বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্যাংক ও ডাকঘরে মিলবে না ‘বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র’

  •    
  • ১৯ মে, ২০২১ ২০:০৩

এখন থেকে কোনো বিনিয়োগকারী যদি পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র কিনতে চান, তাহলে শুধু সঞ্চয় অধিদপ্তরের শাখা অফিসগুলোতে যেতে হবে। বর্তমানে সারা দেশে ৭০টির বেশি এমন সঞ্চয় ব্যুরো আছে। বাকি তিন ধরনের সঞ্চয়পত্র আগের মতোই ব্যাংক ও ডাকঘরে পাওয়া যাবে।

সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্র বিক্রির লাগাম টানতে ‘বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র’ বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে সরকার।

এখন থেকে কোনো ব্যাংকের শাখা বা ডাকঘর থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি ‘বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র’ কেনা যাবে না। শুধু জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতাধীন সঞ্চয় ব্যুরো থেকে এই সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে।

মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপন জারির দিন থেকেই নতুন এই আদেশ কার্যকর হয়েছে।

তবে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের বাকি তিন ধরনের সঞ্চয়পত্র - পরিবার সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র আগের মতোই ব্যাংক ও ডাকঘর থেকে কেনা যাবে।

সঞ্চয়পত্রের অতিরিক্ত বিক্রি ঠেকাতে সরকার এই আদেশ জারি করেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এর ফলে সরকারকে গ্রাহকদের প্রচুর সুদ দিতে হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে সরকারের ভবিষ্যৎ ঋণের বোঝা।’

এই ‘বোঝা’ কমাতে ব্যাংক ও ডাকঘরে ‘বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র’ বন্ধ করা হয়ে থাকতে পারে বলে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, ‘ব্যাংক ও ডাকঘরে সঞ্চয়পত্র পাওয়া গেলে সহজেই যে কেউ এটি কিনতে পারে। কিন্তু এখন “বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র” শুধু সঞ্চয় ব্যুরো থেকে কেনা যাবে। সে কারণে এর বিক্রি অনেক কমে যাবে। এ জন্যই সরকার এই কাজটি করেছে বলে মনে হয়।’

তবে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার অনেক বেশি হওয়ায় এটি কমানো ছাড়া বিক্রি কমানো যাবে না বলে মনে করেন জায়েদ বখত। পরিবার ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র ছাড়া অন্য সব সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো উচিৎ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এই আদেশের পর এখন থেকে কোনো বিনিয়োগকারী যদি পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র কিনতে চান, তাহলে শুধু সঞ্চয় অধিদপ্তরের শাখা অফিসগুলোতে যেতে হবে। বর্তমানে সারা দেশে ৭০টির বেশি এমন সঞ্চয় ব্যুরো আছে।

১৯৭৭ সালে এই সঞ্চয়পত্র প্রবর্তন করে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর।

একজন বিনিয়োগকারী একক নামে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা এবং যুগ্ম নামে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকার পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। সব শ্রেণি ও পেশার বাংলাদেশি নাগরিক এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।

নাবালকের পক্ষেও এই সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। অন্যদিকে কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এই সঞ্চয়পত্র কেনে, তাহলে কত টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে, এর কোনো সীমা নেই। প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃত ভবিষ্যৎ তহবিলের অনুকূলেও এই সঞ্চয়পত্র কেনা যায়।

এ ছাড়া মৎস্য খামার, হাস-মুরগির খামার, পোলট্রি ফিড উৎপাদন, বীজ উৎপাদন, স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত বীজ বিপণন, গবাদিপশুর খামার, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের খামার, ব্যাঙ উৎপাদন খামার, উদ্যান খামার প্রকল্প, রেশম গুটিপোকা পালনের খামার, ছত্রাক উৎপাদন এবং ফল ও লতা পাতার চাষ থেকে উপার্জিত আয় দিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা যায়।

পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে মুনাফা নিতে চাইলে মুনাফার হার দাঁড়ায় ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তবে মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়ন করলে প্রথম বছর শেষে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর শেষে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, তৃতীয় বছর শেষে ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ, চতুর্থ বছর শেষে ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মুনাফা পাওয়া যায়।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েই চলেছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সবমিলিয়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের পুরো সময়ের চেয়েও ১২ শতাংশ বেশি।

এই আট মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৩১১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে তিন গুণের বেশি।

২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৬৬৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

সঞ্চয় অধিদপ্তর ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মোট লক্ষ্য ধরেছে ৮৬ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সুদ-আসল বাবদ শোধ করতে হবে ৬৬ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়াবে ২০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা।

অর্থাৎ বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার এই ২০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেবে।

হিসাব-নিকাশ করে দেখা যাচ্ছে, বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে যে টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরেছিল, তার ৪৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি ঋণ আট মাসেই নিয়ে ফেলেছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল সরকার। বিক্রি কমায় বছরের মাঝামাঝিতে এসে সেই লক্ষ্য কমিয়ে ১১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর