ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর মার্কেটগুলোতে চলছে কেনাকাটার ধুম। কোথাও তিল ধরানোর জায়গা নেই। ভিন্ন চিত্র শুধু বুটিকের দোকানগুলোতে। ক্রেতার চাপ নেই বলে সেখানে যেন ঈদের আমেজও নেই।
সোমবার দুপুরে নিউ মার্কেট এলাকার গাউছিয়া, চন্দ্রিমা মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, চাঁদনিচকসহ এর আশেপাশের মার্কেট এলাকায় দেখা গেছে কেনা বেচার ব্যস্ততা।
বিক্রি বাড়ায় স্বস্তি অধিকাংশ বিক্রেতাদের মাঝে। মন খারাপ কেবল বুটিক ব্যবসায়ীদের। জানালেন, ব্যবসা ভালো হচ্ছে না তাদের। আশানুরূপ ক্রেতা পাচ্ছেন না। নিউ সুপার মার্কেটের তিন তলার দক্ষিণ পাশে রেডিমেড কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় থাকলেও উত্তর পাশের বুটিক কাপড়ের দোকান একেবারেই ক্রেতাশূন্য।
কথা হয় ‘জ্যোৎস্না ব্লক প্রিন্ট এন্ড বুটিক’- এর আনস্টিচ থ্রি পিস ও শাড়ি ব্যবসায়ী আলমগীর কাজীর সঙ্গে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা আনস্টিচ থ্রি পিস ও শাড়ি পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করি। প্রায় সারা দেশে আমাদের এখান থেকে কাপড় যায়। আমরা সাধারণত কাপড়ে চুমকি, লাত্তি, ডলার বসানো ও অ্যামব্রয়ডারির কাজ করি। এক কথায় বুটিকের সকল কাজ হয় এখানে।
‘গত বছর থেকে আমাদের ব্যবসা খুবই খারাপ। গরিব মানুষ তো হাত পেতে খেতে পারে। আমাদের হচ্ছে জ্বালা। না পারি হাত পাততে, না পারতেছি ব্যবসা করে বেঁচে থাকতে। ঈদেও ক্রেতার চাপ নেই। আমাদের এখানে কিছু ব্যবসায়ী অনলাইনে টুকটাক ব্যবসা শুরু করেছে। তাদের কিছু সেল হচ্ছে।’
চাঁদনি চকের আরেক বুটিকের পাইকারি বিক্রেতা মো. সাগর বলেন, ‘মানুষ ঈদে যখন থ্রি পিস কিনে টেইলার্সে বানাতে দেয় তখন লকডাউন থাকার কারণে মানুষ কিনতে পারে নাই। এখন শেষ সময়ে মানুষ রেডিমেট কাপড় কিনছে। দুই-চার জন যারা আসছেন এদের বেশির ভাগই গিফট দেয়ার জন্য কিনছে। অন্যান্য বছরের এই সময় দিনে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বিক্রি হলেও এ বছর দিনে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
তবে সার্বিকভাবে গত কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় সোমবারও সকাল থেকেই নিউ মার্কেট এলাকার শপিং মলগুলোতে দেখা যায় প্রচণ্ড ভিড়।
নিউ মার্কেটের গাউছিয়ার সামনের ফুট ওভারব্রিজে উঠে অপর পাশে যেতে সময় লেগে যায় ১০ মিনিট। কারণ, ওভার ব্রিজের ওঠার রাস্তার আশপাশের ফুটপাতে দোকানের উপচে পড়া ভিড়।
ফুট ওভারব্রিজের নিচে জুতা ব্যবসায়ী মো. কামাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেচাকেনা এখন মোটামুটি ভালোই। তবে মানুষ ঠেলাঠেলি করার কারণে বেশিক্ষণ দাঁড়ানো যায় না। ঠিকঠাক মতো দাঁড়াতে পারলে ব্যবসা ভালো হতো।’
একই কথা বললেন ফুট ওভারব্রিজের ওপরে মিজান মিয়া, তিনি বিক্রি করছেন মেয়েদের ব্যাগ। মিজানের মতো অনেকেই এই ফুট ওভারব্রিজের ওপরে দুইপাশে ব্যবসা করছেন। একে ফুট ওভার ব্রিজে চলাচলের রাস্তা আরও সংকীর্ণ হয়ে এসেছে।
