টানা নয় কার্যদিবস উত্থানের পর পুঁজিবাজারে সামান্য দরপতন হলো। তবে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনায় ব্যাপক আগ্রহের কারণে লেনদেন আরও বেড়েছে।
সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক কমে ১০ পয়েন্ট। গত ৩ মের পর এই প্রথম সূচক কমল।
তবে সূচক কমলেও লেনদেন আগের দিনের চেয়ে আরও বেড়ে পৌনে দুইশ কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই হয়ে গেছে।
ঈদের ছুটি শেষে পুঁজিবাজারে গত ১০ বছরেও এত বেশি লেনদেন হয়নি বলে জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কমিশনার শেখ সামছুদ্দিন আহমেদ।
ঈদের ছুটি শেষে রোববার বাজারে লেনদেন হয় এক হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। পরদিন তা আরও বেড়ে হয় এক হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা।
আর তার পরদিন লেনদেন হলো এক হাজার ৭১৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
এটি গত চার মাসে সর্বোচ্চ লেনদেন। গত ১৭ জানুয়ারি লেনদেন হয়েছিল দুই হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা।
তবে সে সময়ের তুলনায় লকডাউন পরিস্থিতিতে এখন লেনদেন কম হচ্ছে এক ঘণ্টা।
গত বছরের জুলাই থেকে পুঁজিবাজারে যে টানা উত্থান দেখা যায়, সেটি চালু থাকে জানুয়ারির শুরু পর্যন্ত। ডিসেম্বরের শেষে ও জানুয়ারির শুরুতে পুঁজিবাজারে টানা ১০ দিন গড়ে দুই হাজার কোটি টাকার আশেপাশে লেনদেন হয়।
তবে ১৪ জানুয়ারি থেকে আড়াই মাসেরও বেশি সময়ে বাজার সংশোধনে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ৮২১ পয়েন্ট সূচক পতনে লেনদেনও নেমে আসে তলানিতে। এক পর্যায়ে একদিন তা ৩০০ কোটি টাকার নিচেও নেমে আসে।
তবে ৫ এপ্রিল থেকে পুঁজিবাজারে আবার দেখা দেয় সুবাতাস। এরপর ২৯ কার্যদিবসে সূচক বাড়ে ৭৪১ পয়েন্ট। সূচক বাড়ার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের বাধাগুলা দূর করার উদ্যোগ নিতে থাকে বিএসইসি।
এসব চেষ্টায় দীর্ঘদিন পর গত ২০ এপ্রিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন এক হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়। এরপর সব মিলিয়ে আরও চার দিন এক হাজার কোটি টাকার নিচে থাকে লেনদেন।
তবে রোজায় দেখা দেয় এক ব্যতিক্রম প্রবণতা। ঈদের আগে আগে সাধারণত বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নেন। তবে এবার দেখা দেয় উল্টো প্রবণতা। বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনায় মন দেন। গত ২৯ এপ্রিলের পর ১২ কার্যদিবসে লেনদেন একবারও এক হাজার কোটি টাকার নিচে নামেনি।
উত্থান ধরে রেখেছে বিমা খাত
মঙ্গলবার ডিএসইর লেনদেনে শেয়ার দরের উত্থান ধরে রেখেছে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানিগুলো। এদিন লেনদেন বিমা খাতের ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৩৫টির। কমেছে ১২টির; দর পাল্টায়নি তিনটির।
পুঁজিবাজার ঈদের ছুটিতে যাওয়ার আগের তিন কার্যদিবস ধারাবাহিকভাবে কমেছিল এ খাতের শেয়ার দর। দর পতনের এই ধারা অব্যাহত ছিল রোববার পর্যন্ত। কিন্ত ঈদের ছুটির পর দ্বিতীয় লেনদেন থেকে আবার সক্রিয় হয়ে উঠে এ খাতের শেয়ার দর। যা গত দুই কার্যদিবস ধরে অব্যাহত আছে।
মঙ্গলবার দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া দশ কোম্পানির মধ্যে পাঁচটিই ছিল বিমা খাতের।
সবচেয়ে বেশি ১০ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের। শেয়ার দর ৪৮ টাকা থেকে হয়েছে ৫২ টাকা ৮০ পয়সা।
এরপর আছে সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, যার শেয়ার দর ৪০ টাকা ১০ পয়সা থেকে ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪৪ টাকা ১০ পয়সা।
মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সে শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর ৪৭ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫১ টাকা ৭০ পয়সা।
