সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা আরও সহজে উপকারভোগীদের কাছে পৌঁছে দিতে ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। এ ডাটাবেজে ঠাঁই হয়েছে সাড়ে ৮৮ লাখ ভাতাভোগীর।
এর মধ্যে প্রায় ৫০ লাখের বেশি মানুষ বিভিন্ন মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ঘরে বসেই ভাতা পাচ্ছেন। আগামী জুনের মধ্যে সব ভাতা ডিজিটালাইজড হবে বলেও জানিয়েছে অধিদপ্তর।
সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করেছে। এর মাধ্যমে ডিজিটালাইজেশন আসলে তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ৪৯ লাখ বয়স্ক ব্যক্তি, ২০ লাখ ৫০ হাজার বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা, ১৮ লাখ অসচ্ছল প্রতিবন্ধী এবং ১ লাখ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে সমাজসেবা অধিদপ্তর ভাতা দিচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের সব মন্ত্রণালয় এবং দপ্তর ডিজিটাল প্রক্রিয়া গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের সেবার পরিসর আরও বিস্তৃত করতে পারবে। ফলে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে সেবা।’
সমাজসেবা অধিদপ্তর বলছে, তিন বছর আগে ‘ক্যাশ ট্রান্সফার মর্ডানাইজেশন’ নামে একটি প্রকল্প নেয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় ২০২৩ সালের মধ্যেই সাড়ে ৮৮ লাখ সুবিধাভোগীর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা বিতরণ প্রক্রিয়াকে ডিজিটালাইজেশন করার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ের আগেই তা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যেই ভাতা বিতরণ প্রক্রিয়ার পুরোটাই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আসবে।
সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, সাড়ে ৮৮ লাখ সুবিধাভোগীর মধ্যে ৫০ লাখের অ্যাকাউন্ট এরই মধ্যে খোলা হয়েছে, যার মাধ্যমে ভাতা বিতরণ শুরু হয়ে গেছে। প্রকল্পের বাকি কাজ আগামী দেড় মাসের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। ফলে তখন আর ভাতা বিতরণের জন্যে মাসের পর মাস কাজ করতে হবে না।
মূলত দুটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি এবং তিনটি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে এই ভাতা বিতরণ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক এশিয়া, এনআরবিসি ব্যাংক এবং মধুমতি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১২ লাখ ১৩ হাজার সুবিধাভোগীকে ভাতা দেয়া হচ্ছে।
আর বাকি ৭৬ লাখ ৩৭ হাজার জনের মধ্যে ৭৫ ভাগ ভাতা বিতরণ করছে ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’ এবং বাকি ২৫ শতাংশ বিতরণ করছে বিকাশ। ‘নগদ’-এর মাধ্যমে ভাতা পাচ্ছেন ৫৭ লাখ ভুক্তভোগী এবং বিকাশের মাধ্যমে ১৯ লাখ জনের ভাতা বিতরণ করা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছর সরকার এই চারটি কর্মসূচির আওতায় মোট ৫ হাজার ৮৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বিতরণ করছে। কর্মসূচিগুলোর আওতায় বয়স্ক ভাতাভোগী ব্যক্তি এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতাভোগীরা জনপ্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে পাবেন। এই দুটি কর্মসূচিতে সরকারের বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার ৯৪০ কোটি এবং ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা।
অসচ্ছল প্রতিবন্ধীরা জন্য প্রতি মাসে সাড়ে সাত শ টাকা করে পাচ্ছেন। তাদের জন্য মোট বরাদ্দ আছে ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।
আর এক লাখ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য ৯৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা শিক্ষা উপবৃত্তি রয়েছে। শ্রেণিভেদে মাধ্যমিক থেকে স্নাতক পর্যন্ত একেকজন শিক্ষার্থী মাসে ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন। আর এই পুরো অর্থই বিতরণ করা হচ্ছে ডিজিটাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
সরকারি এই ভাতা ক্যাশ আউট করতে উপকারভোগীকে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হবে না। সরকার মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা কোম্পানিগুলোকে ভাতা বিতরণের জন্যে প্রতি হাজারে ৭ টাকা করে দেবে।