বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতিতে বাংলাদেশ

  •    
  • ৩০ মে, ২০২১ ১৮:৪২

মার্চ মাস শেষেও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল ১৩৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

নয় মাস পর বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। ২০২০-২১ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার কোটি ৭০ লাখ ডলার।

অথচ মার্চ মাস শেষেও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল ১৩৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ছয় মাসে অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার।

সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি বাড়ায় লেনদেন ভারসাম্য উদ্বৃত্ত থেকে ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর। রপ্তানি না বাড়লে এই ঘাটতি নিয়েই অর্থবছর শেষ হবে বলে মনে করছেন তিনি।

তবে ব্যালান্স অফ পেমেন্টে ঘাটতি (ঋণাত্মক) দেখা দেয়ায় খুব একটা চিন্তিত নন অর্থনীতির আরেক গবেষক জায়েদ বখত। তিনি জানান, সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালেন্স) এবং আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যানশিয়াল অ্যাকাউন্ট) এখনও বড় উদ্বৃত্ত রয়েছে। তাই তেমন সমস্যা হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, আগামী ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের এই দশ মাসে ঘাটতি ছিল অনেক বেশি; ৩৭৭ কোটি ২০ লাখ ডলার।

গত বছরের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর রপ্তানির পাশপাশি আমদানিতেও ধস নামে। কয়েক মাসের মধ্যে রপ্তানি ঘুরে দাঁড়ালেও আমদানি কমতেই থাকে। ফলে লেনদেন ভারসাম্যে বড় উদ্বৃত্ত দেখা দেয়। কিন্তু গত দুই-তিন মাস ধরে আমদানি বেশ বাড়ায় সেই উদ্বৃত্ত আর ধরে রাখা যায়নি; এপ্রিল শেষে তা ঋণাত্মক (-) হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষ হয়েছিল ৪৮৪ কোটি ৯০ লাখ (প্রায় ৫ বিলিয়ন) ডলারের বড় ঘাটতি নিয়ে। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছর শুরু হয় উদ্বৃত্ত দিয়ে। প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এই উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৫৩ কোটি ৪০ লাখ (৩ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন) ডলার।

এর পরের তিন মাস ধারাবাহিকভাবে বাড়তে বাড়তে জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে তা ৪৩২ কোটি ২০ লাখ (৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন) ডলারে ওঠে।

কিন্তু দেশে করোনাভাইরাস মহামারির প্রথম ঢেউয়ের প্রকোপ কমতে থাকলে আমদানি বেড়ে যায়। সে কারণে জানুয়ারি শেষে অর্থাৎ জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সেই উদ্বৃত্ত ২২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারে নেমে আসে।

ফেব্রুয়ারি শেষে যা আরও কমে ১৫৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারে নেমে আসে। জুলাই-মার্চে তা আরও কমে নেমে আসে ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলারে।

সর্বশেষ জুলাই-এপ্রিল সময়ে লেনদেন ভারসাম্যে ৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার ঘাটতি দেখা দিলো।

গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, আমদানি বাড়ায় লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গত অর্থবছরও বড় ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল। এবার অতোটা না হলেও ঘাটতি নিয়ে যে বছর শেষ হবে, এটা নিশ্চিত। এখন রপ্তানি বাড়ানোর এই ঘাটতি যতোটা কম রাখা যায় ততোই মঙ্গল।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিতষ্ঠানের (বিআইডিএসস) গবেষক রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আশার কথা হচ্ছে, কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। সবাই বুঝতে পেরেছে, করোনাকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের চলতে হবে। সে কারণে আমদানিতে যে মন্দাভাব ছিল, সেটা আর নেই। এটা অর্থনীতির জন্য ভালো।

‘আমদানি বাড়া মানে দেশে বিনিয়োগ বাড়া, অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার হওয়া। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়া।’

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি ছিল ৫১০ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৯৫৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।

সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্য

তবে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালেন্স) এখনও বড় উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। অর্থবছরের দশ মাসে এই উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৪৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

গত বছরের একই সময়ে এই উদ্বৃত্ত ছিল মাত্র ৭১ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

আর্থিক হিসাবেও বড় উদ্বৃত্ত

আর্থিক হিসাবেও (ফাইন্যানশিয়াল অ্যাকাউন্ট) বড় উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।

অর্থবছরের তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৭৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের ঘাটতি ছিল। জুলাই-নভেম্বর সময়ে তা ৯৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার উদ্বৃত্তে চলে আসে। ছয় মাসে সেই উদ্বৃত্ত বেড়ে হয় ২২০ কোটি ১০ লাখ ডলার।

সাত মাসে তা আরও বেড়ে ৪৪৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার হয়। আট মাসে উদ্বৃত্ত ছিল ৫৬১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। নয় মাস শেষে তা বেড়ে হয় ৬৯৪ কোটি ২০ লাখ ডলার হয়েছে। ১০ মাস শেষে অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল সময়ে তা আরও বেড়ে ৭৮৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার হয়েছে।

গত বছরের এই দশ মাসে ৪৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।

বাণিজ্য ঘাটতি ১৭.২৩ বিলিয়ন ডলার

আমদানি বাড়ায় পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতিও বাড়ছে। অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭২২ কোটি ৭০ লাখ (১৭.২৩ বিলিয়ন) ডলার। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি।

অর্থাৎ বিদায়ী অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে রপ্তানির চেয়ে ১৭.২৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য আমদানি হয়েছে।

মহামারির কারণে আমদানি কমায় কিছুদিন পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি নিন্মমুখী ছিল। কিন্তু গত কয়েক মাসে আমদানি বাড়ায় এই ঘাটতি ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩ হাজার ১৩৩ কোটি ১০ লাখ ডলার আয় করেছে। আর আমদানিতে ব্যয় করেছে ৪ হাজার ৮৫৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

এই ১০ মাসে রপ্তানি বেড়েছে ৯ শতাংশ। আর আমদানি বেড়েছে ১৩ শতাংশ।

প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে গত অর্থবছর শেষ করেছিল বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে তা কমে ৬৪৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারে নেমে আসে। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ৮২২ কোটি ৩০ লাখ ডলার। জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সেই ঘাটতি বেড়ে ৯৭৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারে ওঠে।

আট মাসে অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। জুলাই-মার্চে তা বেড়ে হয় ১৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।

সর্বশেষ জুলাই-এপ্রিল সময়ে তা আরও বেড়ে হয়েছে ১৭ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার।

জুলাই-এপ্রিল সময়ে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। জুলাই-মার্চ সময়ে ছিল ১৯৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ঘাটতি ছিল ২২৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।

রেমিট্যান্স বাড়ছেই

মহামারির মধ্যেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন অব্যাহত রয়েছে। প্রতি মাসেই বাড়ছে এই অংক। অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে এই সূচক।

অর্থবছরের দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ২ হাজার ৬৫ কোটি ৬০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছর এই দশ মাসে পাঠিয়েছিলেন ১ হাজার ৪৮৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৯ শতাংশ।

প্রতি সপ্তাহেই রেমিট্যান্স প্রবাহের তথ্য প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, চলতি মে মাসের ২৭ দিনে (১ থেকে ২৭ মে) ১৯৫ কোটি ১৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

সবমিলিয়ে অর্থবছরের ১০ মাস ২৭ দিনে (২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ২৭ মে) ২ হাজার ২৬১ কোটি ৭৫ লাখ (২২.৬২ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।

এ বিভাগের আরো খবর