৯ দিন বন্ধ থাকার পর ২৫৯ জন যাত্রী নিয়ে সৌদি আরবের দুই গন্তব্যে উড়াল দিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের দুই ফ্লাইট।
শনিবার বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে ১৩৫ জন যাত্রী নিয়ে দাম্মাম ও সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে ১২৪ জন যাত্রী নিয়ে জেদ্দার পথে উড়াল দিয়েছে বিমানের দুটি সেভেন এইট সেভেন মডেলের উড়োজাহাজ।
বিমানের জনসংযোগ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার নিউজবাংলাকে জানান, রোববার দিবাগত রাত ৩টা ২০ মিনিটে আরেকটি ফ্লাইট রিয়াদের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই ফ্লাইটগুলোতে যারা গিয়েছেন তাদের সৌদি আরবে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য হোটেল বুকিং বিমানের ব্যবস্থাপনাতেই করা হয়েছে।’
‘সেভেন এইট সেভেন উড়োজাহাজের যাত্রী ধারণক্ষমতা ২৭১ হলেও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের করোনাকালীন যাত্রী বহন নির্দেশনার কারণে ধারণক্ষমতার কম যাত্রী বহন করতে হয়েছে।’
সম্প্রতি কোভিড নিয়ন্ত্রণে বিদেশিদের জন্য সৌদি আরব সরকারের কঠোর শর্তের কারণে ২০ মে থেকে দেশটিতে সব ফ্লাইট বন্ধ রেখেছিল বিমান। শনিবার থেকে আবার শুরু হলো দেশটির তিন গন্তব্যে ফ্লাইট।
সৌদি সরকারের নতুন শর্তে বলা হচ্ছে, দেশটিতে ভ্রমণ করতে যাওয়া সব বিদেশি নাগরিককে বাধ্যতামূলক কোভিড চিকিৎসাসংক্রান্ত ইনস্যুরেন্স করতে হবে। এই ইনস্যুরেন্সের আওতায় হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে ১৪ দিনের খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসগুলোকে। দেশটিতে যেতে চাওয়া যাত্রীদের ভ্রমণের প্রথম ও সপ্তম দিন পিসিআর টেস্টের ব্যবস্থাও এয়ারলাইনসকে করতে হবে বলে শর্ত দেয়া হয়েছে।
ফ্লাইটের যাত্রীদের তালিকা এয়ারলাইনসগুলোকে যাত্রার চার দিন আগে দেশটির কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে বলে শর্ত দিয়েছে সৌদি আরব। নতুন এই শর্ত কার্যকর হয়েছে ২০ মে থেকে।
সৌদি সরকারের এ সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন ছুটিতে দেশে আসা প্রবাসী কর্মীরা। টিকিট কেটেও দেশটিতে যেতে পারছেন না তারা। অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে হোটেল বুকিং দেয়ার পর জানতে পেরেছেন নির্দিষ্ট একটি অ্যাপের মাধ্যমে বুকিং না দিলে তা গ্রহণ করা হচ্ছে না। তাদের অনেকেরই ইকামার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তাদের যাওয়াও অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
বিমান ছাড়া ঢাকা থেকে দেশটির বিভিন্ন গন্তব্যে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস ও নাস এয়ার। কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত না করতে পারায় টিকিট কেটেও যেতে পারেননি অনেক যাত্রী।
তাহেরা খন্দকার বলেন, ‘সৌদি আরবে যাত্রা শুরুর অন্তত ৭২ ঘণ্টা আগে দেশটিতে কোয়ারেন্টিন হোটেল প্যাকেজ নিশ্চিত করার একটি নির্দেশনা আগেই দেয়া হয়েছিল। যারা অ্যাপের মাধ্যমে হোটেল বুকিং করতে পারছিলেন না, তাদের সারা দেশে বিমানের যে সেলস সেন্টারগুলো রয়েছে, সেখান থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।’
সৌদির যাত্রীদের জন্য বিমানের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জেদ্দা, রিয়াদ ও দাম্মামের যাত্রীদের যাত্রা শুরুর কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা আগে কোয়ারেন্টিন হোটেলসহ প্যাকেজ নিশ্চিত করতে হবে। প্যাকেজটি নিশ্চিত করতে বিমান অফিস অথবা ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে বিমান হলিডে ওয়েবসাইট থেকে হোটেল বুক করতে হবে। অন্য মাধ্যমে হোটেল বুক করলে তা গ্রহণ করা হবে না বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ।
এ ছাড়া ফ্লাইট সৌদি আরবে অবতরণ করার অন্তত ৭২ ঘণ্টা আগে যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা ও রিপোর্ট গ্রহণ করতে হবে।
সৌদি আরবে অনাবাসিক ও প্রথমবারের মতো ভ্রমণকারীদের মধ্যে যারা করোনা টিকার দুটি ডোজই নিয়েছেন এবং দ্বিতীয় ডোজের পর ১৪ দিন শেষ হয়েছে, তাদের কোয়ারেন্টিনের প্রয়োজন নেই। তবে ভ্রমণের সময় অবশ্যই টিকা গ্রহণের প্রমাণপত্র সঙ্গে রাখতে হবে।
সৌদি আরবে আবাসিক বা ইকামাধারীদের মধ্যে যারা সেখান থেকে তাওয়াক্কালনা অ্যাপের মাধ্যমে করোনা টিকার প্রথম বা দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন, তাদেরও কোয়ারেন্টিনের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে বিমান।
যে দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আসে, এর শীর্ষে রয়েছে সৌদি আরব। দেশটির বিভিন্ন শহরে বর্তমানে ২০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি নানা খাতে কাজ করছেন। গত অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে এসেছে ৪০০ কোটি ৫১ লাখ ডলারের রেমিটেন্স। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রেমিটেন্স এসেছে ৪৭৯ কোটি ৫৩ লাখ ডলার।
শুধু কাজের জন্য নয়, এর বাইরে হজ ও ওমরাহ করতেও বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি সৌদি আরবে যান। ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হলে ভোগান্তি বাড়ে যাত্রীদের।
করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ রুখতে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করেছিল সৌদি আরব। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ছিল ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। ফ্লাইট না থাকায় ছুটিতে আসা প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশকে অনিশ্চয়তায় পড়তে হয়েছিল। পরে অবশ্য সরকারের মধ্যস্থতায় সমস্যার সমাধান হয়।