চলতি অর্থবছরের ১০ মাস পার হলেও উন্নয়ন বাজেট বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্ধেকও কাজ হয়নি। তবু আসছে বছরের বাজেটে উন্নয়ন খাতে আরও বেশি ব্যয়ের স্বপ্ন দেখছে সরকার।
মহামারিকালে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য সরকার ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার এডিপি নিচ্ছে, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি। আর নতুন এডিপির প্রায় অর্ধেক বা ৪৮ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে পরিবহন-যোগাযোগ এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে। বেশি বরাদ্দ পেয়েছে স্বাস্থ্য খাতও।
নতুন এডিপির খসড়াও এরই মধ্যে চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এডিপি চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে বলে জানিয়েছে কমিশন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে।
এডিপির আকারের পাশাপাশি বিভিন্ন খাত ও উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আগামী এক বছরের বরাদ্দও দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী চাইলে শেষ মুহূর্তে কোনো খাতে বরাদ্দ কম বা বেশি করতে পারেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
আগামী এডিপিতে কোন খাত কত পাচ্ছে
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে আগামী এডিপিতেত ১৫টি খাতভিত্তিক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দের পাঁচ খাত হচ্ছে পরিবহন-যোগাযোগ, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, গৃহায়ণ ও কমিউনিটি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাত। পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ ৬১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে, যা মোট বরাদ্দের ২৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর পরেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৪৫ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৩ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা বা ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ বরাদ্দ থাকছে। এ ছাড়া শিক্ষায় ২৩ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা বা ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য খাতে ১৭ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা, মোট বরাদ্দের ৭ দশমিক ৭১ শতাংশ রাখা হচ্ছে।
অন্য খাতের মধ্যে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৪ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা, পরিবেশ জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদে ৮ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা, কৃষিতে ৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা, শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক সেবায় ৪ হাজার ৬৩৭৩ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা, গণ আদেশ ও নিরাপত্তায় ৩ হাজার ২০৫ কোটি টাকা, সাধারণ সরকারি সেবায় ৩ হাজার ১৩ কোটি টাকা, ধর্ম, সংস্কৃতি ও বিনোদনে প্রায় ২ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা, সামাজিক সুরক্ষায় ১ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষায় ৯৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর বাইরে বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা। এ অর্থ ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা জেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন সহায়তা খাতে ব্যয় হবে।
নতুন এডিপি নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও বর্তমান পরামর্শক ড. জাহিদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, এডিপি আকার বড় বিষয় নয়, বাস্তবায়ন কতটুকু হচ্ছে তা বড় বিষয়। আগামী এডিপিতে বেশি বেশি প্রকল্প না নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিশেষ নজর দিতে হবে স্বাস্থ্য খাতে। কারণ কারোনার এ সময়ে তাদের সবচেয়ে বেশি কাজ করার কথা। কিন্তু তারা এডিপির অর্থ খরচ করতে পারছে না। স্বাস্থ্য খাতের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে এ খাত এক বছরে কী কী করবে তার একটা পরিকল্পনা থাকা উচিত।
চলতি বছরের এডিপির হাল
চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি ছিল ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। পরে ৭ হাজার ৫০২ কোটি টাকা কমিয়ে এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা করা হয়। এর সঙ্গে বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার অর্থায়ন মিলে আকার দাঁড়ায় ২ লাখ ৯ হাজার ২৭২ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) হিসাব বলছে, গত ১০ মাসে অর্ধেক অর্থও খরচ হয়নি। এপ্রিল পর্যন্ত এডিপির বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। খরচ হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৬৬ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে পাওয়া ৩৩ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিলের ২ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
সে হিসেবে এখনও উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দের ১ লাখ ৬ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা অব্যয়িত রয়েছে। সংশোধিত এডিপি শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হলে মে ও জুন এই দুই মাসের মধ্যে খরচ করতে হবে অব্যয়িত অর্থ।
নতুন এডিপিতে স্বাস্থ্য খাত
করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে এডিপি বরাদ্দ ১৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতে মোট বরাদ্দ হতে পারে ১৭ হাজার ৩০২ কোটি টাকা। আর মোট এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ হবে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। প্রস্তাবিত এডিপিতে খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দের দিক দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের অবস্থান পঞ্চম।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ১৩ হাজার ৮৬৫ কোটি বা ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে এপ্রিল পর্যন্ত স্বাস্থ্য খাতের এডিপি বাস্তবায়ন কাঙ্ক্ষিত নয়। ১০ মাসে এ খাতে বাস্তবায়ন হার মাত্র ২৮ শতাংশ। মোট ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।