বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আরও প্রণোদনা চান খামারিরা

  •    
  • ২২ মে, ২০২১ ০৮:২৮

জেলার ৬ হাজার ৫৫০টি খামারের মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার পারিবারিক গরুর খামার, ৪০৩টি বাণিজ্যিক খামার, ৭৪২টি ব্রয়লার, ৩৯টি লেয়ার ও ১ হাজার ৮৬৬টি হাঁসের খামার রয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৩৪৫ জন খামারমালিককে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে।

নেত্রকোণায় করোনা পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়া ক্ষুদ্র, প্রান্তিক এবং মাঝারি পোলট্রি ও গরুর খামারিদের সরকারের পক্ষ থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা প্রণোদনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

জেলার প্রায় সাড়ে তিন হাজার খামারমালিকের মধ্যে এই প্রণোদনা দেয়ার কথা জানিয়ে প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলেছে, জেলায় আরও দুই হাজার খামারমালিককে প্রণোদনা দেয়ার বিষয়টি তাদের বিবেচনায় রয়েছে।

তবে খামারমালিকরা বলছেন, করোনাকালীন বাজারে তাদের খামারের উৎপাদিত পণ্যের দাম কম পাচ্ছেন। অন্যদিকে খামারের প্রাণীদের খাদ্যের দাম দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেছে। খামার বাঁচাতে আরও প্রণোদনার আবেদন তাদের।

খামারিদের অভিযোগ, জেলায় একটি খামারের অবস্থাও ভালো নেই। কোনোমতে টিকে আছে সেগুলো। খামারের খাদ্যসামগ্রীর দাম নিয়ন্ত্রণ, সহজ শর্তে ঋণ, ভর্তুকি দিয়ে খামারগুলোকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন তারা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে জানা গেছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির প্রভাবে জেলার হাঁস, মুরগি ও গরুর খামারগুলো বেহাল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও মাঝারি খামারমালিকরা বেশি বেকায়দায় পড়েন।

এদের মধ্যে জেলায় সংকর জাতের উন্নত গাভি এবং ব্রয়লার, লেয়ার, সোনালি মুরগি ও হাঁস পালনকারী পারিবারিক ও বাণিজ্যিক উভয় পর্যায়ের খামারমালিকরা আছেন। এ অবস্থায় সরকার খামারমালিকদের পাশে দাঁড়ায় ও তাদের আর্থিক প্রণোদনা দেয়া শুরু করে।

জেলায় এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৩৪৫ জন খামারমালিককে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। প্রণোদনা দেয়া খামারমালিকদের মধ্যে ২ হাজার ৪৯৫ জন গাভির, ৫৬৮ জন মুরগির ও ২৮২ জন হাঁসের খামারের মালিক। এসব খামারমালিককে সর্বনিম্ন সাড়ে ৪ হাজার ও সর্বোচ্চ ২২ হাজার টাকা করে দেয়া হয়।

জেলার ৬ হাজার ৫৫০টি খামারের মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার পারিবারিক গরুর খামার, ৪০৩টি বাণিজ্যিক খামার, ৭৪২টি ব্রয়লার, ৩৯টি লেয়ার ও ১ হাজার ৮৬৬টি হাঁসের খামার রয়েছে।

সদর উপজেলার মেদনি ইউনিয়নের বড়োওয়ারি গ্রামের গরুর খামার মালিক বাপন সাহা। বাছুর মিলিয়ে তার খামারে এখন ৩০টি গরু। প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৬০ লিটার দুধ হয় খামারটিতে। তিনি সরকার থেকে ২০ হাজার টাকা প্রণোদনা পেয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘করোনা শুরুর পর থেইক্যা এই লাগাত ৪ লাখ টেহার বেশি লোকসান দিছি। লকডাউনে মিষ্টির দোহান বন্ধ। হেরা দুধ কিনা ছাইড়া দিছে। এক লিটার দুধে নিচের পক্ষে ১০ টেহা কইম্যা ৪০ থেইক্যা ৪৫ টেহায় বেচতাছি। আরেক দিক দিয়া গরুর খাওন গমের ভুসি, ভুট্টা, খৈল কিনন লাগতাছে প্রায় ডাবল দামে। অহন আমরার টিহন দায়।’

তিনি খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ, ভর্তুকিসহ সহজ শর্তে ঋণসুবিধা দিতে সরকারের কাছে দাবি জানান।

সদর উপজেলার চল্লিশা ইউনিয়নের দড়িজাগি গ্রামের ব্রয়লার মুরগির খামারি ফারজানা আক্তার পলি। তিনিও পেয়েছেন প্রণোদনার টাকা।

তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে লকডাউনডা যহন শুরু অইচিলো, তহনই ১ লাখ ৩৪ হাজার টেহা লস দিছি। ৫৪ টেহা কইরা মুরগির বাইচ্চা কিইন্যা পাইল্যা পরে বেচছি ৯৪ টেহা কইর‌্যা। মুরগির খাওন, খামারের খরচ মোট এই টেহাডা হাত থেইক্যা গেচে। এইবায় অইলে খামার টিকায়াম কেমনে?’

করোনার থাবায় ক্ষতিগ্রস্ত লেয়ার মুরগির খামারিরাও। বাজারে মুরগির ডিমের দাম কমে গেছে।

সদর উপজেলার আমতলা ইউনিয়নের পাঁচকাহনীয়া গ্রামের লেয়ার মুরগির খামারি বলেন, ‘করোনা শুরুর পর থেইক্যা ডিমের দাম কইম্যা গেছে। বাজারে মুরগির খাওনের দাম বাইড়া গেচে। দুইডার মধ্যে ফারাকডা বেশি অওয়ায় লোকসান গুনতাছি। ভুট্টা আগে ১৭-১৮ টেহা কেজি আছিল, অহন ২১ টেহা কেজি কিনন লাগে। সোয়াবিন ৩৩-৩৪ টেহা দরে বেচত। অহন ৪৭-৪৮ টেহা কেজির কম কিনন যায় না। বাজারে ডিম ৬৫০ টেহা শ বেচন লাগে। খরচই অয় বেশি। আমার তিন লাখ টেহার বেশি লস অইছে। এইবায় যাইতে থাকলে খামারডারে টিয়াইতাম পারতাম না।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মনোরঞ্জন ধর বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রধান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের সদস্যসচিব ও উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি করা হয়। ওই কমিটির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকা করে ঢাকায় অধিদপ্তরের লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডিভেলপমেন্ট প্রকল্পে (এলডিডিপি) পাঠানো হয়। উপজেলা, জেলা পর্যায় ও প্রকল্প কর্মকর্তারা মিলে মোট তিন ধাপে তালিকা ধরে নিশ্চিত করার পর খামারিদের প্রণোদনা দেয়া হয়।’

প্রণোদনার টাকা বিতরণে স্বচ্ছতা নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, ঢাকা কার্যালয় থেকে সরাসরি খামারিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বিকাশ, নগদ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রণোদনার এই টাকা পাঠানো হয়েছে। এতে অনিয়মের কোনো সুযোগ ছিল না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে দীর্ঘ সময় লকডাউন ছিল, এখনও আছে। এর প্রভাব পড়েছে খামারগুলোতেও। খামারমালিকদের সহযোগিতা দেয়ার চেষ্টা করেছে সরকার। আরও ২ হাজার ৫৫ জন খামারমালিকের তালিকা ঢাকায় পাঠিয়েছি। আশা করছি, দ্রুতই এসব খামারিও সরকারের প্রণোদনার টাকা পেয়ে যাবেন।’

এ বিভাগের আরো খবর