পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকিং খাতের নতুন কোম্পানি এনআরবিসির উত্থান থামার নাম নেই। টানা আট কার্যদিবস দিনের দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে আসার পর বিক্রেতা উধাও হয়েছে এই ব্যাংকের। এবার যোগ হয়েছে আরেক ব্যাংক প্রাইম।
দুই মে থেকে ১১ কার্যদিবসে ব্যাংকটির দাম বেড়েছে ১০ টাকার বেশি। এর মধ্যে টানা দুই দিন সব বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমাও ছুঁয়েছে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় দিন সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে আসার পর কিছুটা কমেছে।
তার পরেও দুই দিনে ব্যাংকটির শেয়ার মূল্যে যোগ হয়েছে ৫ টাকা ১০ পয়সা।
লকডাউনে ব্যাংকের মুনাফা ও লভ্যাংশ কমে যাওয়ার গুঞ্জনের মধ্যে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের শেয়ার মূল্যের তুলনায় ব্যাপক হারে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিগুলো। আবার চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে আগের চেয়ে বেশি হারে মুনাফা করতে থাকার তথ্য আসে।
এরপর থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। আর এই খাতে দীর্ঘ ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যে হতাশা আছে, তা কাটবে কি না, এ নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়েছে।
৩১টি ব্যাংকের মধ্যে হাতে গোনা এক দুইটি ছাড়া দাম বেড়েছে প্রায় সব কটিই। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মার্চে তালিকাভুক্ত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক বা এনআরবিসি এবং প্রাইম ব্যাংকের।
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর-রশীদ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলো ভালো করছে। বেশির ভাগই ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে। এটি এ খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ আগ্রহ বাড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মূলত যেসব ব্যাংকের খারাপ ঋণ কম, আর্থিক অবস্থা ভালো সেসব ব্যাংকের শেয়ারদরই এখন বেশি বাড়ছে।’
প্রাইম ব্যাংকে উত্থান
২০২০ সালে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটি বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী হিসেবেই বিবেচিত হয়ে আসছে শুরু থেকেই। গত গত সাত-আট বছর ধরে ব্যাংকটি সংকটে যাচ্ছিল এবং এ কারণে শেয়ারও দাম হারায়।
তবে ২০১৫ সালের পর থেকে ব্যাংকটি নগদ লভ্যাংশে মন দেয় এবং শেয়ার দরের তুলনায় এই লভ্যাংশ প্রতি বছরই হয়েছে আকর্ষণীয়।
গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য প্রাইম ব্যাংক তার শেয়ারধারীদের ১৫ শতাংশ অর্থাৎ শেয়ার প্রতি দেড় টাকা নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
তবে দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে এছাড়া গত ১২ মে প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি থেকে মার্চ) মুনাফার হিসাব। যদিও দাম ২০ শতাংশের কিছু বেশি বেড়েছিল আগেই।
এই তিন মাসে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৩৪ পয়সা। বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৬ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এই প্রান্তিকে প্রায় তিন গুণ মুনাফা করেছে ব্যাংকটি।
গত ২ মে থেকে যখন দাম বাড়া শুরু হয় সেদিন ব্যাংকটির শেয়ারমূল্য ছিল ১৫ টাকা ৫০ পয়সা। ১২ মে প্রান্তিক প্রকাশের দিন তা বেড়ে হয় ১৯ টাকা ৭০ পয়সা।
এর পর থেকে তিন কার্যদিবসেই বাড়ল ৭ টাকা ৯০ পয়সা। প্রথম দিন বাড়ে এক টাকা ৮০ পয়সা, দ্বিতীয় দিন বাড়ে দুই টাকা ১০ পয়সা, আর তৃতীয় দিনে বাড়ে আরও দুই টাকা।
তিন কার্যদিবসে দাম বাড়ে ৪০ শতাংশ আর ১০ কার্যদিবসে বেড়েছে ৭১ শতাংশ।
বর্তমানে ব্যাংকটির শেয়ার দর ২৫ টাকা ৬০ পয়সা। এটি গত পাঁচ বছরের সর্বোচ্চ দাম।
তবে ব্যাংকটির মূল্য আয় অনুপাত এখনও বেশ আকর্ষণীয়। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের হিসাবে এই অনুপাত বা পি রেশিও ৪.৭৮, যা পুঁজিবাজারে সবচেয়ে কম পি রেশিওর একটি।
এর অর্থ ব্যাংকটি যে হারে আয় করছে, আর এখন যে দাম সে টাকা উঠতে বিনিয়োগকারীদের সময় লাগবে ৪.৭৮ বছর। পুঁজিবাজারে ১০ থেকে ১৫ পি রেশিওকেই আকর্ষণীয় হিসেবে ধরা হয়।
থামেছে না এনআরবিসির দর
গত মার্চে লেনদেন শুরু করা এই ব্যাংকের শেয়ার আইপিওধারীদের হতাশ করেছে। গত দুই বছরে মিউচ্যুয়াল ফান্ড ছাড়া যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে তার প্রায় প্রতিটি প্রথ দিন ৫০ শতাংশ ও দ্বিতীয় দিনও সম পরিমাণ বা তার কাছাকাছি বেড়েছে।
কিন্তু এনআরবিসি প্রথম তিন ৩২ শতাংশ বাড়ার পরের কয়েকদিন টানা কমতে থাকে। এক পর্যায়ে ১০ টাকায় তালিকাভুক্ত ব্যাংকটির শেয়ার পর ১১ টাকায় নেমে আসে।
তবে ২৭ এপ্রিল থেকে এই ব্যাংকটির দাম একটু একটু করে বাড়তে থাকে। ১১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৪০ পয়সা হতে সময় লাগে পাঁচ কার্যদিবস। এরপর দেয় লাফ। টানা সাত কার্যদিবসে ১০ শতাংশ বা আশেপাশে দাম বৃদ্ধির পর বিক্রেতা শূন্য হয়ে মঙ্গলবার দাম দাঁড়িয়েছে ২৫ টাকা ৯০ পয়সা।
সাত কার্যদিবসে দাম বেড়েছে ১১ টাকা ৫০ পয়সা বা ৯৩ শতাংশ, আর ১২ কার্যদিবসে বেড়েছে ১৪ টাকা ৩০ শতাংশ বা ১২৩ শতাংশ।
এই পরিমাণ দাম বাড়ার পরেও এই ব্যাংকের পি রেশিও এখন ১০.৯৩, যা বিনিয়োগের জন্য বেশ আকর্ষণীয় হিসেবেই বিবেচনা করা যায়।
ব্যাংকটি তার শেয়ারধারীদের ২০২০ সালের জন্য সাড়ে সাত শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এ সময়ে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ৩৭ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ৯৮ পয়সা।
ব্যাংকটির প্রথম প্রান্তিক প্রকাশে আগামী ২০ মে বোর্ড সভার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।