বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কর আদায়ে ধনীদের ওপর সরকারের নজর

  •    
  • ২৪ মে, ২০২১ ২৩:৫৩

আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সম্পদশালীদের ওপর সারচার্জ বাড়ানো হচ্ছে। একই সঙ্গে সারচার্জ আদায় প্রক্রিয়া সহজ করা হচ্ছে।

রাজস্ব আদায়ে আগামী বাজেটে ধনীদের ওপর নজর দিচ্ছে সরকার। করোনাকালে সাধারণ জনগণের ওপর করের বোঝা না চাপিয়ে সমাজে যারা বিত্তবান, যাদের আয়-রোজগার ভালো, তাদের কাছ থেকেই বেশি কর আহরণের চেষ্টা করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

অর্থমন্ত্রণালয় ও এনবিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সম্পদশালীদের উপর সারচার্জ বাড়ানো হচ্ছে। একই সঙ্গে সারচার্জ আদায় প্রক্রিয়া সহজ করা হচ্ছে।

বর্তমানে সর্বনিম্ন নিট সম্পদ মূল্য ৩ কোটি টাকা পযন্ত সারচার্জমুক্ত এবং ন্যূনতম সারচার্জ বছরে ৩ হাজার টাকা। সাতটি স্তরে প্রযোজ্য হারে সারচার্জ আদায় করা হয়।

নতুন বাজেটে নিট সম্পদমূল্য সীমা ৩ কোটি টাকাই বহাল রেখে ন্যূনতম সারচার্জ বাতিল করা হচ্ছে। তবে সাতটির পরিবর্তে পাঁচটি স্তর করা হচ্ছে ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের নীতি নির্ধারক পযায়ের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, আগামী বাজেটে ‘সারচার্জের’ কাঠামো আরও সহজ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। এতে করে আয়কর আদায় আরও বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।

সারচার্জ কী?

সারচার্জ হচ্ছে এক ধরনের ‘অতিরিক্ত’ কর। ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের ক্ষেত্রে কারও নির্দিষ্ট সীমার বেশি সম্পদ থাকলে নিয়মিত কর দেয়ার সঙ্গে ‌‘বাড়তি’ সারচার্জও পরিশোধ করতে হয়।

নিট সম্পদের ওপর ভিত্তি করে এটি ধার্য করা হয়। একে ‘সম্পদজনিত’ করও বলা হয়।

বিষয়টি উদাহরণ দিয়ে পরিষ্কার করা যায়। ধরা যাক, একজন করদাতার নিট সম্পদের মূল্য ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর বাইরে চাকরি থেকে বছরে আয় পাঁচ লাখ টাকা।

এখানে চাকরি থেকে যে আয় আসছে, তার জন্য কর দিতে হবে। সঙ্গে সম্পদের জন্যও পৃথক সারাচার্জ দিতে হবে।

বর্তমান আইনে ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা। ফলে নিয়ম মোতাবেক, অবশিষ্ট দুই লাখ টাকার বিপরীতে প্রযোজ্য অর্থাৎ ৫ শতাংশ হারে কর আসবে ১০ হাজার টাকা। পাশাপাশি ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার নিট সম্পদের জন্য ওই করদাতাকে উল্লিখিত আয়করের ১০ শতাংশ সারচার্জ বাবদ অতিরক্তি আরও ১ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। ফলে তাকে মোট কর দিতে হচ্ছে ১১ হাজার টাকা।

এখানে ১০ হাজার টাকা নিয়মিত কর এবং ১০০০ টাকা সরাচার্জ হিসাবে সরকার আদায় করবে।

এভাবে যার যত বেশি আয় আছে এবং যত বেশি নিট সম্পদ আছে, তিনি তত বেশি কর দেবেন সরকারেক।

তবে কোনো ব্যক্তির আয় না থাকেল তাকে সারচার্জ দিতে হবে না।

যোগাযোগ করা হলে এনবিআরের সাবেক সদস্য আমিনুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে চালু করা হয় সারচার্জ।’

তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সমাজে আয়বৈষম্য ও সম্পদ বৃদ্দির যে ঝুঁকি রেয়েছ, তা নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তি করদাতার সারচার্জ কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

আগে সারচার্জ আরোপের পর তা বাতিল করা হয়। পরে ২০১১ -১২ অর্থবছরে তা পুনঃপ্রবর্তন করা হয় এবং তাতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়।

নিট সম্পদের সাথে একাধিক গাড়ি বা সিটি করপোরেশন এলাকায় আট হাজার বর্গফুটের গৃহসম্পত্তি থাকলে তাকেও সারচার্জ দিতে হবে।

সারচার্জ দিতে সাড়া কম

বেশি কর আহরণের জন্য সরকার সারচার্জ চালু করলেও তেমন সাড়া মেলেনি।

এনবিআরের পরিসংখ্যানে বলে, ২০১১-১২ অর্থবছরে যখন সারচার্জ প্রবর্তন করা হয়, তখন মাত্র ৪ হাজার ৪৪৬ জন করদাতা সারচার্জ দেন। এ থেকে সরকার কর পেয়েছে মাত্র ৪৫ কোটি টাকা।

এর পর থেকে সারচার্জ আদায় বাড়লেও তা আশানারূপ নয়।

সবেশষ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১১ হাজার ৬৭০ জন করদাতার কাছ থেকে ৩৬০ কোটি টাকা কর পায় সরকার।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ব্যক্তি করদাতাদের মাত্র দশমিক ৩ থেকে ৫ শতাংশ সারচার্জ দেন। ফলে সম্পদশালীদের বেশিরভাগই সারচার্জের আওতার বাইরে।

এনবিআরেরৱ কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশে বছরে যে সংখ্যক লোক আয়কর রিটার্ন জমা দেন, কাগজে-কলমে তার মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ ৩ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। কিন্তু বাস্তবে সম্পদশালীদের সংখ্যা অনেক বেশি ।

বিবিএসের তথ্য অনুযাযী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের হাতে অর্ধেক সম্পদ। সে হিসাবে এখনও বেশির ভাগ ধনী সারচার্জের আওতার বাইরে।

লন্ডনভিত্তক প্রতিষ্ঠান ওয়েলথএক্স-এর ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ৩ কোটি ডলার বা ২৫০ কোটি টাকার সম্পদ আছে এমন মানুষের সংখ্যা বেড়েছে সাড়ে ১৭ শতাংশ।

এতে বলা হয়, অতি ধনী মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে দ্রুত হারে যেসব দেশে বাড়ছে, সেই তালিকায় সবার উপরে রয়েছে বাংলাদেশ।

আগামী বাজেটে সারচার্জ নিয়ে প্রস্তাব

আগামী বাজেটে সারচার্জের স্তর পাঁচটিতে নামিয়ে এনে ন্যূনতম সারচার্জ বাতিল করা হচ্ছে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত সম্পদের সারচার্জ দিতে হবে না।

৩ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ হারে, ১০ কোটি থেকে ২০ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ সারচার্জ।

২০ কোটি টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত ৩০ শতাংশ এবং ৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদশালীদের আয়করের ওপর ৩৫ শতাংশ হারে সারচার্জ দেয়ার প্রস্তাব থাকতে পারে।

এ বিভাগের আরো খবর