বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মহামারির দ্বিতীয় বছরেও ব্যাংকের আয়ে জোয়ার

  •    
  • ১৩ মে, ২০২১ ০৯:৫৯

তালিকাভুক্ত ৩১ ব্যাংকের মধ্যে ২০টি তাদের প্রথম প্রান্তিকের আয় প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ১৫টির আয় গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। একটি ব্যাংকের আয় প্রায় তিন গুণ হয়েছে, একটির হয়েছে দ্বিগুণ। এ ছাড়া দেড় গুণ হয়েছে আরও বেশ কিছু ব্যাংকের শেয়ারদর।

মহামারির প্রথম বছরে আগের বছরের চেয়ে বেশি আয় করে বেশি লভ্যাংশ দেয়া ব্যাংকিং খাত এবারও আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। বছরের প্রথম প্রান্তিকে বেশির ভাগ ব্যাংকই আগের বছরের চেয়ে বেশি আয় করেছে। এতে বিনিয়োগকারীরা এই খাতটি নিয়ে আবার আশাবাদী হয়ে উঠছেন।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে বছর শেষে চূড়ান্ত আয় জানিয়ে লভ্যাংশ ঘোষণার পাশাপাশি বছরের আরও তিনবার তিন মাস করে আয়ের হিসাব বিবরণী প্রকাশ করতে হয়।

ব্যাংকের অর্থবছর শেষ হয় ডিসেম্বরে। ফলে তাদের প্রথম প্রান্তিক জানুয়ারি থেকে মার্চ, দ্বিতীয় প্রান্তিক এপ্রিল থেকে জুন, তৃতীয় প্রান্তিক জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রান্তিক ঘোষণা করতে হয়।

প্রথম প্রান্তিক প্রকাশ করতে কোম্পানিকে ৪৫ দিন সময় দেয়া হয়। তবে করোনার কারণে আরও এক মাস সময় বাড়ানো হয়েছে এবার।

তালিকাভুক্ত ৩১ ব্যাংকের মধ্যে ২০টি তাদের প্রথম প্রান্তিকের আয় প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ১৫টির আয় গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। একটি ব্যাংকের আয় প্রায় তিন গুণ হয়েছে, একটির হয়েছে দ্বিগুণ। এ ছাড়া দেড় গুণ হয়েছে আরও বেশ কিছু ব্যাংকের শেয়ারদর।

মহামারির বছরে ব্যাংকে আয় ও লভ্যাংশ কমে যাবে-এমন আশঙ্কার কারণে পুঁজিবাজারে এই খাতটি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের নেতিবাচক মনোভাব দেখা গেছে গত বছরের শেষ সময় থেকে।

এর মধ্যে ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফার যে খবর গণমাধ্যমে আসে, তাতে দেখা যায়, সিংহভাগ ব্যাংকের আয় অনেক কমে গেছে।

তবে চূড়ান্ত মুনাফার ক্ষেত্রে দেখা যায় উল্টো চিত্র। গত বছরের চেয়ে বেশি আয় করে বিনিয়োগকারীদের বেশি লভ্যাংশ দিয়ে চমকে দিয়েছে কোম্পানিগুলো। এবার লভ্যাংশের ক্ষেত্রে নগদে গুরুত্ব দেয়ায় বাজারে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা যোগ হতে যাচ্ছে।

২০২০ সালের মার্চে দেখা দেয়া করোনা মহামারি শেষ হওয়ার লক্ষণই নেই। তবে গত ডিসেম্বরের মুনাফা দেশে এবার ব্যাংক নিয়ে আতঙ্ক যে কমেছে, সেটি গত কয়েক দিনের শেয়ার লেনদেনের তথ্যই বলছে। দীর্ঘদিন পর আবার ব্যাংকের শেয়ারে আগ্রহী হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। বাড়ছে দাম।

চলতি বছরও এখন পর্যন্ত ব্যাংকের মুনাফার যে চিত্র, তা বিনিয়োগকারীদের আশান্বিত করতেই পারে।

