ঈদের তিন দিনের ছুটিতে যাওয়ার আগের কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে বস্ত্র ও ব্যাংক খাতে চাঙাভাব দেখা গেল।
বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৪৭টির। অন্তত ছয়টির দাম বেড়েছে এক দিনে যত বাড়া সম্ভব ততই।
অন্যদিকে ব্যাংক খাতে লেনদেন হওয়া ৩০টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৭টির। এর মধ্যে দুটির দর বেড়েছে এক দিনে যত বাড়া সম্ভব ততই।
গত ৫ এপ্রিল লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই বিমা খাতে ব্যাপক উত্থান দেখা দেয়। তবে গত সপ্তাহ থেকে ঘুমন্ত ব্যাংক ও বস্ত্র খাতে চাঙাভাব দেখা দেয়।
ঈদের ছুটিতে যাওয়ার আগের দিন বুধবার ২০১টি কোম্পানির দাম বৃদ্ধিতে পুঁজিবাজারে সূচক বাড়ে ২৬ পয়েন্ট।
আবার হলট্রেড এরআরবিসি, এবার যোগ রূপালী
গত চার দিনের ধারাবাহিকতায় আবার দাম বৃদ্ধির প্রান্তসীমা ছুঁয়েছে এনআরবিসি ব্যাংক। আগের দিনের তুলনায় ১ টাকা ৭০ পয়সা বেড়ে দাম হয়েছে ১৯ টাকা ৬০ পয়সা। এ নিয়ে পাঁচ দিনে ব্যাংকটির দাম বাড়ল ৫৮ শতাংশ বা ৭ টাকা ২০ পয়সা। ২ মে কোম্পানিটির দাম ছিল ১২ টাকা ৪০ পয়সা।
টানা দুই দিন দামের প্রান্তসীমা ছুঁয়েছে রূপালী ব্যাংকও। আগের দিনের মতো আজও এক পর্যায়ে সর্বোচ্চ দামেও ব্যাংকটির বিক্রেতা ছিল না। ২ টাকা ৬০ পয়সা বেড়ে এখন দাম দাঁড়িয়েছে ২৯ টাকা ৩০ পয়সা। আগের দিনও ব্যাংকটির শেয়ার মূল্য ২ টাকা ৪০ পয়সা বেড়েছিল। অর্থাৎ দুই দিনেই দাম বেড়েছে ৫ টাকা।
শেয়ার প্রতি আয় প্রায় তিন টাকা আর লভ্যাংশ হিসেবে ৫ শতাংশ করে নগদ ও বোনাস শেয়ার ঘোষণার পর ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ৬০ পয়সা। একই পরিমাণ দাম বেড়েছে এমটিবির দাম।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের দাম বেড়েছে ৭০ পয়সা। ট্রাস্ট ব্যাংকের বেড়েছে ৫০ পয়সা। বাকিগুলোর দাম বৃদ্ধির হার ১০ থেকে ৩০ পয়সা।
ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে কমেছে সিটি ব্যাংকের ৫০ পয়সা কমেছে। দর হারানো বাকি তিনটির দাম কমেছে ১০ থেকে ২০ শতাংশ।
ওয়ান ব্যাংকের ৪০ পয়সা কমলেও লভ্যাংশের সঙ্গে সমন্বয়ের হিসাব করলে দাম আসলে বেড়েছে। চলতি বছর ব্যাংকটি শেয়ার প্রতি ৬০ পয়সা ও সাড়ে ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছে।
আগের দিন কোম্পানিটির দাম ছিল ১১ টাকা ১০ পয়সা। লভ্যাংশ সমন্বয় করলে দাম দাঁড়ায় ১০ টাকা ৫০ পয়সা। তবে এখন দাম আছে ১০ টাকা ৭০ পয়সা। ২০ টাকা মুনাফার সঙ্গে ৬০ পয়সা নগদ লভ্যাংশের পুরোটাই লাভ হিসেবে পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
তালিকাভুক্ত নয়টি ব্যাংকের দর আগের দিনের মতোই ছিল। আর একটির লেনদেন বন্ধ ছিল।
সবচেয়ে চাঙ্গা বস্ত্রখাত
শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি দাম বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির মধ্যে এদিন প্রাধান্য দেখা গেছে বস্ত্র খাতের।
সবচেয়ে বেশি ১০ শতাংশ বা এক টাকা ২০ পয়সা দর বেড়েছে এই খাতের কাট্টালি টেক্সটাইলের। এমএল ডাইংয়ের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৩ টাকা বা ৯.৯৩ শতাংশ। সোনারগাঁও টেক্সটাইলের দাম বেড়েছে ৯.৫৫ শতাংশ। এগুলোর কোনোটির বিক্রেতা ছিল না।
এ ছাড়া ভিএসএফ থ্রেড, আমান কটন, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, নূরানী ডায়িং, ফ্যামিলি টেক্সটাইলস, পেসিফিক ডেনিমের দামও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
এই খাতে দর হারানো দেশ গার্মেন্টস ৬০ পয়সা আর এইচ আর টেক্সটাইলের দাম কমেছে ৪০ পয়সা।
বিমায় আবার পতন
টানা তিন কার্যদিবস বড় পতনের পর মঙ্গলবার ঘূরে দাঁড়ালেও ঈদের আগে শেষ কার্যদিবসে আবার পতন হলো বিমা খাতের।
এই খাতের ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ২৮টি। বিপরীতে দর বেড়েছে ১৮টির। বাকিগুলোর দাম অপরিবর্তিত ছিল।
এর মধ্যেও বিএনআইসিএলের ৭ টাকা ৩০ পয়সা, পাইওনিয়ারের ৫ টাকা ৯০ পয়সা, ক্রিস্টালের ৫ টাকা ২০ পয়সা, কন্টিনেন্টালের দাম বেড়েছে তিন টাকা ৩০ পয়সা।
সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স; ৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ ছাড়া প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের ৩ দশমিক ২০ শতাংশ, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের দর কমেছে ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৬ দশমিক ১২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৫০ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৩ দশমিক ২৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৭৫ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৭ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৮৬ পয়েন্টে।
লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২০১টির। কমেছে ১১০টির। দর পাল্টায়নি ৬৪টির।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৯১ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৬৫৮ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মোট ১০৮ কোটি টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৮৬টির। কমেছে ৬৩টির। দর পাল্টায়নি ৪৪টির।