অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। টানা তিন মাস ধরে অল্প অল্প করে বাড়ছে এই সূচক।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সোমবার সন্ধ্যায় হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, গত এপ্রিল মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
এর অর্থ হলো, ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে যে পণ্য বা সেবার জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, ২০২১ সালের এপ্রিলে সেই পণ্য বা সেবার জন্য ১০৫ টাকা ৫৬ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
করোনাকালে শ্রমজীবীদের আয় কমে যাওয়ার কারণে, এই মূল্যস্ফীতি তাদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে।
ভোজ্যতেল, চিনিসহ আরও কয়েকটি পণ্যের দাম কিছুটা বাড়ায় এপ্রিল মাসে দেশের মানুষকে এই বাড়তি খরচ করতে হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিএস।
আগের মাস মার্চে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ।
জানুয়ারিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ০২ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরে ছিল ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ।
সাত বছর পর ২০২০ সালের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের ঘর অতিক্রম করে ৬ দশমিক ০২ শতাংশে উঠেছিল। নভেম্বরে অবশ্য সামান্য কমে তা ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশে নেমে আসে।
পরের দুই মাস ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতেও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক নিম্নমুখী ছিল। ফেব্রুয়ারি থেকে তা আবারো ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
বিবিএসের তথ্য বলছে, এপ্রিলে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত দুই খাতেই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আর খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
মার্চে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। আর খাদ্য বহির্ভূত খাতে হয়েছিল ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
ফেব্রুয়ারিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ; জানুয়ারিতে যা ছিল ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ।
অন্যদিকে খাদ্য বর্হিভূত খাতে মূল্যস্ফীতি জানুয়ারিতে ছিল ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ; ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ।
এপ্রিলে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। মার্চে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
অন্যদিকে এপ্রিল মাসে শহরাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৩৯ শথাংশ। মার্চে হয়েছিল ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৩০ ভাগ।
মার্চের তুলনায় এপ্রিলে গ্রাম ও শহর এলাকায় খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভুত খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, এপ্রিল মাসে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। মার্চে হয়েছিল ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আর খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। মার্চে হয়েছিল ৫ দশমিক ০৩ শতাংশ।
শহর এলাকায় এপ্রিলে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। মার্চে হয়েছিল ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। মার্চে হয়েছিল ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইস মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলা যায়। এবার রমজান মাসেও জিনিসপত্রের দাম খুব একটা বাড়েনি। সরবরাহেও কোনো সমস্যা ছিল না। সে কারণে মার্চের চেয়ে এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি অল্প একটু বেড়েছে।’
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে থমকে যাওয়া অর্থনীতি সচল করতে বাজারে বাড়তি মুদ্রাপ্রবাহের কারণে ঝুঁকি থাকলেও চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ধরেছে সরকার।
অর্থবছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি বাজেটের লক্ষ্যের মধ্যেই থাকবে বলে আশা করছেন আহসান মনসুর।