কঠিন পরিস্থিতিতেও ব্যাংকিং খাত কীভাবে ভালো করছে তার কারণ জানিয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ নেই, ঋণ বিতরণ কমে গেছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধে জুন পর্যন্ত ছাড় দেয়া হয়েছে। এর ফলে প্রভিশনিংয়ে ব্যাংকগুলো কিছুটা ছাড় পেয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ব্যাংকের আয়ে।’

ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্টের সাবেক গবেষণাপ্রধান দেবব্রত কুমার সরকার বলেন, ‘ব্যাংকগুলো এখন কম সুদে আমানত পাচ্ছে। ঋণের সুদহারের সঙ্গে আমানতের সুদহারের পার্থক্য অন্তত ৫০ শতাংশ। এ কারণে তাদের মুনাফা বাড়ছে। এ ছাড়া মহামারির কারণে ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ ছাড় দিয়েছে। এটাও আরেক কারণ।

মহামারির বছরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সঞ্চিতি সংরক্ষণে ছাড় দেয়ার কারণে মুনাফা বেশি হচ্ছে। লভ্যাংশও বেশি পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা

ডাচবাংলা ব্যাংকের একজন মহাব্যবস্থাপক (জিএম) নিউজবাংলাকে জানান, অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় ২০২০ সালে ঋণ পরিশোধ না করেও খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ পেয়েছেন ঋণগ্রহীতারা। আর এ কারণে খেলাপি ঋণের বিপরীতে তাদেরকে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী খেলাপি ঋণের মানভেদে নিরাপত্তা সঞ্চিতির হার ৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত। যেহেতু খেলাপি ঘোষণা করা যায়নি, তাই এই সঞ্চিতি সংরক্ষণের দরকার পড়েনি। ফলে ব্যাংকের ব্যালান্স শিট মহামারিকালে আগের বছরের চেয়ে ভালো দেখাচ্ছে।

গত বছরের মার্চ মাসে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কেউ কিস্তি না দিলেও খেলাপি করা যাবে না। পরে তিন দফায় এই নির্দেশনার কার্যকারিতা বাড়িয়ে আগামী জুন পর্যন্ত করা হয়।

ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধি পুঁজিবাজারের জন্য ভালো খবর হিসেবে মনে করেন দেবব্রত কুমার। তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারের মূল্য আয় অনুপাত ১৫-এর বেশি। কিন্তু ব্যাংক খাতে এটি ১০-এর চেয়ে অনেক কম। তারা যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তার পর এবার যে হারে আয় করছে, সেটি কেবল ব্যাংকিং খাত নয়, পুরো বাজারের জন্যই ভালো হবে। কারণ, ব্যাংকই পুঁজিবাজারের প্রাণ। বিনিয়োগকারীরা এই খাতে আকৃষ্ট হলে সেটি বাজারে আরও গতি আনবে।’

আয় বেড়েছে যেসব ব্যাংকের

প্রাইম ব্যাংকের আয় প্রায় তিন গুণ বেড়েছে বছরের প্রথম প্রান্তিকে। আগের বছর যেখানে আয় ছিল ৪৬ পয়সা, সেখানে এবার আয় বেড়ে হয়েছে ১ টাকা ৩৪ পয়সা।

চলতি বছর প্রথম প্রান্তিকে মুনাফায় সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রাইম ব্যাংকের

এই আয় ২০২০ সালে ব্যাংকটির পুরো বছরের আয়ের প্রায় কাছাকাছি। ওই বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১ টাকা ৫৯ পয়সা।

টাকার অঙ্কে মুনাফা খুব বেশি না বাড়লেও শতকরা হিসেবে দ্বিগুণ হয়েছে চাপে থাকা এবি ব্যাংকের। বছরের প্রথম তিন মাসে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১৬ পয়সা, আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৮ পয়সা। শতকরা হিসেবে ইপিএস বেড়েছে ১০০ শতাংশ।

গত বছর মুনাফা কমে যাওয়া ব্র্যাক ব্যাংক চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে আগের বছরের তুলনায় প্রায় দেড় গুণ আয় করেছে। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৯৩ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৬৬ পয়সা।

