বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সংকটে কাহিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাদুকাশিল্প

  •    
  • ২০ মে, ২০২১ ০৮:৪০

স্বয়ংক্রিয় কারখানায় উৎপাদিত জুতার কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি করা হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আমদানির খরচ পড়ছে বেশি। আবার করোনা পরিস্থিতিতে জুতার বাজার গেছে কমে। ঈদের বাজারেও ছিল না খুব বেশি চাহিদা।

অর্ধশতাব্দী ধরে বিকশিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাদুকা (জুতা) শিল্প এখন সংকটের মুখোমুখি। বাজার সংকোচনের পাশাপাশি করোনার ছোবলে এই শিল্প রীতিমতো বেহাল। ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন অনেকে, শ্রমিকরা হয়ে পড়েছেন কর্মহীন। ব্যবসায়ে মন্দাভাব ও নানা রকম সংকটে অল্প সময়ের মধ্যে হারিয়ে গেছে শতাধিক কারখানা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৬৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাদুকা ব্যবসা শুরু হয়। ধীরে ধীরে ব্যবসা বাড়লেও ১৯৮৪ সালের পর জেলায় ব্যাপকভাবে পাদুকাশিল্পের প্রসার ঘটে। লাভজনক হওয়ায় বাড়তে থাকে নতুন নতুন কারখানা। একপর্যায়ে জিপসি সু, লালা সু, রক্সি সু, উডল্যান্ড, সোহাগ সু, রানা সু, আরমান সু, শাপলা সু, শামীম সু, দিনা সুসহ ছোট-বড় তিন শ জুতা কারখানা বাজারে সুনাম কুড়াতে সক্ষম হয়।

গত কয়েক বছরে জুতা কারখানাগুলো দফায় দফায় লোকসানের মুখোমুখি। কখনো উপাদানের বাড়তি দর, কখনো বাজার সংকটের প্রভাবে ব্যবসায়ীরা নাজেহাল হতে থাকেন। সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে জুতার ব্যবসায়ে। দেশের ভেতরে চাহিদা কমেছে, বাইরেও ব্যবসা বন্ধ। এমনকি কারখানার কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি দামে। সেসব মাল বুঝে পেতেও সময় লাগছে। ক্রমাগত লোকসানের পরও জেলায় চালু আছে শতাধিক জুতা কারখানা।

চালু কারখানাগুলোর মধ্যে ১৬টিতে স্বয়ংক্রিয় মেশিনে উৎপাদন হয়। বাকিগুলোতে জুতা বানানো হয় সনাতন পদ্ধতিতে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার পশ্চিম মেড্ডা পীর বাড়ি বাজার, সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের বটতলী বাজার, ভাটপাড়া, রাজঘর, সুহিলপুর ইউনিয়নের সুহিলপুর ও তালশহর পূর্ব ইউনিয়নের অষ্টগ্রামে রয়েছে বেশির ভাগ জুতা কারখানা।

কারখানাগুলোতে চামড়া, রাবার, ও রেক্সিন দিয়ে জুতা তৈরি করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারি ও খুচরা জুতা বিক্রেতারা এসব কারখানা থেকে জুতা নেন ব্যবসার জন্য। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয় এখানে উৎপাদিত জুতা।

পাদুকা ব্যবসায়ীরা জানান, স্বয়ংক্রিয় কারখানায় উৎপাদিত জুতার কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি করা হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আমদানির খরচ পড়ছে বেশি। আবার করোনা পরিস্থিতিতে জুতার বাজার গেছে কমে। ঈদের বাজারেও ছিল না খুব বেশি চাহিদা।

পৌর এলাকার সোহাগ সুজের মালিক সোহাগ মিয়া বলেন, ‘ব্যবসা করছি ৭-৮ বছর, আমাদের ব্যবসা ভালোই চলছিল। আমার কারখানায় কাজ করেন ২০-২৫ জন কারিগর। করোনার প্রভাবে পণ্য পাঠাতে পারছি না, আবার অন্য জেলা থেকে অর্ডারও পাচ্ছি না।’

শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কারিগরদের ঠিক সময়ে বেতন দিতে না পারলে তারা অন্য জায়গায় চলে যাবে। তাই বাধ্য হয়ে ঋণ করে কারখানা চালু রাখতে হচ্ছে। জানি না, এভাবে আর কত দিন কারখানা চালু রাখতে পারব।’

দেশ সুজের মালিক জয়নাল মিয়া বলেন, ‘পরিবহন সংকটে মালামাল ডেলিভারি দিতে পারছি না। অনেক অর্ডার বাতিল হয়ে গেছে।’

আরেক ব্যবসায়ী কামাল মিয়া বলেন, ‘জুতার কাঁচামাল চীন থেকে আসে। করোনার কারণে উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় জুতায় লাভ এখন খুব কম হয়। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে। অনেক কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।’

জুতার কারিগর রাশেদ মিয়া বলেন, ‘আগে ঈদের সময় মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার কাজ করতাম। এই বছর সাত হাজার টাকার কাজও করতে পারি নাই।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাদুকা শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহসিন মিয়া বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একসময় জুতা কারখানাগুলোতে প্রায় আট হাজার কারিগর কাজ করতেন। করোনার প্রভাবে গত এক বছরে শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সুযোগসুবিধা পাই নাই।’

সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ, বিসিক শিল্পনগরীতে প্লট বরাদ্দসহ স্থানীয়ভাবে ট্যানারি স্থাপন করা হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাদুকাশিল্পের প্রসার সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।

সমিতির সভাপতি মো. শফিউদ্দিন বলেন, ‘এক বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের ব্যবসার অবস্থা খারাপ। ঈদের সময় ব্যবসা নেই। লাভ তো হচ্ছে না, লোকসানে নাকাল সবাই।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা-খাঁন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে আমরা পাদুকাশ্রমিকদের খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। আর ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া আছে। উদ্যোক্তারা আবেদন করলেই সহায়তা পাবেন।’

এ বিভাগের আরো খবর