পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো বাংলাদেশের চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের শেয়ারপ্রতি আয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার বোর্ডসভা করে কোম্পানিটি দুটি হিসাব দিয়েছে। প্রথমে জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তাদের শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে ২১ টাকা ৫১ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে তা ছিল ১৬ টাকা ৮৭ পয়সা।
পরে অবশ্য লভ্যাংশের সমন্বয় করে ইপিএস কম হবে বলেও জানানো হয়েছে।
তবে কোম্পানিটি এবার ২০০ শতাংশ বোনাস, অর্থাৎ একটি শেয়ারের বিপরীতে দুটি করে বোনাস দিয়েছে। এ কারণে এই ইপিএস আসলে হবে তিন ভাগের এক ভাগ, অর্থাৎ ৭ টাকা ১৭ পয়সা।
এ বিষয়টি ধরতে না পারলে বিনিয়োগকারীরা বড় ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
কারণ, ২১ টাকা যদি ইপিএস হয়, তাহলে বছর শেষে হিসাব দাঁড়ায় ৮৪ টাকা। বর্তমানের শেয়ার মূল্য সাড়ে পাঁচ শ টাকার কিছু বেশি। যদি প্রথম প্রান্তিকে ২১ টাকা ইপিএস ধরে কেউ শেয়ার কিনতে চায়, তাহলে এই দামের চেয়ে বেশি টাকা নিতে আপত্তি করার কথা নয়।
তবে ৭ টাকা ১৭ পয়সা ধরলে চূড়ান্ত লভ্যাংশ দাঁড়াবে ২৮ টাকা ৬৮ পয়সা। অবশ্য বছরের প্রথম প্রান্তিকে যে আয়, সেই হারেই যে পরে আয় হবে, এটাও ঠিক নয়।
ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার মনে করেন, এভাবে হিসাব প্রকাশ করা ঠিক হয়নি।
তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের জন্য কোম্পানিটি যে বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে, সেটি ইতিমধ্যে বণ্টন করা হয়ে গেছে। তারপরও প্রথম প্রান্তিকে আগের শেয়ার ধরে শেয়ারপ্রতি আয় প্রকাশ করা হাস্যকর। আবার ঘোষিত লভ্যাংশ সমন্বয় হিসেবে ধরে আরেকটি ইপিএস প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।’
এ বিষয়ে কথা বলতে বিএটিবিসির সেক্রেটারি সচিব আজিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ফোনে ও খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
বিএটিবিসির শেয়ারপ্রতি আয় কত হবে, সেটি নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পুঁজিবাজার-সম্পর্কিত গ্রুপ ও পেজগুলোতে। এরই মধ্যে অনেকে বিএটিবিসির বিপুল মুনাফা আর আগের বছরের তুলনায় বেশি আয় হয়েছে বলেও পোস্ট করছেন। তারা শেয়ার দর বাড়তে বলে আগাম ঘোষণাও দিয়ে যাচ্ছেন।
তবে কেউ কেউ আবার প্রকৃত আয় যে কম, সেটি হিসাব করে বলছেনও। এ নিয়ে দুই পক্ষে বিতর্কও হচ্ছে।
গত বছরের লভ্যাংশ কত
পুঁজিবাজারে ১৯৭৭ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি গত ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরে ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। শেয়ারপ্রতি এই আয় ছিল ৬০ টাকা ৪৮ পয়সা। আয়ের পুরোটাই তারা নগদে বিতরণ করেছে। এর অর্ধেক অবশ্য দেয়া হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন। আর ৩০ টাকা দেয়া হয়েছে চূড়ান্ত লভ্যাংশ হিসেবে।
পাশাপাশি ২০০ শতাংশ অর্থাৎ একটি শেয়ারের বিপরীতে দুটি বোনাস শেয়ার দিয়েছে।
মহামারির বছরে এই আয় আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির আয় ছিল ৯৩৬ কোটি টাকার মতো। তার আগের বছর আয় ছিল ১ হাজার কোটি টাকা।
গত তিন বছরে কোম্পানিটি পরিশোধিত মূলধন তিন গুণ করেছে। ৬০ কোটি টাকা থেকে ১৮০ কোটি টাকায় উত্তীর্ণ এই মূলধন আরও তিন গুণ বাড়িয়ে ৫৪০ কোটি টাকা করেছে।
পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর পাশাপাশি কোম্পানিটি কারখানা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে এই কারখানা সম্প্রসারণে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৯২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।