বছরের প্রথম প্রান্তিকে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দেড়গুণ আয় করেছে ব্র্যাক ব্যাংক

সাউথ ইস্ট ব্যাংকেরও প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় বেড়েছে। এই সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ২২ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৯৬ পয়সা। ব্যাংকটির ইপিএস বেড়েছে ২৬ পয়সা।

ইস্টার্ন ব্যাংক জানুয়ারি থেকে মার্চ সময় পর্যন্ত প্রথম প্রান্তিকে আয় করেছে ১ টাকা ২৮ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ০৩ পয়সা। ব্যাংকটির ইপিএস বেড়েছে ২৫ পয়সা।

সিটি ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় প্রথম প্রান্তিকে বেড়েছে ২৩ পয়সা। জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ে ব্যাংকটির ইপিএস প্রকাশ করা হয়েছে ৯৮ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৭৫ পয়সা।

বছরের প্রথম প্রান্তিকে যমুনা ব্যাংকের আয় হয়েছে ১ টাকা ৬০ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল ১ টাকা ৪২ পয়সা। ব্যাংকটির ইপিএস বেড়েছে ১৮ পয়সা।

প্রথম প্রান্তিকে পূবালী ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৯৮ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৮৬ পয়সা। ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় বেড়েছে ১২ পয়সা।

২০২০ সালে আগের বছরের চেয়ে আয় কমে যাওয়া মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকও চলতি বছর শুভ সূচনা করেছে। বছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৮১ টাকা। গত বছর যা ছিল ৭২ পয়সা। অর্থাৎ আয় বেড়েছে ৯ পয়সা।

গত পাঁচ বছরে নগদে সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ দেয়া যমুনা ব্যাংকও চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে শুভ সূচনা করেছে

প্রথম প্রান্তিকে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের আগের বছরের তুলনায় শেয়ারপ্রতি আয় বেড়েছে ৯ পয়সা। জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৬৪ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে ছিল দশমিক ৫৫ পয়সা।

এই সময়ে ওয়ান ব্যাংকের ইপিএস হয়েছে ৮৪ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল ৭৯ পয়সা। অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি আয় বেড়েছে সাড়ে ৫ পয়সা।

প্রিমিয়ার ব্যাংকেরও শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৬০ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৫৫ পয়সা। এ সময়ে ব্যাংকটির ইপিএস বেড়েছে ৫ পয়সা।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৬৫ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৬১ পয়সা। এই ব্যাংকটিরও বেড়েছে ৪ পয়সা।

প্রথম প্রান্তিকে আইএফআইসি ব্যাংক আয় করেছে ৪৬ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৪ পয়সা।

২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর আকর্ষণীয় মুনাফা করে বেশ ভালো লভ্যাংশ দিয়ে আসছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক

ইসলামী ব্যাংক চলতি বছর প্রথম প্রান্তিকে আয় করেছে ৪৫ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৪৩ পয়সা।

যাদের আয় কমেছে

২০২০ সালে শেয়ারপ্রতি প্রায় ৩ টাকা আয় কমে চমকে দেয়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বছরের প্রথম প্রান্তিকে আয় অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। গত বছর এই সময়ে যেখানে ৬৬ পয়সা আয় করলেও এবার তা কমে ৩২ পয়সা হয়েছে।

একই পরিস্থিতি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের। জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১৭ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৩৬ পয়সা।

ব্যাংক এশিয়া চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি এক টাকার বেশি আয় করলেও সেটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে কম

উত্তরা ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৮৪ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ১ টাকা ৩৪ পয়সা। অর্থাৎ আয় কমেছে ৫০ পয়সা।

এনসিসি ব্যাংক চলতি বছর প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় করেছে ৫৫ পয়সা। গত বছর একই সময়ে ছিল ৮২ পয়সা।

ব্যাংক এশিয়ার প্রথম প্রান্তিকে ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৫ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ১৬ পয়সা। ব্যাংকটির ইপিএস কমেছে ১১ পয়সা।

এ বিভাগের আরো খবর