নিউ মার্কেটের দুই নম্বর গেটের পাশেই কাপড়ের দোকানি আল-মামুন জানালেন ভালো ব্যবসা হচ্ছে তার। বলেন, ‘ব্যবসা এহন একটু ভালো। ক্রেতা আছে। বিক্রিও হচ্ছে।’
দোকানিরা জানালেন ঈদ কেনাকাটার বাকি আর তিনদিন। এই সময়ে পুরুষের পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে। দল বেধে কিশোর-যুবকেরা আসছে শপিং করতে।
ব্যবসা কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে নিউ সুপার মার্কেটের তিন তলার কাপড় ব্যবসায়ী মো. মাসুম বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে এখন ব্যবসা মোটামুটি ভালো। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। লকডাউনের প্রথমে দোকান বন্ধ থাকার কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।’
ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটা করতে আসা মো. বাপ্পি বলেন, ‘সারা বছর করোনার কারণে শপিং করা হয় নাই। ঈদের সময় নতুন কাপড় পরে নামাজে যাব তাই শপিং করতে আসছি। অল্প কিছু কাপড় কিনেই চলে যাব।’
কেনাকাটার ধুমের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি উধাও হয়ে গেছে স্বাস্থ্যবিধি। এসব ব্যাপারে নজর নেই ক্রেতা-বিক্রেতা কারোর। ঈদ কেনাকাটায় করোনাভাইরাস মহামারি যেন কোনো ধর্তব্য বিষয় না।
নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সভাপতি শহীদ উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যতটুকু সম্ভব আমরা ক্রেতাদের সচেতন করছি। পরিবারে সবাইকে এবং শিশুদের মার্কেটে না আনার অনুরোধ করছি। এ ছাড়া, মার্কেটে আমরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করছি। দোকানদারদেরও স্বাস্থ্যবিধি মানতে কড়াকড়ি আরোপ করেছি।’
ব্যবসায়ী ও পুলিশকে দোষারোপ করে তিনি বলেন, ‘আমরা তো সচেতন করছি। তবে ব্যবসায়ীরা আমাদের কথা মতো কাজ করে না। পুলিশও কিছু করে না। তারা আসে। আড্ডা দিয়ে, ইফতার করে চলে যায়।’
নিউ মার্কেটের ভেতর মানুষ আর মানুষ। সেখানের ফুটপাতের কাপড় ব্যবসায়ী সোহেল মিয়া বলেন, ‘কয় দিন হইলো ব্যবসা ভালো। তয় যে পরিমাণ লোক দ্যাহেন এত বিক্রি নাই। গত বছর তো একেবারেই খারাপ অবস্থা আছিল। এইবার ব্যবসা একটু ভালো।’
নিউ মার্কেট এলাকার প্রধান সড়কের দুপাশের ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করছেন সুর সুরে। কেউ বলছেন ‘দেইখা লন দুইশো, বাইছা লন দুইশো’ আবার কেউ বলছেন- ‘একশো…একশো’।
ফুটপাতের ওড়না ব্যবসায়ী ইয়াসিন বলেন, ‘মার্কেট খুললই, মাঝখানে নাটক কইরা আমাগো ব্যবসা নষ্ট করছে। রোজার সারা মাস ভালো ব্যবসা হয় আমাগোর। তাও ভালো গতবারের মতো হয় নাই। হালকা-পাতলা বিক্রি হচ্ছে।’
গাউছিয়া মার্কেটে বাচ্চাদের কাপড়ের দোকানে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। বাচ্চারা বাবা-মায়ের হাত ধরে মনের আনন্দে ঈদের মার্কেট করছে।
এই মার্কেটের বাচ্চাদের কাপড় ব্যবসায়ী মো. ইয়াসিন বলেন, ‘ব্যবসা ভালোই হচ্ছে।’