বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রক্রিয়াজাত মাংস খাতের বিপুল সম্ভাবনা

  •    
  • ১৩ মে, ২০২১ ১৭:৩৮

খাতসংশ্লিষ্টদের দাবি, বাজারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যত্রতত্র পশু জবাই হয় বলে অনেকেই প্রক্রিয়াজাত মাংসের দিকে ঝুঁকছেন। দাম কিছুটা বেশি হলেও এ ধরনের মাংসে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নেই বলেও তাদের দাবি।

মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি ও শহর জীবনে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের কারণে বাড়ছে প্রক্রিয়াজাত মাংসের চাহিদা।

গত এক দশকে প্রক্রিয়াজাত মাংসের বাজারে বেড়েছে দেশীয় কোম্পানির আধিপত্য। তবে এসব প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং জনসচেতনতার অভাবসহ বেশ কিছু কারণে খাতটির আশানুরূপ অগ্রগতি হচ্ছে না।

প্রক্রিয়াজাত মাংস থেকে তৈরি স্যাম, বেকন, সালামি, কাবাব, নাগেট, সসেজ, চপ, বার্গার, হটডগ, পেটিস, মমো, শরমা, গ্রিলের মতো ফাস্টফুড এখন ব্যাপক জনপ্রিয়। এছাড়া কাঁচা মাংসের জন্যও অনেকে নির্ভর করছেন প্রক্রিয়াজাত মাংসের প্রতিষ্ঠানের ওপর।

দেশে প্রক্রিয়াজাত মাংস ও এর থেকে তৈরি খাদ্যপণ্য বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করছে বেঙ্গলমিট, আফতাব বহুমুখী ফার্মস, কাজীফার্মস, প্রভিটা, প্যারাগন, প্রাণ, ইয়ন, ব্র্যাক। এছাড়া এজি, নারিশ, সিপির মতো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মাংস থেকে প্রক্রিয়াজাত খাবার বিভিন্ন আউটলেটে বিক্রি করছে।

প্রক্রিয়াজাত মাংসের উৎপাদকেরা জানান, সাধারণ ক্রেতার পাশাপাশি অভিজাত হোটেলেও মাংসের জোগান দিচ্ছেন তারা। পাশাপাশি দুবাই, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও হচ্ছে।

তারা জানান, পশু জবাইয়ের পর ভালোভাবে রক্ত ঝরিয়ে সব বর্জ্য সরিয়ে নেয়া হয়। এরপর ঠান্ডা ও গরম পানিতে পশুটি ধুয়ে স্বয়ংক্রিয় মেশিনের মাধ্যমে চামড়া এবং অতিরিক্ত মেদ আলাদা করা হয়। মাংস এরপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয় হিমঘরে। পরে সেখান থেকে বের করে মাংস টুকরা ও প্যাকেটজাত করা হয়। এই কাজে দক্ষ শ্রমিক নিয়োজিত। সবশেষে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় রেখে বিক্রি করা হয় প্রক্রিয়াজত মাংস।

খাতসংশ্লিষ্টদের দাবি, বাজারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যত্রতত্র পশু জবাই হয় বলে অনেকেই প্রক্রিয়াজাত মাংসের দিকে ঝুঁকছেন। দাম কিছুটা বেশি হলেও এ ধরনের মাংসে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নেই বলেও তাদের দাবি।

তবে এই খাতের সংশ্লিষ্টরা একইসঙ্গে জানিয়েছেন, দেশে প্রক্রিয়াজাত মাংস বা এর থেকে তৈরি ফাস্টফুড খাওয়ার প্রবণতা বাড়লেও মোট জনসংখ্যার বিচারে ভোক্তার সংখ্যা দেড় শতাংশের বেশি নয়। দেশে প্রক্রিয়াজাত মাংসের বাজার সম্প্রসারণের বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও বিভিন্ন কারণে সেটি ঘটছে না।

