ঈদের আর মাত্র দুই-তিন দিন বাকি। রাজধানী ছেড়েছেন অধিকাংশ মানুষ। ক্রেতাও হাতেগোনা। এমন বাজারেও হঠাৎ বেড়েছে সবজির দাম। এর সঙ্গে রসুন-পেঁয়াজ, মুরগি ও তেলের বাজারও চড়া।
সোমবার রাজধানীর তেজকুনি পাড়ার কলমিলতা বাজারে দেখা গেছে, আগের সপ্তাহের চেয়ে টমেটো, শসা, গাজরের দাম বেড়েছে। প্রায় পুরো রোজায় টমেটো ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ৫০ টাকায় উঠেছে। ২৫ থেকে ৩০ টাকার গাজরের দাম বেড়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। রোজার শুরুতে শসার কেজি ৮০ টাকা উঠলেও তিন চার দিন পর তা আবার ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় নেমে যায়। এখন আবার বেড়েছে শসার দাম। ৬০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।
বিক্রেতা মো. মাসুদ বলেন, পাইকারিতে দাম বাড়তাছে। তাই আমারও বেশি দাম বেচতেছি। আড়তদাররা কইতাছে মাল শট (কম), দাম বেশি। দুই দিন ধইরাই বাড়তি দাম। আমরাও বেশি দামে কিনছি, বেচমুও বেশি দামে। খামোখা দাম বাড়াই কাস্টমার হারামু ক্যান।’
অন্য সবজির দামও বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা। এর মধ্যে গত সপ্তাহে বেগুন ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় নামলেও এখন তা বেড়ে আবার ৪০ থেকে ৪৫ টাকা হয়েছে। এছাড়া কাঁচা পেঁপে ৩৫ টাকা, বরবটি ৬৫-৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ও পটল প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কচুর মুখি (ছড়া) ৯০ থেকে ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ও ধুন্দল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ঝিঙ্গা ও কাঁকরোল ৫৫, কচুরলতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তবে বাজার স্থির রয়েছে লেবু কাঁচা মরিচের। বরং রোজার শুরুতে বড় আকারের যে লেবুর হালি ছিল ৮০ টাকা এখন তা ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় নেমেছে। আর ৪০ টাকা হলির লেবু এখন ১৫ টাকা হালিতেও পাওয়া যাচ্ছে। মরিচের কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, এক পোয়া ১৫ টাকা। আগের মতোই আলু বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২২ টাকায়।
বিক্রেতা মাসুদ জানান, গত কয়েকদিনে পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। বেশ কিছুদিন পেঁয়াজ ৪০ টাকয় থাকলেও এখন ৫ টাকা বেড়ে ৪৫ টাকায় বিক্রি করছেন। এমনকি দেশি রসুন কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা এবং বিদেশি রসুন (বড়, আমদানি করা) ১২০ টাকা হয়েছে। আদার কেজি আগের মতোই ১২০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা শাহীন বলেন, ‘সবজির দাম কিছুটা বাড়ছে। বাড়া-কমা দিয়ে কী হইবো, বেচা বিক্রি তো বেশি ভাল না, আগের মতো কাস্টমার নাই। বেশি দিয়া কিইন্যাতো কম দামে দেওন যায় না। আবার রাখলেও ঝামেলা, নষ্ট ওই যাইব, তাই কম লাভেও ছাইড়া দিতাছি।’
মুরগির বাজারে কয়েক দিন ধরেই দামের কিছুটা উঠানামা করছিল। রোজার শুরুতে প্রতিকেজি সোনালি জাতের মুরগি (কক) ৩০০ টাকার ওপরে থাকলেও মাঝামাঝিতে তা ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায় নেমে আসে। তবে নতুন করে আবার দাম বেড়ে ২৬০ টাকায় উঠেছে। ব্রয়লারের দাম গত সপ্তাহে ১৪০ টাকা থাকলেও তা বেড়ে ১৪৫ টাকা হয়েছে। লেয়ার মুরগির কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং দেশি মুরগির কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা।
তবে মুরগির দাম বাড়তি থাকলেও ডিমের দাম রয়েছে বেশ কম। প্রতি হালি লাল লেয়ার ডিম কারওয়ান বাজারে হালি ২৬ থেকে ২৮ টাকা। ডজন ৮০ টাকা। হাসের ডিমের ডজন ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, হালি ৪০ টাকা। সোনালি মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকায়। তবে দেশি মুরগির ডিমের ডজন এখনও ১৬০ টাকার ওপরে।
দুপরে কারওয়ান বাজারে দেখা গেছে, মুরগির বাজার প্রায় ক্রেতাশুন্য। অন্য সময় সাধারণ ক্রেতাদের লাইন পড়ে যায়। কিন্তু এখানকার ২০টির বেশি দেকানের অধিকাংশতেই ক্রেতা ছিল না।
মুরগি বিক্রেতার সাজু বলেন, সামনে ঈদ। চাহিদা বেশি, আগের চেয়ে দাম একটুতো বাড়বো। আগের চেয়ে হঠাৎ মাল সাপ্লাই কমে গেছে, ঠিকমতো মাল পাইতাছি না। এতে, পাইকারিতেও দাম বাড়ছে। তবে কাস্টমার কম। কাস্টমার থাকবো কেমনে, যে যেমনে পারছে বাড়ি চলে গেছে।
আগে থেকেই চড়া তেলের বাজার নতুন করে আরও খানিকটা চড়েছে। লিটারে ২ টাকা বেড়ে খোলা পাম ওয়েল ১১০ থেকে ১১২ টাকা, ৫ টাকা বেড়ে খোলা সয়াবিন তেলের লিটার ১২৫ থেকে ১২৮ টাকা, ১ লিটারের বোতল ১৪০ থেকে ১৪২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি হয়েছে ৬৪০-৬৬০ টাকায়, যা ১০ দিন আগেও ছিল ৬৩০-৬৪০ টাকা।
মুদি পণ্যের মধ্যে সাদা চিনির দাম কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৭০ টাকা এবং লাল আখের চিনি ৫ টাকা বেড়ে ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতি কেজি ছোলা ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, মুগ ডাল ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা, সরু দানার মসুর ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, মোটা দানা ৬৫-৭০ টাকা, চিনি ৬২-৬৫ টাকা, লবণ ৩৫ থকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।