তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে লেনদেন হওয়া সব ব্যাংকের দাম একই সঙ্গে বাড়ার বিস্ময়কর ঘটনা দেখল পুঁজিবাজার। ব্যাংকে উত্থানের দিন লেনদেনও গেল নতুন উচ্চতায়।
২ হাজার ৯৯ কোটি টাকার লেনদেন, টানা ৯ কার্যদিবস বাড়ার পর এক দিনের দর সংশোধন শেষে সূচকও বাড়ল ৪৩ পয়েন্ট।
গত ১৭ জানুয়ারি ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা লেনদেন হওয়ার পর এই প্রথম দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়াল শেয়ারের হাতবদল।
মহামারিকালে আকর্ষণীয় লভ্যাংশ ঘোষণা এবং চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে গত বছরের চেয়ে বেশি মুনাফা করা ব্যাংক খাতের শেয়ারে উত্থান শুরু হয় ঈদের আগে থেকে। ঈদ শেষেও চালু আছে এই প্রবণতা।
সাত কার্যদিবসে দিনের সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হওয়া এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ারদর আরও বেড়েছে। আগের দিনের চেয়ে ২ টাকা ১০ পয়সা বেড়ে এখন দাম দাঁড়িয়েছে ২৮ টাকা ১০ পয়সা। এ নিয়ে ১২ কার্যদিবসে ব্যাংকটির শেয়ারদর ১১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে এই পর্যায়ে পৌঁছল।
যেকোনা কোম্পানির দর বৃদ্ধির যে প্রান্তসীমা আছে, এদিন সেই সীমা ছুঁয়েছে সাউথ ইস্ট ও এনসিসি ব্যাংক।
পুঁজিবাজারে একদিনে সবগুলো ব্যাংকের দর বৃদ্ধির প্রবণতা গত ১০ বছরেও দেখা যায়নি
ঢাকা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ারদরও দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে পরে কিছুটা কমেছে।
দিন শেষে ঢাকা ব্যাংকের ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ, ওয়ান ব্যাংকের ৭ দশমিক ৪০ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংকের ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের দর বেড়েছে ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ।
লভ্যাংশ ঘোষণা-সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট থাকার কারণে এ বি ব্যাংকের লেনদেন বন্ধ ছিল।
ব্যাংকের শেয়ারের উত্থান হলে পুঁজিবাজারে উত্থান হবে এমন মন্তব্য বাজার বিশ্লেষকদের।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘এত দিন যে বিষয়টি নিয়ে বলেছি এখন সেটি সত্য হচ্ছে। দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির তালিকায় যখন ভালো কোম্পানিগুলো উঠে আসবে তখন হাজার কোটি টাকা লেনদেনও গতিশীল পুঁজিবাজারের ইঙ্গিত বহন করবে।’
আর্থিক খাতও চাঙা
ব্যাংকের মতোই একই প্রবণতা দেখা গেছে আর্থিক খাতেও। ২৩টি কোম্পানির মধ্যে একটির লেনদেন বন্ধ আছে। বাকি ২২টির মধ্যে দাম কমেছে কেবল একটির। অপরিবর্তিত ছিল দুটির। বাকি সবগুলোর দামই বেড়েছে।
প্রাইম লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে দিনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। ন্যাশনাল হাউজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সের শেয়ারপ্রতি দরও বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
ব্যাংকের দিনে আর্থিক খাতে কেবল ১০ পয়সা দর কমেছে একটি কোম্পানির শেয়ারের
টাকার অঙ্কে এ খাতের শেয়ারের সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে বে লিজিংয়ের। এদিন প্রতিটি শেয়ারের দর বেড়েছে ২ টাকা করে। লংকাবাংলা ফিন্যান্সের শেয়ারপ্রতি দরও একই হারে বেড়েছে। আগের দিনের তুলনায় লংকাবাংলার শেয়ারের দর বেড়েছে ২ টাকা।
বিডি ফিন্যান্সের শেয়ারপ্রতি দর আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে ১ টাকা ৩০ পয়সা। আইপিডিসির শেয়ারপ্রতি দর আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে ১ টাকা।
বিমায় মিশ্র প্রবণতা
সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত হয়ে ওঠা বিমা খাতের ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২৫টির। কমেছে ১৯টির। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের। টাকায় বেড়েছে ১৫ টাকা আর শতকরা হিসেবে প্রায় ১০ শতাংশ। আর দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।
আবার সবচেয়ে বেশি দর হারানোর তালিকাতেও এই খাতের প্রাধান্য দেখা গেছে।
সবচেয়ে বেশি দর হারানা কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স দিনে দর হারানোর প্রান্তসীমা ছুঁয়েছে। এই কোম্পানিটি দর হারিয়েছে ৯.৪৭ শতাংশ।
এ ছাড়া ক্রিস্টাল, এশিয়ান, ঢাকা, অগ্রণী, সোনারবাংলা ও প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স ছিল সবচেয়ে বেশি দর হারানো ১০টি কোম্পানির তালিকায়।
অন্যান্য সব খাতে পতন
বাকি বড় খাতগুলার প্রকৌশল খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে চারটির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২৮টি। মিউচ্যুয়াল ফান্ডে ১১টির দাম বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৫টির, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩১টি কোম্পানির মধ্যে দুটির দাম বৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ২৩টি, বস্ত্র খাতে ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে ৬টির দাম বৃদ্ধির বিপরীতে হারিয়েছে ৪৩টি
সূচক ও লেনদেন
এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮৭৩ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ২৭ শতাংশ।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক বেড়েছে ৬ দশমিক ২০ শতাংশ।
৯ দিন উত্থান শেষে ১ দিন দর সংশোধনের পর আবার সূচক বেড়েছে পুঁজিবাজারে
লেনদেন হয়েছে মোট ২ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। এক দিনের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৩৮০ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৫৮ দশমিক ২৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৫২ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১২৭ কোটি টাকা।