ব্যাংক খাতে চাঙাভাব অব্যাহত আছে। টানা তিন কার্যদিবস দর সংশোধনের পর ভালো দিন গেল বিমা খাতেও। তবে বস্ত্র খাত দেখল দর সংশোধন।
এর পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে উত্থান ঘটা আর্থিক খাতে দেখা গেছে মিশ্র অবস্থা। আর মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত কয়েক দিন পর আবার সচল হওয়ার ইঙ্গিত দিল। বেড়েছে বেশির ভাগের দর।
ব্যাংক, বিমায় এই উত্থানের কারণে বেশির ভাগ শেয়ারের দর পতনের দিনও সূচকে যোগ হলো প্রায় ২৭ পয়েন্ট। এ নিয়ে টানা ৯ কার্যদিবস বাড়ল সূচক।
পুঁজিবাজারে চাঙাভাব দেখা দেয় মূলত রোজা শুরুর আগে আগে গত ১১ এপ্রিল থেকে। সেদিন সূচক ছিল ৫ হাজার ১৬৪ পয়েন্ট।
সেদিন থেকে ২৪ কার্যদিবসের মধ্যে সূচক কমেছে কেবল তিন দিন। আর বেড়েছে বাকি ২১ দিন।
আজ পর্যন্ত টানা ৯ দিনের আগে গত ১১ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ কার্যদিবস এভাবে টানা সূচক বেড়েছিল।
সোমবার পুঁজিবাজারে লেনদেনের চিত্র
গত এক দশকেও ঈদের আগে-পরে পুঁজিবাজারে এত চাঙাভাব দেখা দেয়নি। রোববার যে লেনদেন হয়েছে, সেটি গত এক দশকে ঈদের পর সর্বোচ্চ লেনদেন ছিল। সেদিন হাতবদল হয় ১ হাজার ৪১৮ কোটি টাকার কিছু বেশি।
সোমবার লেনদেন আরও বেড়েছে। এবার তা ছাড়িয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা। হাতবদল হয়েছে ১ হাজার ৫৩৪ কোটি ৩২ লাখ ৭২ হাজার টাকা।
ব্যাংকিং খাতের ৩১টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২৭টির। কমেছে দুটির, আর অপরিবর্তিত ছিল দুটির দাম।
বিমা খাতে ৫০টি কোম্পানির মধ্যে লেনদেন হয়নি একটির। কমেছে সাতটির দাম, ছয়টির দাম ছিল অপরিবর্তিত আর বাকি ৩৬টিরই দাম বেড়েছে।
সম্প্রতি চাঙা হয়ে ওঠা বস্ত্র খাতে অবশ্য পতন হয়েছে ঢালাও। এই খাতের ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ৫১টি। দাম বেড়েছে তিনটির আর অপবিরর্তিত ছিল দুটির দর।
উত্থানের শীর্ষে ব্যাংক
এই খাতের দুটি কোম্পানরি দাম বাড়ল এক দিনে যত বাড়া সম্ভব ততই।
টানা সপ্তম দিন দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে বিক্রেতা শূন্য হয় নতুন তালিকাভুক্ত এনআরবিসি ব্যাংক। শেয়ার দর ২১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২৩ টাকা ৬০ পয়সা।
এ নিয়ে ১২ কার্যদিবসে শেয়ার দাম দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ল।
গিত ২৭ এপ্রিল দাম ছিল ১১ টাকা ৬০ পয়সা। ১২ কার্যদিবসে বাড়ল ১২ টাকা।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৫টি ব্যাংকের লেনদেনের চিত্র
দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়েছে প্রাইম ব্যাংকেরও। ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়ে দাঁম দাঁড়িয়েছে ২৩ টাকা ৬০ পয়সা।
এ ছাড়া আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ৫ দশমিক ১২ শতাংশ। যমুনা ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংকের শেয়ার দর বাড়ছে মানে পুঁজিবাজার ফান্ডমেন্টালের দিকে যাচ্ছে।’
গত কয়েক কার্যদিবসে যেভাবে ব্যাংকের শেয়ারের দর বেড়েছে তাতে এ খাতে জমে থাকা লোকসান অনেকটাই বিনিয়োগকারীদের কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তিনি।
২০১০ সালের মহাধসের পর থেকে ব্যাংকিং খাত বলতে গেলে ঘুমিয়েই ছিল। গত বছর করোনা হানা দেয়ার পর শেয়ার দর একেবারে তলানিতে নেমে আসে। তবে গত ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর আয়ে চমক দেখা দেয়। আর লভ্যাংশও করোনার বছরে বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো।
এখন পর্যন্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করা ২৭টি ব্যাংকের মধ্যে একটি কেবল শেয়ারধারীদেরকে কিছু না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাকি সবগুলোই বেশ ভালো ল্যভাংশ দিয়েছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৬টি ব্যাংকের লেনদেনের চিত্র
তিনটি ব্যাংক কেবল ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে, বাকি ২৩টি লভ্যাংশ দিয়েছে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ। আর এই ব্যাংকগুলো এবার নগদে লভ্যাংশ দিতে যাচ্ছে দুই হাজার ৩৫৩ কোটি টাকারও বেশি।
এরই মধ্যে ২০টি ব্যাংক প্রথম প্রান্তিক ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে করোনার দ্বিতীয় বছরে আয় বেড়েছে ১৫টির। প্রাইম ব্যাংকের আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় তিন গুণ হয়েছে, দ্বিগুণ হয়েছে এবি ব্যাংকের আয়, দেড় গুণ বেড়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের।
বিমা ঘুরে দাঁড়াল
পুঁজিবাজারে ঈদের ছুটিতে যাওয়ার আগ থেকে ঈদের পর প্রথম কার্যদিবসে দর পতনের খাতায় নাম ছিল তালিকাভুক্ত বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর।
সোমবার আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় এ খাত। এদিন পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির মধ্যে শীর্ষে ছিল এশিয়া ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২৫টি বিমা কোম্পানির লেনদেনের চিত্র
তারপর ছিল প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স, যার শেয়ার দর বেড়েছে ৭ দশমিক ০১ শতাংশ। শেয়ার দর ৫৪ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৮ টাকা।
সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৭৯ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৫ টাকা ৪০ পয়সা।
মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৬৪ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৮ টাকা ৪০ পয়সা।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২৫টি বিমা কোম্পানির লেনদেনের চিত্র
স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। পদ্মা লাইফের শেয়ারের দর বেড়েছে ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
টেকেনি বস্ত্র খাতের উত্থান
ঈদের আগে হঠাৎ চাঙ্গা হওয়া বস্ত্র খাত ধরে রাখতে পারেনি উত্থান। ফলে দর পতন হওয়া শীর্ষ তালিকায় ছিল বস্ত্র খাতের অবস্থান।
ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডাইং কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ১১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১০ টাকা ৯০ পয়সা।
আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ৯ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৮ টাকা ৬০ পয়সা।
জাহিন টেক্সটাইলের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৬ দশমিক ০৬ শতাংশ। মীর আক্তার হোসেন স্পিনিং মিলসের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ড্রাগন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিং মিলসের শেয়ার প্রতি দর ১৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ কমে হয়েছে ১২ টাকা ৪০ পয়সা।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৬ দশমিক ৯২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮৪০ পয়েন্টে।
শরিয়াহ ভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ২ দশমিক ৩০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৮৫ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৬ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৯৯ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪২টির। কমেছে ১৭৫টির। আর দর পাল্টায়নি ৪৮টির।
লেনদেন হয়েছে মোট ১ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। ফলে একদিনের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১১৬ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৭৩ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৯২২ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা।