তিনি বলেন, ‘সে কারণে সত্যিকার অর্থেই যদি সরকার রিজার্ভের এই ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে চায়, তাহলে রেমিট্যান্স, এক্সপোর্ট ও ফরেন এইড যাতে বাড়ে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। একটা বিষয় পরিষ্কার মনে রাখতে হবে, আমদানি কমে রিজার্ভ বাড়া কিন্তু মোটেই ভালো নয়।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রিজার্ভ বাড়া মানেই যে সবসময় সুখবর, বিষয়টি কিন্তু তেমন নয়।
উদাহরণ দিয়ে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার হাতে টাকা আছে। আমি বালিশের নিচে রেখে শুয়ে থাকলাম। শুনতে ভালো হতে পারে। কিন্তু টাকা যদি ভোগে বা বিনিয়োগে কাজে না আসে তাহলে সে টাকার উপকারিতা থাকে না।
‘আমদানি কম হচ্ছে, রেমিট্যান্স এলেও তার সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। আবার বিদেশি ঋণ-সহায়তার অর্থ যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে না। এগুলো অর্থনীতির জন্য কাঙ্ক্ষিত নয়।’
নতুন উচ্চতায় রেমিট্যান্স
মহামারির এই কঠিন সময়েও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়তে বাড়তে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি মে মাসের ২০ দিনে ১৫৮ কোটি ৮৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। সব মিলিয়ে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ১০ মাস ২০ দিনে (২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ২০ মে) ২ হাজার ২২৫ কোটি ৪৬ লাখ (২২.২৫ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে এক বছর বা অর্থবছরে এত বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসেনি।
অর্থবছর শেষ হতে আরও এক মাস ১০ দিন বাকি। ৩০ জুন শেষ হবে এই অর্থবছর।
অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের আশা, অর্থবছর শেষে এবার রেমিট্যান্সের অঙ্ক ২৫ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ (১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা ছিল এক অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স।
২০২০ সালে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ (২১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল এক বছরে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স।