দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল ফিতর। রাজধানীর শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। তবে গত কয়েক দিনের ভিড়ের চাপ কিছুটা কমেছে।
রাজধানীর নিউ মার্কেট, বসুন্ধরা ও মৌচাক এলাকার শপিং মলগুলোতে মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দেখা যায়, ভিড়ের বেশির ভাগ গিয়ে মিলেছে তরুণ ও আর ছোটদের পোশাকের দোকানগুলোতে।
কেউ কেউ কেনাকাটা করতে সোনামনিদের সঙ্গে করেই নিয়ে এসেছেন। পছন্দ হলে একটার জায়গায় তিন-চারটে জামাও কিনছেন।
মিরপুরের বাসিন্দা নায়লা সারোয়ার। ঈদ কেনাকাটায় কোলে করে নিয়ে এসেছেন তার তিন বছরের সন্তান ফারিহাকে। নিউজবাংলাকে নায়লা বললেন, ‘মা-মেয়ে একসঙ্গে কেনাকাটা করতে বেরিয়েছি। তবে আমার জন্য কিছু কিনেনি। ফারিহার জন্য তিনটা জামা কিনেছি।’
ঢাকা কলেজের গেটের বিপরীত দিকে নুরজাহান মার্কেট। সেখানে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার সব ছেলেদের পোশাকের দোকান। গত কয়েক দিনের মতো মঙ্গলবারও দোকানগুলোতে ভিড় দেখা যায়।
প্যান্ট ব্যবসায়ী আজাদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আল্লায় দিলে বিক্রি ভালো হচ্ছে। করোনার ক্ষতি কাটানো যাবে মনে হচ্ছে।’
শাড়ি ও পাঞ্জাবির জন্য প্রসিদ্ধ গাউছিয়া মার্কেট। তবে সেখানে ক্রেতাদের আনাগোনা কম। এবার ঈদে মানুষ শাড়ি কম কিনছে বলে জানালেন শাড়ি সেখানকার দোকানিরা।
তাদের একজন রবিন মিয়া বলেন, ‘সুতি, হাফ সিল্ক ও কমদামি কাপড় একটু চলে। তবে পার্টিতে যাওয়ার শাড়ি, বিয়ের শাড়ি ও দামি শাড়ির বিক্রি কম। মানুষ এবার শাড়ি কম কিনছে। পার্টির শাড়ি কিনে মানুষ গিফট দেয়ার জন্য। করোনায় মানুষের ইনকাম কমে গেছে, তাই গিফট দেয়ার প্রবণতাও কমে গেছে।’
একই অবস্থা দেখা যায় ধানমন্ডি হকারস মার্কেটে। সেখানে বাচ্চাদের কাপড়ের দোকানে ভিড় থাকলেও শাড়ির দোকানে ক্রেতা কম।
ঈদ কেনাকাটায় অনেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন বাচ্চাদেরও। ছবি: নিউজবাংলা
এই মার্কেটের শাড়ি বিক্রেতা মো. বাদল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অন্য বছর এই সময়ে একটুও সময় পাওয়া যায় না। আর এখন দেখেন দোকানে কেউ নাই। বাবা-মায়েরা সন্তানের কাপড় কিনেই চলে যাচ্ছে নিজেরা তেমন কিনছেন না। কিনতে তো টাকা দরকার। করোনায় মানুষের ইনকাম কমে গেছে তাই পরিবারের বড়রা নিজেদের কাপড় না কিনে সন্তানদের কিনে দিচ্ছে। ওই দেখেন বাচ্চাদের দোকানে কী পরিমাণ ভিড়।’
অন্যান্য মার্কেটের মতো বসুন্ধরা সিটি শপিং মলেও একই চিত্র দেখা যায়। বসুন্ধরা শপিং মলের শাড়ির দোকানগুলো অনেকটা ক্রেতা শূন্য।
‘শালিমার’ শাড়ির দোকানের কর্মচারি নুর মোহাম্মদ মুন্সি নিউজবাংলাকে জানালেন, তাঁত, টাঙ্গাইল জামদানি ও বয়স্কদের কাপড়ের চাহিদা থাকলেও ঢাকায়া জামদানি, বিয়ের কাপড়সহ দামি কাপড়ের চাহিদা নাই। টাঙ্গাইলের জামদানির দাম কম তাই এই শাড়ি চলে।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ব্যবসা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত বছর তো দোকান বন্ধ ছিল। এ বছর দোকান খুলেও কোনো লাভ হয় নাই। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর দশ ভাগ ব্যবসা কম। আমি এখনও পরিবারের জন্য কিছু কিনি নাই। কীভাবে কিনব, এখনও কর্মচারিদের বেতনই দিতে পারি নাই।’
বসুন্ধরা ঘুরে দেখা যায় বাচ্চাদের কাপড় ও তরুণদের কাপড়ের দোকানে ভিড়। বাচ্চারা বাবা-মায়ের হাত ধরে এসেছে ঈদের শপিং করতে।
স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে শপিং করতে এসেছেন মো. নাজমুল। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম এ বছর শপিং করব না। বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আসা লাগল। আমাদের জন্য কিছুই কিনি নাই। বাচ্চাদের কাপড় কেনা হলেই চলে যাব।’
মৌচাক এলাকার শপিং মলগুলোতেও একই চিত্র দেখা যায়। তরুণ ও বাচ্চাদের রেডিমেট কাপড়ের দোকানগুলোতে অনেক ভিড়। শাড়ি, জুতার দোকানগুলো অনেকটাই ফাঁকা।
ক্রেতা নেই শাড়ির দোকানগুলোতে। ছবি: নিউজবাংলা
শাওন নামের এক তরুণ ছোটদের কাপড় দেখছিলেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘চার বছরের ভাগনের জন্য প্যান্ট-শার্ট খুঁজছি। কিন্তু দাম বেশি চায়। বাজেটে মেলানো যাচ্ছে না ভাই।’
গত কয়েকদিনের মতো মঙ্গলবারও রাজধানীর প্রতিটা শপিং মলে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি কারোর কোনো তাগিদ দেখা যায়নি।
নিউ মার্কেট এলাকার নিউ সুপার মার্কেটে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। সেখানে স্বাস্থ্যবিধির প্রতি গা নেই কারোর।
স্বাস্থ্যবিধির কথা জিজ্ঞাসা করতেই এই মার্কেটের দোকানি সাত্তার মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কে কার কথা শোনে। দেখেন না দলে দলে মানুষ আসতেছে। কয়জনকে খেয়াল করা যায়। আর আমরা বলি না যে, তা না। বলি, কিন্তু তারা শুনে না।’