এক্ষেত্রে বিক্রেতাপর্যায়ে পশু জবাই আইন যথাযথভাবে কার্যকর না হওয়া এবং বিদেশ থেকে প্রক্রিয়াজাতের নামে ‘মানহীন মাংস’ আমদানিকে প্রধান সমস্যা হিসেবে দায়ী করছেন তারা।

প্রক্রিয়াজাত মাংস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে প্রতিদিন দেড় কোটির বেশি মুরগি জবাই হয়। একইভাবে গুরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া জবাই হয় গড়ে ৭০ হাজার করে। তবে ক্রেতাপর্যায়ে মাংস সরবরাহের ক্ষেত্রে এসব মাংসের ৯৮ ভাগের বেশি প্রক্রিয়াজাত করা হয় না।

২০১১ সালে প্রণীত পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ আইনে পশু জবাই ও সরবরাহের ক্ষেত্রে কঠোর মান অনুসরণের বিষয়টি যুক্ত হয়।

আইনের ৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্র ব্যতীত, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বিক্রির জন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা জবাইখানার বাহিরে কোনো পশু জবাই করিতে পারিবে না, যথা:-

(ক) ঈদুল আজহা, ঈদুল ফিতর বা অন্য কোন ধর্মীয়, সামাজিক অনুষ্ঠান এবং সরকার কর্তৃক সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা ঘোষিত অন্য কোন উৎসব বা অনুষ্ঠান;

(খ) পারিবারিক চাহিদার ভিত্তিতে পারিবারিক ভোজনের উদ্দেশ্যে।

(২) উপ-ধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, উক্ত উপ-ধারার দফা (ক) বা (খ) এ বর্ণিত ক্ষেত্রে জবাইখানার বাহিরে এইরূপ স্থানে ও উপায়ে পশু জবাই করিতে হইবে যাহাতে-

(ক) পানি বা পানির উৎস, বায়ু বা পরিবেশের অন্য কোনো উপাদান দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না; এবং

(খ) বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি অনুযায়ী পশু জবাই ও বর্জ্য অপসারণ করা যায়।

তবে এ আইনের তেমন কোনো প্রয়োগ নেই বলে অভিযোগ করছেন প্রক্রিয়াজাত মাংসের প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা।

দেশে প্রক্রিয়াজাত মাংসের সরবরাহকারী অন্যতম প্রতিষ্ঠান আফতাব বহুমুখী ফার্মসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশে প্রক্রিয়াজাত মাংস ও এর থেকে তৈরি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের বাজার খুব বড় নয়। জনসংখ্যার বিচারে সেটি দেড় শতাংশের বেশি হবে না।

‘যতক্ষণ না দেশে যত্রতত্র উন্মুক্ত পরিবেশে জীবন্ত পশু জবাই এবং মাংস বিক্রি বন্ধ না হবে, ততদিন দেশে প্রক্রিয়াজাত মাংসের বাজারের আশানুরূপ সম্প্রসারণ হবে না। পশু জবাই আইন সঠিকভাবে কার্যকর না হওয়ার কারণেই দেশে প্রক্রিয়াজাত মাংসের বাজার সম্ভাবনা ধরা দিচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘বহুগুণে নিরাপদ হলেও সচেতনতার অভাবে ৯৮ ভাগ মানুষের পছন্দের তালিকায় নেই প্রক্রিয়াজাত মুরগি। অথচ খোলা মার্কেটে সকালে যে মুরগীটা প্রসেস করা হয়েছে বিকেলে সেই পানিতে আবার আরেকটা বার্ডকে প্রসেস করা হচ্ছে। সেখান থেকে বিভিন্ন রকমের রোগ-বালাই মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। উহান থেকে যে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি, তার মূলেও কিন্তু রয়েছে অস্বাস্থ্যকর উপায়ে জীবন্ত পশু জবাই ও নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে বিক্রি না করা।’

