পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি মানেই যেন পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটে চলা। প্রথম দুই দিন ৫০ শতাংশ করে বেড়ে ১০ টাকার শেয়ার ২২ টাকা ৫০ পয়সা হতে সময় লাগে মাত্র দুই কার্যদিবস। এরপর কোনো শেয়ার ৪০ টাকা, কোনোটা ৫০ টাকা, কোনোটা ৭০ টাকা পার করেছে এক মাসের মধ্যে।
গত এক বছর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শেয়ারের প্রায় সবগুলোর ক্ষেত্রেই এই চিত্র দেখা গেছে। যেগুলো প্রিমিয়ামসহ বা বুকবিল্ডিংয়ের মাধ্যমে অতিরিক্ত অভিহিত মূল্যে তালিকাভুক্ত হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রেও প্রথম দিন ৫০ শতাংশ বাড়তে দেখা গেছে। একটির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় কার্যদিবসে ৫০ শতাংশের কম বাড়লেও অন্য একটির ক্ষেত্রে টানা আট থেকে ৯ দিন সর্বোচ্চ পরিমাণ দর বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে।
তবে ব্যতিক্রম কেবল এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। ১০ টাকায় তালিকাভুক্তির পর প্রথম দিন ২২ মার্চ ৫০ শতাংশ বেড়ে দাম ১৫ টাকা উঠেছিল বটে, তবে ধরে রাখতে পারেনি শেষ পর্যন্ত। দ্বিতীয় দিন থেকেই দরপতন শুরু। একপর্যায়ে দাম নেমে আসে ১১ টাকায়।
তবে দেড় মাস পর এসে এক সপ্তাহ ধরে এই ব্যাংকের শেয়ারদর বাড়তে বাড়তে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ব্যাংকটি গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। শেয়ারপ্রতি ৭৫ পয়সা নগদ আর ৫ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি ১০০ শেয়ারে ৫টি বোনাস শেয়ার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ব্যাংকটি। এর পর থেকেই বাড়তে শুরু করে দাম।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো লভ্যাংশের দিক দিয়ে এগিয়ে থাকলেও এগুলোর দাম একেবারেই কম। টানা ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে আসা ব্যাংকের দামও আছে এখন অভিহিত মূল্য ১০ টাকার নিচে। সম্পদ মূল্য যত, তার অর্ধেক দরে শেয়ার বিক্রি হয় এসব ব্যাংকের।
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক বা এনআরবিসি তালিকাভুক্তির পরেই আলোচনা ছিল, যেখানে বছরের পর বছর থেকে ১০ থেকে ২২ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে আসা ব্যাংকের শেয়ারদর ১১ থেকে ১৫ টাকার মধ্যে, সেখানে নতুন তালিকাভুক্ত ব্যাংক কতটা আগ্রহী করতে পারবে বিনিয়োগকারীদের।
তবে প্রথম কার্যদিবসে ৩২ শতাংশ বাড়ার পর দ্বিতীয় কার্যদিবসে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ দর হারানোর পর এটা স্পষ্ট হয় যে, নতুন ব্যাংকেও আগ্রহ নেই বিনিয়োগকারীদের।
লেনদেন শুরুর ৯ কার্যদিবসে ব্যাংকটির শেয়ার ১১ টাকায় নেমে আসার পর হতাশ হন শেয়ারধারীরা।
তবে ২ মে থেকে দিন পরিবর্তনের শুরু এনআরবিসির শেয়ারধারীদের। সেদিন শেয়ারদর ছিল ১২ টাকা ৪০ পয়সা। প্রথম দুই কার্যদিবস ২০ পয়সা করে বাড়ার সময় অবশ্য বোঝা যায়নি, কী পরিমাণ লাফ দিতে যাচ্ছে ব্যাংকটির শেয়ারদর।
৪ মে থেকে ব্যাংকটির শেয়ারদর টানা প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে এক দিনে সর্বোচ্চ দাম বৃদ্ধির প্রান্তসীমা ছুঁয়ে যায়। আর বেশির ভাগ দিনেই এই সর্বোচ্চ দামেও বিক্রেতা দেখা যায়নি।
৫ মে ১৩ টাকা ৬০ পয়সা, ৬ মে ১৪ টাকা ৯০ পয়সা, দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি শেষে ৯ মে ১৬ টাকা ৩০ পয়সা, ১১ মে আবার প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে দাম দাঁড়ায় ১৭ টাকা ৯০ পয়সা আর ১২ মে দাম হয় ১৯ টাকা ৬০ পয়সা। অর্থাৎ পাঁচ কার্যদিবসেই দাম বেড়েছে ৫৮ শতাংশ।
প্রায় ৫০ শতাংশ দাম বাড়ার পরেও আয়ের তুলনায় ব্যাংকটির আয় মূল্য অনুপাত আকর্ষণীয় পর্যায়েই আছে। সব শেষ দাম অনুযায়ী এর আয় মূল্য অনুপাত বা পি রেশিও ৭ দশমিক ৫৫। অর্থাৎ বর্তমান হারে আয় করলে বিনিয়োগের টাকা উঠে আসবে এই কয় বছরেই।
পুঁজিবাজারে ১০ পি রেশিওকে আকর্ষণীয় হিসেবে ধরা যায়। তবে বেশ কিছু ব্যাংকের পি রেশিও চারের ঘরে আছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডে এই পি রেশিও আরও কম আছে কোনো কোনোটির।
আর বাজারে শেয়ারমূল্য একমাত্র পি রেশিওর ওপরই নির্ভর করে না। এমন কোম্পানিও আছে যার পি রেশিও ১ হাজারের বেশি। তবু উচ্চমূল্যে লেনদেন হচ্ছে শেয়ার।
আয় কত
গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির মুনাফা হয়েছে শেয়ার প্রতি ২ টাকা ৩৭ পয়সা। মহামারির বছরে আগের বছরের তুলনায় মুনাফা বেড়েছে ৩৯ পয়সা বা ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ।
আগের বছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় ছিল ১ টাকা ৯৮ পয়সা।
তবে শেয়ারসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় আনলে শতকরা হিসেবে গত বছরের চেয়ে মহামারির বছরে আয় আরও বেশি বেড়েছে।
ব্যাংকটি মোট ১২ কোটি শেয়ার বিক্রি করে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব-আইপিওর মাধ্যমে ১২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে।
ব্যাংকের পুঁজির গুণগত মানের আন্তর্জাতিক চর্চা ব্যাসেল-৩-এর শর্ত পরিপালনে, উত্তোলিত টাকার ১১০ কোটিই বিনিয়োগ করা হবে সরকারি সিকিউরিটিজে। আর সাড়ে ৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে শেয়ারবাজারে।
বর্তমানে এনআরবিসির পরিশোধিত মূলধন ৫৮২ কোটি টাকা। নতুন করে উত্তোলিত টাকা যোগ হয়ে তা হয় ৭০২ কোটি টাকা।
সম্প্রতি বিএসইসি সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংককে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে জনসাধারণের মাঝে শেয়ার ছেড়ে ১০০ কোটি টাকা তোলার অনুমোদন দিয়েছে। ইউনিয়ন ব্যাংকও পুঁজিবাজারে আসার জন্য কার্যক্রম শুরু করেছে।