চার বছর ধরে লভ্যাংশ না দেয়া জীবন বিমা কোম্পানি পদ্মা লাইফ হঠাৎ করে দুই শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ২০ পয়সা নগদ লভ্যাংশ ঘোষণার পর পুঁজিবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
১৫ কার্যদিবসের মধ্যে দাম বেড়েছে শেয়ারপ্রতি ১১ টাকা ৪০ পয়সা বা ৬১ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটির লভ্যাংশের ইতিহাস কখনও ভালো নয়। তালিকাভুক্তির বছরে ৮ শতাংশ এবং ২০১৬ সালের জন্য ২০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়া ছাড়া আর আর কখনও লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
২০২০ সালের জন্যও কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা না করার পর এপ্রিলের শুরুতে একপর্যায়ে শেয়ারমূল্য কমে ১৬ টাকা ১০ পয়সায় নেমে আসে।
৫ এপ্রিল লকডাউন শুরুর পর বিমা খাতের শেয়ারমূল্যে যে অস্বাভাবিক উত্থান দেখা দেয়, তখন পদ্মা লাইফের শেয়ারদরও কিছুটা বাড়তে থাকে।
এর মধ্যে ২ মে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটি ২০ পয়সা করে অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ দেয়ার কথা জানায়। সেদিন শেয়ারমূল্য ছিল ১৮ টাকা ৪০ পয়সা।
কোনো কোম্পানির শেয়ার দিনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়তে পারে। তবে লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণা ছিল বলে সেদিন দর বৃদ্ধির কোনো সীমা ছিল না।
সেদিনই দাম বাড়ে ৪ টাকা ৪০ পয়সা বা ২৪ শতাংশ।
পরদিন ৬০ পয়সা কমলেও এর পরের দুই দিনে আবার ১০ শতাংশ দাম বাড়ার প্রান্তসীমা প্রায় ছুঁয়ে যায়।
এরপর পাঁচ কার্যদিবস ওঠানামা করে দাম কমে ২ টাকা ৭০ পয়সা। পরে টানা চার কার্যদিবসে দাম আরও বাড়ে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।
কোম্পানিটি যেদিন এই অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, সেদিন প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়। এ সময় জানানো হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত কোম্পানির জীবন বিমা তহবিল ১ কোটি টাকার কিছু বেশি বেড়েছে। আর মোট তহবিল দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
আগের বছরের একই সময়ে তহবিল কমেছিল ৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আর মোট তহবিল ছিল ১২ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
২০১৮ সালের শেষদিকে কোম্পানির মালিকানায় পরিবর্তন আসে। আগের পর্ষদের সদস্যরা তাদের সব শেয়ার বিক্রি করে দেন।
ওই বছরের অক্টোবরে মালিকানায় আসে চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠন এস আলম গ্রুপ।
মালিকানা পরিবর্তনের আগে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে গ্রাহকের বিমা দাবি না দেয়াসহ শতকোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ছিল। আর তাদের বিমা তহবিলও ক্রমাগতভাবে কমতে থাকে।
এস আলম গ্রুপের মালিকানায় যাওয়ার পরেও পদ্মা লাইফের স্বাস্থ্যে এমন কোনো অগ্রগতি হয়নি গত আড়াই বছরে।
কী বলছেন বিশ্লেষকরা
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জীবন বিমা কোম্পানির আয় কত, এ হিসাব করার ক্ষমতা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেই বললেই চলে। ফলে জেড ক্যাটাগরির একটি কোম্পানি ২ শতাংশ যে লভ্যাংশ দিল তাতে এর শেয়ারদর কীভাবে এত বাড়তে পারে?’
তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বিমার শেয়ারের দর বাড়ার কারণ অনুসন্ধানে কাজ করা উচিত নিয়ন্ত্রক সংস্থার।’
কার কাছে কত শেয়ার
কোম্পানির মোট শেয়ারের ৩৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে। ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ আছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৫০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। কোম্পানিটির অর্থবছর নির্ধারণ করা আছে ৩১ ডিসেম্বর।