বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মহামারিতেও বাড়ল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত ও ঋণ

  •    
  • ২১ মে, ২০২১ ১৯:৩০

করোনার মধ্যে টাকা অনেকের হাতে ছিল, তারা সেটা সঞ্চয় করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু সুবিধার কারণে করোনার নেতিবাচক প্রভাব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তেমন পড়েনি।  

করোনায় কমে গেছে অনেকের আয়। ফলে সঞ্চয়ও কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু সংকটেও সঞ্চয় বেড়েছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে।

মহামারির বছরেও এসব প্রতিষ্ঠানের আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণ দুটোই বেড়েছে। ২০২০ সাল শেষে আমানত বেড়েছে ১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। আর একই সময়ে ঋণ বিতরণ ৯৯০ কোটি টাকা বেড়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিডি ফিন্যান্সের কোম্পানি সচিব মুন্সি আবু নাঈম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার মধ্যে টাকা অনেকের হাতে ছিল, তারা সেটা সঞ্চয় করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু সুবিধার কারণে করোনার নেতিবাচক প্রভাব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তেমন পড়েনি। তবে সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা যে ভালো, তা নয়। কিছু কিছু কোম্পানি গ্রাহকদের আস্থা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। অনেকের হাতে টাকা আছে কিন্তু ব্যবসা মন্দা থাকায় বিনিয়োগ করতে পারেনি। তারা সেই টাকা সঞ্চয় করেছে।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, করোনার বছরে ঋণ পরিশোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেক ছাড় দিয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ শোধ না করলেও কোনো গ্রাহক খেলাপি হয়নি। তবে করোনার মধ্যেও অনেক গ্রাহক ঋণ নিয়মিত শোধ করেছে। সে তুলনায় নতুন ঋণ বিতরণ হয়নি। আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন নীতি-সহায়তা দেয়া হয়েছে। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় তেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব বিশেষ সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

আমানতের সিংহভাগ রাজধানীতে

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমানতের পরিমাণ ছিল ৪৩ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা, যা জুনে কমে হয় ৪৩ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। তবে সেপ্টেম্বরে আবার আমানত বেড়ে ৪৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকায় ওঠে। আর ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট আমানত আরো বেড়ে হয় ৪৪ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা।

২০১৯ সাল শেষে আমানত ছিল ৪৩ হাজার ১২১ কোটি টাকা। অর্থাৎ মহামারির বছরে আমানত বেড়েছে ১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে ৩৫টির মধ্যে ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তথ্যও যুক্ত রয়েছে। এগুলো হলো কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক। এ ছাড়া আমানত নিতে পারে না, এমন কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্যও প্রতিবেদনে রয়েছে।

এই আমানতের ৯২ দশমিক ২৬ শতাংশই রাজধানী ঢাকার ভেতরের শাখাগুলোতে রয়েছে। এরপরেই চট্টগ্রামে আছে ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের বড় একটি অংশের জোগানদাতা ব্যাংক। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ব্যাংকের মতো নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে (এনবিএফ) তারল্য সহায়তা দিতে বেশ কিছু নীতি-সহায়তা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যাতে এনবিএফআই থেকে আমানত তুলে না নেয়, সে জন্যও ব্যাংকগুলোকে দফায় দফায় নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ঋণ বিতরণ ঢাকায় বেশি

আমানতের পাশাপাশি লিজিং কোম্পানিগুলোর ঋণ বিতরণও বেড়েছে।

২০২০ সালের মার্চের শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৯ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। তা জুনে কিছুটা কমে হয় ৬৯ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। আর সেপ্টেম্বরে ঋণ আরও কমে ৬৮ হাজার ৯৩১ কোটি টাকায় নামে। তবে ডিসেম্বর শেষে এনবিএফআইগুলোর বিতরণ করা ঋণ বা অগ্রিমের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৯ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত এক বছরে ৯৯০ কোটি টাকা ঋণ বেড়েছে ।

বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে বেসরকারি খাতের ঋণ ছিল ৬৯ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা। আর সরকারি ঋণ ৪ হাজার ৪৮ কোটি টাকা।

২০১৯ সালের একই সময়ে বেসরকারি ঋণ ছিল ৬৮ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। আর সরকারি ঋণ ছিল ৪ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা।

সবচেয়ে বেশি ঋণ গেছে শিল্প খাতে, প্রায় ৩৮ শতাংশ। ব্যবসা ও বাণিজ্য খাতে ২৩ শতাংশ, ভোক্তাঋণ ১৪ শতাংশ, নির্মাণ খাতে ১৪ শতাংশ, কৃষিতে ৩ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ৭ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

আমানতের মতো ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে শীর্ষ অবস্থানে আছে রাজধানী। ৮৪ দশমিক ৫২ শতাংশ ঋণই রাজধানী ঢাকার ভেতরের শাখাগুলোতে রয়েছে। এরপরেই চট্টগ্রামে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আগে অনেক ঋণের সুদের হার ১৬-১৭ শতাংশ ছিল। ব্যাংকের ঋণের সুদ ৯ শতাংশ নির্দিষ্ট করে দেয়ার পর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদও কমেছে। করোনাভাইরাসের কারণে সরকারঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের একটি বড় অংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। এ জন্য মহামারিতে এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণ বিতরণ বেড়েছে।

তহবিল ব্যয় কমেছে

তহবিল ব্যবস্থাপনায় ব্যয় কমিয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ১০০ টাকা তহবিল সংগ্রহে গড়ে ৯ টাকা ১১ পয়সা ব্যয় করেছে। অন্যান্য খরচ মিলিয়ে তাদের গড় ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ২৫ পয়সা। চলতি বছরের মার্চ শেষে তহবিল সংগ্রহে ব্যয় কমে হয়েছে ৭ টাকা ০২ পয়সা। আর খরচ মিলিয়ে তাদের গড় এই ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ২৪ পয়সা। বছরের ব্যবধানে এ ব্যয় কমেছে ২ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বর্তমানে ব্যাংকবহির্ভূত এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকনির্ভরতা কমিয়ে আমানত সংগ্রহে তুলনামূলক বেশি জোর দেয়ায় তহবিল ব্যয় কমছে। এতে করে তাদের ঋণের সুদহারও কমছে। বর্তমানে প্রায় ৪০ শতাংশ তহবিল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সংগ্রহ করা হচ্ছে যা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সহায়ক।

২০১৩ সালে এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক সুদহার ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তহবিল ব্যয় সূচক চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ওই প্রজ্ঞাপনে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের তহবিল সংগ্রহের ব্যয়, বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত নগদ জমার হার (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ সংরক্ষণের হার (এসএলআর), প্রশাসনিক ব্যয় এবং উদ্যোক্তা মূলধনের ব্যয় নির্বাহের হিসাব করে মোট ব্যয়ের হিসাব রাখতে বলা হয়। এসব ব্যয়ের পর যে সুদ নেবে তা হবে ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালন মুনাফা।

বেশির ভাগ শাখা শহরাঞ্চলে

সারা দেশে এনবিএফআইগুলোর শাখা রয়েছে ৭৯৬টি। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে ৬৮২ এবং গ্রামাঞ্চলে ১১৪ টি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে চারটি সরকারি এনবিএফআইয়ের শাখা রয়েছে ৫৮টি। বেসরকারি ৩০টি এনবিএফআইয়ের শাখা রয়েছে ২৪৪টি।

বিভাগের হিসেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঢাকাতে ৩০০টি, চট্টগ্রামে ১৪০, খুলনায় ৭২, রাজশাহীতে ৮৪, বরিশালে ৪২, সিলেটে ৫০, রংপুরে ৫৫ ও ময়মনসিংহে ৫৩টি শাখা রয়েছে।

ব্যাংকের মতো সব ধরনের লেনদেনের লাইসেন্স না থাকলেও বেশ কিছু এনবিএফআই মেয়াদি আমানত নিতে পারে। এ ধরনের এনবিএফআইগুলো নন-ব্যাংক ডিপোজিটরি করপোরেশন হিসেবে বিবেচিত হয়।

এ বিভাগের আরো খবর