দুই দিন সংশোধনের পর আবার উত্থানে ফিরল ব্যাংক খাত। বিপুল আগ্রহের কারণে দাম বেড়েছে বস্ত্র খাতেও। বিমা খাতেও দাম আরও বেড়েছে।
তিন খাতে একসঙ্গে দাম বাড়ার প্রভাবে সূচকও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। লেনদেনও ছাড়িয়েছে পৌনে দুই হাজার কোটি টাকা।
৫ এপ্রিল লকডাউন শুরুর পর থেকে পুঁজিবাজারে যে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, সেটি আশার পারদ দিনে দিনে আরও চড়ছে।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে বাজারের আচরণে হাসি আরও চওড়া হয়েছে বিনিয়োগকারীদের মুখে।
৯ কার্যদিবস টানা উত্থানের পর ১ দিন দর সংশোধন শেষে আবার সূচক বৃদ্ধি। এরপর ২ দিন পর পর সূচক কমায় যারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন, তারাও হেসেছেন বাজারের আচরণে।
ব্যাংক খাতের ৩১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২২টির। ৬টির দর ছিল অপরিবর্তিত, আর কমেছে ৩টির।
বস্ত্র খাতের ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৪০টির। দাম কমেছে ৮টির, আর অপরিবর্তিত আছে সমপরিমাণ কোম্পানির দাম।
বিমা খাতের ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৬টির, কমেছে ৯টির, ২টির লেনদেন স্থগিত আর অপরিবর্তিত ছিল ৩টির দর।
বিরতির পর ব্যাংকের উত্থান
এই খাতে আবার দাম বাড়ার শীর্ষে এনআরবিসি। ২৭ এপ্রিল থেকে বাড়তে বাড়তে শেয়ার দর তিন গুণ হয়ে গেল প্রায়।
আগের দিনের ৩০ টাকা ৮০ পয়সার সঙ্গে তিন টাকা যোগ হয়ে শেয়ারমূল্য এখন দাঁড়িয়েছে ৩৩ টাকা ৮০ পয়সা। ২৭ এপ্রিল দাম ছিল ১১ টাকা ৬০ পয়সা।
টাকার অঙ্কে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেড়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের দুই টাকা ১০ পয়সা। ৪৭ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৯ টাকা ১০ পয়সা।
ব্যাংক খাতে ৩১টি কোম্পানির শেয়ারদরের চিত্র
আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর ২৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে হয়েছে ২৪ টাকা ১০ পয়সা।
ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংকের শেয়ার দর ১৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৬ টাকা ৯০ পয়সা।
ওয়ানব্যাংকের শেয়ার দর ১১ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১২ টাকা ২০ পয়সা।
বস্ত্রখাতে আগুন
ডেল্টা স্পিনার্সের দর ১০ টাকা থেকে ১০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১১ টাকা।
কাট্টালী টেক্সটাইলের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ। তাল্লু স্পিনিং মিলসের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
পর পর দুই দিন রিং সাইন টেক্সটাইলের দাম বাড়ল প্রায় সর্বোচ্চ পরিমাণে। টানা দ্বিতীয় দিন প্রায় ১০ শতাংশ দাম বাড়ার পর বিক্রেতা শূন্য হয়ে গেলেও দিন শেষে কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ৩০ পয়সা।
বস্ত্র খাতে ৫৬টি কোম্পানির লেনদেনের চিত্র
এ ছাড়া রহিম টেক্সটাইলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা, আমান কটন ফাইভারে এক টাকা ৯০ পয়সা, দুলামিয়া কটনে এক টাকা ৩০ পয়সা, ভিএসএফ থ্রেডে এক টাকা ২০ পয়সা আলহাজ্ব টেক্সটাইল ও আনলিমা ইয়ার্নে এক টাকা ১০ পয়সা করে দাম বেড়েছে।
বিমায় এবার বাড়ল এতদিন যেগুলো কম বেড়েছে
বিমা খাতে গত এক বছরে ব্যাপক উত্থান হলেও ২০২০ সালে সর্বোচ্চ মুনাফা করা গ্রিনডেল্টা ও রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সে দর বেড়েছিল তুলনামূলক কম। তবে এবার এই দুটি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ল একদিনে যত বাড়া সম্ভব ততই।
গ্রিনডেল্টার দর বেড়েছে দিনের সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। শেয়ার দর ৬৭ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৪ টাকা ১০ পয়সা।
রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার প্রতি দর ৬১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৬৭ টাকা ৮০ পয়সা।
বিমা খাতের ৫০টি কোম্পানির লেনদেনের চিত্র
নর্দান ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার প্রতি দর ৪৫ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা ১০ পয়সা।
বেড়েছে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ২৯ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩২ টাকা ১০ পয়সা।
শেয়ার প্রতি ২০ পয়সা করে অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ দেয়ার পর থেকে পদ্মা লাইফের যে উত্থান, তাও অব্যাহত আছে। দুর্বল কোম্পানিটির শেয়ার দর দুই টাকা করে বেড়ে হয়েছে ২৯ টাকা ৮০ পয়সা।
তবে গোটা খাতের দাম বৃদ্ধির মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যরেন্স কোম্পানি, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, সোনার বাংলা ও স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের দর।
কী বলেছেন বিশ্লেষকরা
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংকের শেয়ার গত কয়েকদিন ধরে কমছিল। এখন আবার বেড়েছে। এটা ভালো দিক। বস্ত্র খাতের উত্থানে এ খাতের লভ্যাংশ ঘোষণাকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। ফলে নতুন করে বিনিয়োগ করছে। মূলত এ খাতের শেয়ার দর এ সময়টিতেই বেশি বাড়ে।’
তিনি বলেন, ‘সার্বিক পুঁজিবাজারের লেনদেন ভালো হচ্ছে। এছাড়া নতুন নিয়মে আইপিও করতে হলে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে। মে মাসের শেষে নতুন একটি কোম্পানির আইপিও প্রক্রিয়া শুরু হবে, সে কারণেই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন।’
সূচক ও লেনদেন
সোমবার থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন হচ্ছে বেলা দুইটা পর্যন্ত। করোনা পরিস্থিতিতে চলমান লকডাউনে বাংলাদেশ ব্যাংকে লেনদেনের সময়সীমা বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এর আগের রোববার পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে দেড়টা পর্যন্ত।
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন বেড়েছে ৫৫ দশমিক ৩১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮৪২ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস সূচক ৬ দশমিক ২৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৬৯ পয়েন্টে।
সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১১ দশমিক ২২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৭২ পয়েন্ট।
লেনদেন হয়েছে মোট ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা। ফলে একদিনের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৩৩৫ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৭৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৯৩৫ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৯৯টির, কমেছে ৬৫টির। দর পাল্টায়নি ৩০টির। লেনদেন হয়েছে মোট ৯৮ কোটি টাকা।