অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাপিয়ে গেল বাংলাদেশ। এ নিয়ে ভারতের গণমাধ্যম মোদি সরকারের তীব্র সমালোচনা করছে। প্রশংসা করা হচ্ছে বাংলাদেশের।
রোববার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার। বর্তমান বাজার দরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এই অঙ্ক ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৫০ টাকা। আর প্রতিবেশি দেশ ভারতের মানুষের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯৪৭ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যা ১ লাখ ৬৫ হাজার ১০৫ টাকা।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের মাথাপিছু আয় ২৮০ ডলার কম। অর্থাৎ ভারতের একজন নাগরিকের চেয়ে বাংলাদেশের একজন নাগরিক এখন বছরে ২৩ হাজার ৭৪৪ টাকা বেশি আয় করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারি এবং প্রাণঘাতী এই রোগ মোকাবেলায় নেওয়া লকডাউন ভারতের অর্থনৈতিক সংকোচনের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৬৪ ডলার। তার আগের অর্থবছরে (২০১৮-১৯) ছিল ১ হাজার ৯০৯ ডলার।
২০০৭ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ভারতের মাথাপিছু আয়ের অর্ধেক ছিল।
মাথাপিছু আয়ে বাংলাদেশ ভারতকে ছাড়িয়ে যাওয়া নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস-এর বাংলা সংস্করণে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
‘“অচ্ছে দিন” সোনার পাথর বাটি? বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছাপিয়ে গেল ভারতকে’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ভারতকে ছাপিয়ে গেল বাংলাদেশের মাথাপিছু গড় আয়। প্রকাশ্যে চলে এল দেশের অর্থনীতির রুগ্ন চেহারা। বাংলাদেশের গড় মাথাপিছু পরিসংখ্যান প্রকাশের পর দাবি বিশেষজ্ঞদের।
‘বাংলাদেশের জাতীয় পরিকল্পনা বিষয়ক মন্ত্রী যে দাবি করেছেন, তাতে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ভারতের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের মন্ত্রীর এই দাবি ঘিরে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে দেশের রাজনৈতিক মহলে। দেশের বেহাল অর্থনীতি নিয়ে মোদি সরকারকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। তাদের প্রশ্ন, পড়শি দেশের মাথাপিছু আয় যেখানে বেড়েছে, সেখানে কোথায় গেল মোদি সরকারের ‘অচ্ছে দিন’ (সুদিন)-এর প্রতিশ্রুতি? সেক্ষেত্রে ‘অচ্ছে দিন’ এখন সোনার পাথর বাটি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মত বিরোধীদের।
‘বাংলাদেশের পরিকল্পনা মন্ত্রকের মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘চলতি বছরে দেশের জনসংখ্যার মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্য বছরে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৭৩ টাকা।
‘উল্লেখ্য, গত বছর বাংলাদেশের জনসংখ্যার মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলার। সেই তুলনায় এ বছর মাথাপিছু আয় ১৬৩ ডলার বেড়েছে। শতাংশের হিসেবে যা গত বছরের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি। এর বিপরিতে এখন ভারতীয়দের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯৪৭ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশের তুলনায় ২৮০ মার্কিন ডলার কম। স্বাভাবিকভাবে এই তথ্য সামনে আসতেই মোদি সরকারের দিকে আঙুল উঠতে শুরু করেছে। তবে এ নিয়ে কেন্দ্রের তরফে এখনও কোনো বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি।’
এর আগে গত বছর বাংলাদেশ ও ভারতের মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলানামূলক একটি চিত্র নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সেই পূর্বাভাস নিয়েও ভারতের গণমাধ্যমে ভারত সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করা হয়েছিল; প্রশংসা করা হয়েছিল বাংলাদেশের।
২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর আইএএফের ওই পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ভারতকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০২০ পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হবে ১ হাজার ৮৮৮ ডলার। আর একই সময়ে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি হবে ১ হাজার ৮৭৭ ডলার।