বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নারীদের ৫০ শতাংশ হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে: আতিউর রহমান

  •    
  • ২৪ মে, ২০২১ ২২:১৮

‘গত বছর কোভিড মহামারির মধ্যে একটি আপৎকালীন বাজেট তৈরি করার কারণে নারীর ইস্যুগুলোর দিকে মনোযোগ দেয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। এ বছর সুযোগ এসেছে জেন্ডারভিত্তিক বৈষম্যের জায়গাগুলোতে দৃষ্টি দেয়া এবং গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য খাতগুলোতে বাজেট বরাদ্দ করা।’

করোনাভাইরাস মহামারির সময় সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর সব কর্মসূচিতে নারীদের জন্য ৫০ শতাংশ হিস্যা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান।

সোমবার বেসরকারি সংস্থা স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট এবং গ্যাড অ্যালায়েন্স আয়োজিত ‘জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট ২০২১-২০২২: বিবেচ্য বিষয়সমূহ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এ দাবি জানান তিনি।

আতিউর রহমান বলেন, ‘করোনার কারণে অর্থনীতি যেমন ধাক্কা খেয়েছে, তেমনি নারী ও মেয়েশিশুদের জন্য নতুন এবং বাড়তি কিছু চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। যেমন ঘরে-বাইরের কাজের চাপ, পড়াশোনা ব্যাহত হওয়া, পরিবারের সদস্যদের ও রোগীদের পরিচর্যা ইত্যাদি। সেই সঙ্গে পারিবারিক ও যৌন নির্যাতন বৃদ্ধি, বাল্যবিবাহ, কর্মক্ষেত্রে হয়রানি, উচ্চশিক্ষার সুযোগ কমে যাওয়াসহ নানা সমস্যার কারণে নারীদের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি স্থিমিত হয়ে পড়ছে।

‘গত বছর কোভিড মহামারির মধ্যে একটি আপৎকালীন বাজেট তৈরি করার কারণে নারীর ইস্যুগুলোর দিকে মনোযোগ দেয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। এ বছর সুযোগ এসেছে জেন্ডারভিত্তিক বৈষম্যের জায়গাগুলোতে দৃষ্টি দেয়া এবং গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য খাতগুলোতে বাজেট বরাদ্দ করা।

‘যেমন এত দিনের উপেক্ষিত স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি। করোনায় শহরাঞ্চলে অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ হারানো নারীদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করা এবং নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে তাদের জন্য শর্তগুলো শিথিল এবং সহজ করতে হবে।

‘করোনাকালীন সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীসহ সব কর্মসূচিতে নারীদের জন্য ৫০ শতাংশ হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে।’

ওয়েবিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘আমাদের অনেক নীতি ও পরিসংখ্যান আছে, জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেটের আওতায় নারী-পুরুষের জন্য বিভিন্ন রকম বরাদ্দও আছে। কিন্তু এ বরাদ্দগুলো কীভাবে ব্যয় করা হবে, কাদের দ্বারা করা হবে, বাস্তবায়িত না হলে দায়ীদের শাস্তি দেয়া হবে কি না ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর আমরা যত দিন সঠিকভাবে না পাব কিংবা মনিটরিংটা সঠিকভাবে না হবে, তত দিন আমরা নারীর অধিকার যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারব না।

‘মহামারিকালে সারা পৃথিবীতে বাল্যবিবাহসহ নারীদের নানামুখী সমস্যা বেড়েছে। এর সমাধানের জন্য সরকারি-বেসরকারি মেকানিজমের পাশাপাশি আমাদের একটি নিরপেক্ষ সংস্থা প্রয়োজন; যারা এই সমস্যাগুলো নিয়ে রেকর্ড রাখবে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে এবং মন্ত্রণালয় কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে কি না, তা মনিটরিং করবে। যেসব ক্ষেত্রে নারীদের দক্ষতা রয়েছে (যেমন কৃষি খাত) সেখানে বেশি বরাদ্দ দিতে হবে। দরিদ্রদের জন্য কর্মসূচি প্রণয়নের সময় দরিদ্র নারীদের কথা মাথায় রেখে বাজেট বরাদ্দ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (যেমন ছোট সাইজের স্মার্টফোন/দোয়েল ল্যাপটপ) সুলভে প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। বেকার ও আয় কমে যাওয়া মানুষদের জন্য সরাসরি নগদ অর্থ সহায়তা দিতে হবে।’

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক নাজনীন আহমেদ বলেন, অভিবাসী যেসব নারী করোনার কারণে দেশে ফেরত এসেছেন, তাদের কোনো আর্থিক বা আইনি সহায়তা লাগলে বাজেটে তার জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ইতিমধ্যে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ যেন তারা সঠিকভাবে এবং যথাসময়ে পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অতি ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ঋণসুবিধা দিতে বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে। অনানুষ্ঠানিক খাতের উদ্যোক্তাদের বিশেষ প্যাকেজের আওতা বাড়াতে হবে এবং নারীদের জন্য আলাদা করে ৫০ শতাংশ বরাদ্দের কথা উল্লেখ করতে হবে।

‘তৈরি পোশাক খাতে কাজ হারানো (বিশেষ করে বয়স্ক) নারীদের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। বাজেটে নারীর হিস্যার বিষয়টি শুধু সংখ্যার ভিত্তিতে নয়, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির ভিত্তিতে নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে ২০১৩ সালে প্রণীত নারী উন্নয়ন কৌশলপত্র অনুযায়ী বাজেটে যথাযথ কর্মসূচি ও বরাদ্দ করা হচ্ছে কি না, তা বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ ডিজাস্টার ম্যানেজম্যান্ট অ্যান্ড ভালনারাবিলিটি স্টাডিজ বিভাগের পরিচালক মাহবুবা নাসরীন বলেন, কোভিড-১৯ মহামারিকে একটি স্বাস্থ্যগত দুর্যোগ বলা যায়, যা নারী ও মেয়েশিশুসহ বিভিন্ন ঝুঁকির মধ্যে থাকা গোষ্ঠী, যেমন হিজড়া এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের অনেক বেশি ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।

‘এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের অর্জনগুলোকে ম্লান করে দিতে পারে। দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবার জন্য খাদ্য, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, পানি ও পয়োনিষ্কাশন, আশ্রয়ণ প্রকল্প, জীবিকা ও কর্মসংস্থান, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা হ্রাস ইত্যাদির জন্য নারীবান্ধব ও দরিদ্রবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।’

ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা এবং ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন স্টেপসের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার।

বক্তব্য দেন দীপ্ত ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জাকিয়া কে হাসান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট আবুল হোসেন, গাইবান্ধা উন্নয়ন নেটওয়ার্কের সভাপতি এস এম আব্দুস সালামসহ অনেকে।

সভাপ্রধান ছিলেন চট্টগ্রাম সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সভাপতি এস এম নাজের হোসেন।

দেশের প্রায় ৩০টি জেলার তৃণমূল উন্নয়নকর্মী, সংগঠক, জনপ্রতিনিধি মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।

এ বিভাগের আরো খবর