জনতা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৮ দশমিক ৫২ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ৩৯ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৩ টাকা ৩০ পয়সা।
ফনিক্স ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দরও বেড়েছে ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। এ তালিকায় আছে সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, কর্ণফুলি ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স।
টেকেনি বস্ত্র খাতের উত্থান
পুঁজিবাজার ঈদের ছুটিতে যাওয়ার আগে হঠাৎ করে উত্থানে আসে তালিকাভুক্ত বস্ত্রখাতের কোম্পানিগুলো। এ খাতের প্রায় সবগুলো কোম্পানির অর্থবছর শেষ হচ্ছে জুনে। ফলে আগামী তিন মাসের ব্যবধানে কোম্পানিগুলোর চূড়ান্ত মুনাফার বিপরীতে লভ্যাংশ ঘোষণার প্রস্তাব আসবে।
এমন আলোচনায় এ খাতের উত্থান হলেও ঈদের ছুটির পর এক কার্যদিবস শেয়ার দর বাড়লেও এখন আবার কমছে।
মঙ্গলবার এ খাতের ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ২০টির, কমেছে ৩২টির; দর পাল্টায়নি চারটির।
সোমবার লেনদেন শেষে এ ধারাতেই পতন হয়েছিল বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর।
এদিন অনালিমা ইয়ার্ডের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৯০ পয়সা বা ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। দেশ গার্মেন্টসের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ১ টাকা ২০ পয়সা বা দশমিক ৯৪ শতাংশ।
শাশা ডেনিমের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৪০ পয়সা বা ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
স্টাইল ক্রাফটের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ১ টাকা ১০ পয়সা বা দশমিক ৭৪ শতাংশ।
ঢালাও কমেছে নন ব্যাংক ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের
ব্যাংক প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নতুন মাত্রা দিয়েছে পুঁজিবাজারে। এ খাতের সিংহভাগ কোম্পানির এরই মধ্যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অন্যান্য খাতের তুলনায় ছিল অনেক ভালো।
পাশাপাশি নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর ক্ষেত্রেও একইভাবে উত্থান ছিল পুঁজিবাজারে। তবে ঈদের ছুটির পর একদিন ব্যাংক খাতের উত্থান দেখা গেলেও পর পর দুদিন পতনের মুখে এ খাত।
মঙ্গলবার ব্যাংকখাতে তালিকাভুক্ত ৩১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ছয়টির, কমেছে ২৪টির; দর পাল্টায়নি একটির।
একই ভাবে মিউচ্যুাল ফান্ড খাতের ৩৭টির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র একটি ফান্ডের, কমেছে ২৮টির; দর পাল্টায়নি আটটির।
আর নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ২৩টির মধ্যে একটির দর পাল্টায়নি, একটি লেনদেন হয়নি; বাকি ২১টির দর কমেছে।
ফলে দর পতন হওয়ার শীর্ষ কোম্পানিগুলোর তালিকার শীর্ষে ছিল নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানির শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স লিমিটেডের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ।
ফার ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৫ দশমিক ০৮ শতাংশ। ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৫ শতাংশ।
সূচক ও লেনদেন
মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮২৯ পয়েন্টে।
শরিয়াহ ভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৮১ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৪ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৯৪ পয়েন্টে।
এদিন মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা।
একদিনের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১৮৫ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২৮ দশমিক ৪২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৮৯৪ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মোট ৬০ কোটি টাকা।