প্রক্রিয়াজাত মাংসের বাজার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মাংস প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি হয়। খুব বেশি নিয়ম-কানুনও মেনে চলতে হয়। এতে মাংসের দাম কেজিপ্রতি বেশি পড়ে। ফলে সামর্থ্যবান ছাড়া অন্যরা স্বাস্থ্যসম্মত ও প্রক্রিয়াজাত মাংস কেউ নিতে চায় না।’

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে পশু জবাই আইন বাস্তবায়নের তাগিদ দেন ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার। তিনি বলেন, ‘সরকার সারা দেশে না হোক ঢাকার গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, বারিধারা, ডিওএইচএসসহ অন্তত সামর্থ্যবান এলাকায় পশু জবাই আইন কঠোরভাবে কার্যকর করতে পারে। প্রশাসন থেকে বলে দিতে পারে ওইসব এলাকায় প্রক্রিয়াজাত কারখানা ছাড়া কোনো পশু জবাই হবে না। তাহলে এর ওপর ভর করে খাতটি ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠবে।’

দেশে প্রক্রিয়াজাত মাংসের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে বেঙ্গল মিটের রপ্তানি শাখার প্রধান কর্মকর্তা মো. আলামিন ভূইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রক্রিয়াজাত মাংসের সম্ভাবনা আছে বলেই দেশে এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি উৎপাদন হচ্ছে। প্রায় দুই লাখ বাণিজ্যিক পশু উৎপাদন ও বিপণন খামার গড়ে উঠেছে। দেশে যে পরিমাণ মাংসের চাহিদা রয়েছে তার থেকে বেশি উৎপাদন হচ্ছে।’

তবে যে হারে খামার গড়ে উঠেছে, সে তুলনায় প্রক্রিয়াজাত মাংসের সরবরাহ কম বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আলামিন ভূইয়া বলেন, ‘আবার যেখানে আমরা হালাল প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত প্রক্রিয়াজাত মাংস রপ্তানি করব, সেখানে উল্টো প্রক্রিয়াজাতের নামে হালাল সার্টিফিকেট ছাড়াই মানহীন মাংস আমদানি করা হচ্ছে। যে ওয়্যারহাউজে রাখা হচ্ছে সেখানেও নির্দেষ্ট তাপমাত্রা নেই। অথচ সেই মাংস বিক্রি হয়ে ভোক্তার খাবারের প্লেটে উঠে যাচ্ছে।

‘এটাই হচ্ছে এ খাতের বড় সমস্যা। অথচ ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশেও মাংস বাজারজাতে হালাল সার্টিফিকেট লাগে। যেখানে সেখানে পশু জবাই করা যায় না। যত্রতত্র অনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বিক্রিও করা যায় না।’

আলামিন ভূইয়া বলেন, ‘দেশে সব ধরনের মাংসের উৎপাদন যেমন বহুগুণ বেড়েছে, তেমনি মাংস খাওয়ার পরিমাণও অনেক বেড়েছে। বিশেষভাবে বর্তমান প্রজন্মের পছন্দের তালিকায় মাংসের অবস্থান সবার উপরে। তবে বেশির ভাগ মানুষই প্রক্রিয়াজাত মাংস সম্পর্কে কিছু জানে না বলে যত্রতত্র অস্বাস্থ্যকর মাংস কিনছে।’

বিভিন্ন গবেষণায় প্রক্রিয়াজাত মাংসেও স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বলা হয়েছে। তবে আলামিন ভূইয়ার দাবি, ‘এটি সত্যি নয়।’

তিনি বলেন, ‘প্রক্রিয়াজাত মাংসে অতিরিক্ত চর্বি ফেলে দেয়া হয। প্রসেসড মিট লেস ফ্যাট হওয়ায় তা স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে না। তাছাড়া একজন মানুষ তো প্রতিদিন ফাস্টফুড খায় না, তিন বেলাও খায় না। মাঝেমধ্যে খায়। তাই এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর