বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্যাংকের পতনে সূচকে ভাটা

  •    
  • ২০ মে, ২০২১ ১৪:২৭

পুঁজিবাজার ঈদের ছুটিতে যাওয়ার আগ থেকেই ব্যাংক খাতের উত্থান ঈদের ছুটির শেষে বুধবার পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। সেদিন ব্যাংক খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি সবগুলোর দর বেড়েছে। বৃহস্পতিবার উত্থানের এ ধারায় পতনের ধাক্কা লেগেছে।

বাড়তে থাকা পুঁজিবাজারে এবার ভাটার টান লেগেছে। ব্যাংকসহ বিমার মূল্য সংশোধন আর অতিমূল্যায়িত হওয়ার শেয়ারে পর্যবেক্ষণ সময় নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

এমন অবস্থায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সূচকের বড় পতন হয়েছে। আগের দিনের তুলনায় কমেছে লেনদেনও।

ঈদরে ছুটির পর পুঁজিবাজারে পাঁচ কার্যদিবসে তিনদিনই কমেছে সূচক। বৃহস্পতিবার হাজার কোটি টাকা লেনদেন হলেও আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় ৪৪৭ কোটি টাকা কমেছে।

লেনদেন কমলেও টানা ১৪ দিনের মতো হাজার কোটি টাকা লেনদেন ধরে রেখেছে পুঁজিাবাজারে। এর আগের ১২ ডিসেম্বর থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা ২৪ দিন লেনদেন ছিল হাজার কোটি টাকা। এরপর ২৯ এপ্রিল থেকে বাড়তে থাকা লেনদেন এখনও হাজার কোটি টাকার ঘরে আছে।

এর মাঝে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার ঘোষিত লকডাউনে ৫ এপ্রিল পুঁজিবাজারে প্রথম কার্যদিবসে লেনদেন নেমে আসে ২৩৬ কোটি টাকায়। সেই লকডাউন এখনও অব্যাহত আছে, যা ২২ মে পর্যন্ত চলবে।

লকডাউনের এই সময়ে টানা নয় কার্যদিবস বেড়েছে সূচক। একই সঙ্গে গত এক যুগে ঈদের আগে ও পরে হাজার কোটি টাকা লেনদেনে পরিসংখ্যান ছিল না পুঁজিবাজারে, যা এবার দেখা গেছে।

গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো তাদের শেয়ারধারীদের জন্য ২০২০ সালের লভ্যাংশ ঘোষণা করে আসছে। লভ্যাংশ ঘোষণার প্রথম দিকে ব্যাংকে খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের তেমন আগ্রহ ছিল না। এপ্রিলের শেষের দিকে এসে পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকে এ খাতের শেয়ারের দর।

পুঁজিবাজার ঈদের ছুটিতে যাওয়ার আগ থেকেই ব্যাংক খাতের উত্থান ঈদের ছুটির শেষে বুধবার পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। সেদিন ব্যাংক খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি সবগুলোর দর বেড়েছে। বৃহস্পতিবার উত্থানের এ ধারায় পতনের ধাক্কা লেগেছে।

এদিন ব্যাংক খাতে তালিকাভুক্ত ৩১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ছয়টির, কমেছে ২৩টির; পাল্টায়নি দুটির।

সাত কার্যদিবস ধরে টানা বাড়তে থাকা এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ারের দরও কমেছে বৃহস্পতিবার।

বিমা খাতের সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার দর কমলেও দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া শীর্ষ তালিকায় ছিল এ খাতের দুটি কোম্পানি। এদিন তালিকাভুক্ত ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে নয়টির। কমেছে ৩৭টির; দর পাল্টায়নি চারটির।

বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ছয়টির। কমেছে ৪৫টির। দর পাল্টায়নি পাঁচটির।

বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৬০ দশমিক ০৬ পয়েন্ট। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস কমেছে ৯ দশমিক ৫৯ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক কমেছে ২২ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট।

কমেছে ব্যাংকের শেয়ার দর

গত সাত কার্যদিবস ধরে টানা বেড়েছে পুঁজিবাজারে সদ্য তালিকাভুক্ত এনআরবিসি ব্যাংক। এর মধ্যে চারদিন বড়েছে দিনের সর্বোচ্চ দরে। এ সময়ে ১২ টাকা দরের শেয়ার উঠে আসে ৩০ টাকায়। বুধবার পর্যন্ত ছিল এ উত্থান।

বৃহস্পতিবার এসে থামলে ব্যাংকটির শেয়ার দরের উত্থান। শেয়ার প্রতি দর কমেছে ১০ পয়সা বা ৩৬ শতাংশ। এদিন লেনদেন শেষে বেশির ভাগ ব্যাংকের শেয়ারের দর কমলেও দর বৃদ্ধি পাওয়া শীর্ষ তালিকায় ছিল এ খাতের বেশকিছু কোম্পানি।

এদিন এবি ব্যাংক ছিল দর বৃদ্ধি পাওয়া শীর্ষ তালিকার সাত নম্বরে। আর ওয়ান ব্যাংক ছিল ১২ নম্বরে। এবি ব্যাংকের শেয়ারে দর বেড়েছে ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ১১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১২ টাকা।

ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ১১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১২ টাকা।

দর বেড়েছে স্যোসাল ইসলামী ব্যাংকের। এদিন ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি দর ১৩ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৩ টাকা ৮০ পয়সা। এনসিসি ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ১ দশমিক ১৮ শতাংশ। মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে দশমিক ৪৬ শতাংশ।

পতন হওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যেন সবচেয়ে বেশি দরপতন হয়েছে প্রাইম ব্যাংকের ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

ইস্টার্ন ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। প্রিমিয়ার ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ।

এ ছাড়া সিটি ব্যাংক, শাহজালাল ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে বৃহস্পতিবার।

বাড়েনি বিমার আগ্রহ

গত দেড় মাস ধরে টানা বাড়তে থাকা তালিকাভুক্ত বিমা খাতের প্রতি এখন অনেকটাই বিমুখ বিনিয়োগকারীরা। তালিকায় থাকা ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দুটি-তিনটি কোম্পানি দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসলে ঢালাওভাবে আর বাড়ছে না বিমার শেয়ার দর।

বৃহস্পতিবার দর বৃদ্ধি পাওয়া শীর্ষ কোম্পানির তালিকায় ছিল প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স, যার শেয়ার প্রতি দর ১৬৭ টাকা ১০ পয়সা থেকে ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৮৩ দশমকি ৮০ পয়সা।

তৃতীয় অবস্থানে ছিল এশিয়া ইন্সুরেন্স, যার শেয়ার দর বেড়েছে ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ। পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ।

দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় থাকলেও বৃহস্পতিবার বিমা খাতের সবচেয়ে বেশি দর পতন হওয়ার কোম্পানির তালিকাতেও ছিল এ খাতের কোম্পানি।

এদিন মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, যার শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৮ দশমিক ০৩ শতাংশ। ইর্স্টান ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। সিটি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

হঠাৎ বেড়ে মন্থর বস্ত্র খাত

ঈদের ছুটিতে যাওয়ার আগে হঠাৎ দুদিন বাড়তে থাকে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানির শেয়ার দর। তালিকাভুক্ত ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারের উত্থান ছিল তখন, যা ঈদের ছুটির পর প্রথম কার্যদিবসেও অব্যাহত ছিল।

কিন্ত চলতি সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসের মধ্যে চার দিনই কমল এ খাতের শেয়ার দর। বৃহস্পতিবার এখাতের ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে দর কমেছে ৪৫টি। দর বেড়েছে ছয়টির।

দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির মধ্যে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে মতিন স্পিনিংয়ের ৭০ পয়সা। এ ছাড়া দর বেড়েছে এইচআর টেক্সটাইল, হাওয়েল টেক্সটাইল, রহিম টেক্সটাইল, আলহাজ্ব টেক্সটাইল ও স্কয়ার টেক্সটাইল।

বলা হয়েছিল বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর অর্থবছর শেষ হচ্ছে জুনে। সিংহভাগ কোম্পানি তাদের তৃতীয় প্রান্তিক প্রকাশ করেছে। আগামী তিন চার মাসের ব্যবধানে কোম্পানিগুলো তাদের শেয়ারধারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করবে।

এমন অবস্থায় এ খাতের শেয়ারের দর বৃদ্ধি ছিল স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু হঠাৎ দর বৃদ্ধি পেয়ে আবার কমে আসায় বিপাকে পড়েছেন সে সময় এ খাতের বিনিয়োগকারীরা।

কী বলছেন বিশ্লেষকরা

ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ব্যাংক খাতের যে উত্থান ছিল সেটি হওয়া উচিত ছিল এবং যে পরিমাণ বেড়েছে তাতে ব্যাংকের শেয়ারের দর অতিমূল্যায়িত হয়েছে সেটি বলা যাবে না।

তবে দীর্ঘ সময় ধরে বাড়লে সেখান থেকে মুনাফা উত্তলনের প্রবণতা দেখা যায়। এছাড়া বিমা খাতের যেভাবে শেয়ারের দর বেড়েছে তাতে এ খাতের মূল্য সংশোধন জরুরি। যদিও এখন ঢালাওভাবে না বাড়লেও একটি দুটি কোম্পানির শেয়ার দর দিনের সর্বোচ্চ বাড়ছে।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য সবচেয়ে ভালো যে দিকটি দেখা যাচ্ছে, এখন ঢালাওভাবে সব কোম্পানির শেয়ারের পতন হচ্ছে না। একটি খাতের বা বেশি কিছু কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে। যা সরাসরি সূচককে প্রভাবিত করছে না। একই সঙ্গে হাজার কোটি টাকা লেনদেন পুঁজিবাজারের জন্য ভালো দিক।

সূচক ও লেনদেন

বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ৬০ দশমিক ০৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮১৩ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৯ দশমিক ৫৯ পয়েন্টে কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৭২ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ২২ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৭৮ পয়েন্টে।

মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৯৯ কোটি টাকা।

লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৮টির। কমেছে ২৩৪টির। দর পাল্টায়নি ৫৭টির।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় ২১৪ দশমিক ৮০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৮৩৭ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ৯৯ কোটি টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর