মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের বাসিন্দা আশরাফুল হকের বাসার এয়ার কন্ডিশনার (এসি) ঠিকমতো কাজ করছে না। তাই তিনি এটি পরিবর্তন করতে এসেছেন তেজকুনিপাড়ার ওয়ালটন প্লাজায়। এক্সচেঞ্জ অফারে নতুন এসিতে কিছু ছাড় পাওয়া যাচ্ছে এখানে।
তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে নতুন একটা কিনব ভাবছিলাম। আজ অফিস থেকে একটু আগে এসে কিনেই ফেললাম। বাসায় ছোট মেয়ে ও বয়স্ক বাবা-মা রয়েছেন। এই গরমে তাদের অবস্থা কাহিল।’
তেজকুনিপাড়া ওয়ালটন প্লাজার ইনচার্জ মো. রোজাউল করিম বলেন, গত এক সপ্তাহ যে এসির চাহিদা বেশ বেড়েছে। এমনকি যারা কখনও এসির কথা ভাবেন না, তারাও এসির খোঁজে শোরুমে আসছেন। এখন যারা এসির খোঁজ করছেন, তাদের অনেকেই মধ্যবিত্ত ক্রেতা। এক থেকে দেড় টনের এসিতেই তাদের চাহিদা বেশি।
তিনি বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এখন তুলনামূলক কম দামে এসি পাওয়া যায়। আবার সব টাকা এক সঙ্গেও দিতে হয় না। ছয় থেকে ১২ মাসের কিস্তির সুযোগও রয়েছে। ওয়ালটনের এসি সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা।
বিজয় সরণির মিনিস্টার-মাইওয়ান পার্কের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মো. ইসমাইল বলেন, গত বছর মানুষের তেমন আগ্রহ ছিল না। এবার আগ্রহ তুলনামূলক বেশি। বিক্রিও বেশি।
তিনি বলেন, ‘ফ্যান বিক্রি গরমের শুরুতে কিছুটা বাড়ে। তবে বিক্রি সারা বছর প্রায় একই থাকে। মাঝারি গরমে এয়ারকুলারের বিক্রি বাড়ে, কিন্তু প্রচণ্ড গরম এসির প্রতি ঝোঁক বাড়ায়।’
র্যাংগসের শেরুমে এসি দেখতে আসা তেজগাঁওয়ের ক্রেতা পারভেজ আলম বলেন, ‘ছোট পরিবারের দুই রুমমের বাসা, কিন্তু উপরে ছাদ। অন্য বছর যেমন-তেমন কষ্ট হলেও এবার থাকা যাচ্ছে না। তাই কিস্তিতে একটি দেড় টনের এসি কেনার চেষ্টা করছি। সুবিধা মতো দামে মিললেই কিনে ফেলব। এক সঙ্গে পুরো দাম শোধ করা সম্ভব নয়, কিস্তিই ভরসা।’
র্যাংগস ইলেকট্রনিক্সের তেজগাঁও বিক্রয় কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. মাহবুবুর রহমান হারুন বলেন, ‘আগের চেয়ে এসির প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। তবে এবার যে গরম পড়ছে, করোনা না হলে এ বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ হতো। কারণ গতবছর বিক্রি কম হলেও মানুষের পকেটে তখন টাকা ছিল। কিন্তু এখন নগদ টাকা অনেক কম। তাই বেশিরভাগ ক্রেতাই কিস্তিতে চাইছেন।’
বাড়ছে বিক্রি
বিক্রোতার বলছেন, এসি এখন আর বিলাসপণ্য নেই। ২০২০ সালে গুজব ছড়িয়েছিল যে, ঠান্ডায় কারোনার প্রকোপ বাড়ে। তখন এসির বিক্রি কিছুটা কমে গিয়েছিল। এবারের তাপমাত্রার ঊর্ধ্বমুখী পারদ আবার বিক্রি বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে ফ্যানের বাতাসেও গরম এড়ানো যাচ্ছে না। তাই বেশিরভাগই এসি কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন। দেশের বাজারে বর্তামানে এক টন, দেড় টন, দুই টন থেকে চার টনের নতুন মডেলের এসি পাওয়া যাচ্ছে।
ওয়ালটন প্লাজার ইনচার্জ মো. রোজাউল করিম বলেন, আগে মধ্যবিত্ত শ্রেণি এয়ারকুলারের প্রতি আকৃষ্ট ছিল। কিন্তু এবারের গরমে এয়ারকুলার আর কাজ করছে না। কারণ, এয়ারকুলার ৩০ থেকে ৩২ ডিগ্রি তাপমাত্রার জন্য ঠিক আছে। এর উপরে গেলে তা তেমন গমর দূর করতে পারে না। এছাড়া এসির দাম মধ্যবিত্তের সামর্থ্যের মধ্যে আসার কারণে এর ব্যবহার বাড়ছে।
সম্প্রতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওয়ালটন দাবি করেছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারি-এপ্রিল সময়ে তাদের এসি বিক্রি চার গুণ বেড়েছে।
চীনা ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি ‘গ্রি’-এর এসি বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রা মার্টের দাবি, তাদের এসি বিক্রি বেড়েছে ৩০ শতাংশ।
ব্র্যান্ড, দাম ও প্রযুক্তি
দেশের বাজারে শতাধিক ব্র্যান্ডের এসি আছে। এর মধ্যে স্যামসাং, সিঙ্গার, ওয়ালটন, মিনিস্টার, মার্সেল, ওয়ালটন, গ্রি, মিডিয়া, জেনারেল, হায়ার উল্লেখযোগ্য। বাজারে ব্র্যান্ড ভেদে এসির দাম পড়ছে সর্বনিম্ন ৩৪ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত।
এসিতে নতুন নতুন ফিচার যোগ করছে কোম্পানিগুলো। গ্রি বলছে, তাদের এসি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পাশাপাশি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ধুলাবালি থেকে ঘরের বাতাস পরিশুদ্ধ রাখে। ওয়ালটন বলছে, তাদের এসি ইনভার্টার প্রযুক্তির, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। ওয়ালটনের এসিতে ভয়েস কন্ট্রোল প্রযুক্তিও সংযুক্ত হয়েছে। ঘরের বাইরে থেকেই মোবাইলের মধ্যমে তা বন্ধ করা যায়। স্যামসাং বলছে, তাদের এসিতে রয়েছে ডিজিটাল ইনভার্টার প্রযুক্তি, যাতে বিদ্যুত অনেক কম লাগে।
বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির এয়ার কুলার রয়েছে এগুলোর দাম ৭ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা।