এক দিনে দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করার পর দুই ব্যাংকের বিক্রেতা নেই। দুই-একটি ছাড়া সব ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চিত্রও মোটামুটি একই রকম।
টানা বাড়তে থাকা বিমা খাতে পরপর তিন কার্যদিবস বড় ধরনের মূল্য সংশোধনের পর এই খাতেরও বেশির ভাগ শেয়ারের দর বৃদ্ধি, দামের সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করার পর বেশ কিছু শেয়ারের বিক্রেতা উধাও।
ঘুমিয়ে থাকা বস্ত্র খাতে রোববারের উত্থানের পরের কার্যদিবসেও বেশ কিছু শেয়ারের দর বৃদ্ধি পেয়েছে।
যেন ঈদ উপহার পেলেন এই চার খাতের শেয়ারধারীরা। আর প্রধান খাতগুলোতে দর বৃদ্ধির প্রভাবে পুঁজিবাজারে হলো বড় উত্থান।
গত ৫ এপ্রিল লকডাউন শুরুর পর থেকেই বিমা খাতে টানা উত্থান দেখে আসছিল পুঁজিবাজার। একটি খাতে এত বেশি পরিমাণ দর বৃদ্ধি নিয়ে নানা কথাবার্তার মধ্যে গত সপ্তাহ থেকে নড়চড় শুরু হয় ঘুমন্ত ব্যাংক খাতে। দাম বাড়তে থাকে মিউচ্যুয়াল ফান্ড আর আর্থিক খাতেও।
এর মধ্যে রোববার হঠাৎ করে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত প্রায় সব কটি কোম্পানির দর বৃদ্ধির পর এটা স্পষ্ট হয় যে গত জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বাজার সংশোধন শেষ হয়ে উত্থানপর্বে ফিরেছে পুঁজিবাজার।
ঈদের আগে শেষ কার্যদিবসের আগের দিন পুঁজিবাজারে সূচক বাড়ল মোট ৭৮ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট।
পুঁজিবাজারে এই দর সংশোধন শুরু হয় মূলত ১৪ জানুয়ারি মার্জিন ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ১২ শতাংশ বেঁধে দেয়ার পর থেকে।
ওই সিদ্ধান্ত আসার আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মূল্যসূচক ছিল ৫ হাজার ৯০৯ পয়েন্ট। পরে কমতে কমতে তা ৫ হাজার পয়েন্টের আশপাশ দিয়ে ঠেকে।
লকডাউনের আগে আগে বিএসইসি আরেক নির্দেশনায় মার্জিন ঋণ-বিষয়ক সিদ্ধান্ত চলতি বছর আর কার্যকর হবে না বলে জানায়। পাশাপাশি আগের চেয়ে বেশি হারে ঋণ নেয়া যাবে বলে ঘোষণা আসে। এর প্রভাবে বাজারে অর্থপ্রবাহ বাড়ে। আর ৫ এপ্রিল লকডাউন শুরুর পর থেকেই বাজারে উত্থানপর্ব চলতে থাকে।
শুরুতে একটি খাতনির্ভর হলেও পরে সব খাতেই ইতিবাচক প্রভাব বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার নিয়ে আরও আস্থাশীল করে তুলেছে।
হতাশ করেনি ব্যাংক খাত
ঈদের আগে ব্যাংক খাতের শেয়ারধারীদেরও হতাশ করেনি। সরকারি ছুটির একদিন আগে বেড়েছে প্রায় সবকটি ব্যাংকের শেয়ারের দর।
লেনদেন হওয়া ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে দর কমেছে মাত্র দুটির। দর পাল্টায়নি দুটির। আর বাকি ২৭টি ব্যাংকের শেয়ারের দর বেড়েছে।
ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ারের দর বেড়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের ৩ টাকা ৩০ পয়সা। শেয়ার দর ৪৭ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা ৬০ পয়সা।
২ টাকা ৪০ পয়সা শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের। ফ্লোর প্রাইস বা শেয়ার দরের প্রান্ত সীমা উঠিয়ে দেয়া এই ব্যাংকের শেয়ার মঙ্গলবার ২৪ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৬ টাকা ৭০ পয়সা।
এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ১ টাকা ৬০ পয়সা। ১ টাকা ৪০ পয়সা শেয়ার দর বেড়েছে সিটি ব্যাংকের। সদ্য লভ্যাংশ ঘোষণা করা আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ১ টাকা।
দর পাল্টায়নি ব্যাংক এশিয়া ও উত্তরা ব্যাংকের। এ ছাড়া দরপতন হওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে আছে সাউথ ইস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক।
উত্থানে ফিরল বিমা খাত
গত তিন কার্যদিবস ধরে টানা পতনের পর আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিমা খাতের কোম্পানি। ঈদের আগে এমন উত্থানে এ খাতের বিনিয়োগকারীরা আবারও আস্থা ফিরে পেয়েছে।
গত তিন কার্যদিবস বিমা খাতের পতনের ফলে শেয়ারধারীদের মধ্যে ধারণা হয়েছিল এ খাতের মূল্য সংশোধন ঈদের আগে শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
মঙ্গলবার বিমা খাতের ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দর কমেছে মাত্র পাঁচটির, দর অপরিবর্তিত দুটির। বাকি ৪৩টি বিমা খাতের কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে।
এ দিন বিমা খাতের বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১০ টাকা ৬০ পয়সা। শেয়ার দর ১২৭ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩৭ টাকা ৯০ পয়সা। ৯ টাকা শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের।
শেয়ার প্রতি ৭ টাকা দর বেড়েছে ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের। ৩ টাকা ৩০ পয়সা শেয়ার দর বেড়েছে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের। ৪ টাকা ৩০ পয়সা দর বেড়েছে গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের। ৪ টাকা ১০ পয়সা শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের।
২ টাকার বেশি শেয়ার দর বেড়েছে সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের।
দর পতন হওয়া বিমা খাতের কোম্পানির মধ্যে আছে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সে, প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৭৮ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭২৪ দশমিক ৩৬ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ১০ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৭১ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ২৮ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৯৪ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২১৮টির; কমেছে ৭১টির। দর পাল্টায়নি ৭৩টির। লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা।