এফবিসিসিআইয়ের নতুন সভাপতি হয়েছেন জসিম উদ্দিন। ভোট ছাড়াই ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ এই সংগঠনটির ২৩তম সভাপতি হলেন তিনি। জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হয়েছেন মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
এ ছাড়া, অ্যাসোশিয়েন গ্রুপ থেকে তিনজন এবং চেম্বার গ্রুপ থেকে তিনজন মোট ছয়জন সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
জসিম উদ্দিন অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। আর মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু চেম্বার গ্রুপ থেকে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
রোববার রাজধানীর মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে এই তথ্য জানিয়েছেন এফবিসিসিআই নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ।
এ সময় তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি পদের বিপরীতে একটি করে মনোনয়নপত্র জমা পড়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন।’
জসিম উদ্দিন মাত্র ১৮ বছর বয়সে ব্যবসায় হাতেখড়ি নিয়ে খ্যাতনামা শিল্পদ্যোক্তায় পরিণত হয়েছেন। দেশের এই শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান।
তিনি প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে শিল্পাঙ্গনে যাত্রা শুরু করে ব্যবসা ছড়িয়েছেন- গণমাধ্যম, ব্যাংক, বীমা, হোটেল, আবাসন, সিমেন্ট, ইলেকট্র্রনিকস, কেমিক্যাল, খাদ্য প্রস্তুতকরণ, ট্রেডিং, তৈরি পোশাক ও পশু খাদ্য প্রক্রিয়াকরণসহ বিভিন্ন খাতে।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন অর্থনীতিতে অবদান রেখে একাধিকবার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ব্যক্তিত্ব- সিআইপি সম্মাননা পেয়েছেন। জাতীয় রপ্তানি ট্রফিও জিতেছেন একাধিকবার।
প্রায় ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছেন ৫৬ বছর বয়সী এই উদ্যোক্তা।
এফবিবিসিসিআই প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পর নিউজবাংলাকে জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সরকারের লক্ষ্য অর্জনে এফবিসিসিআইর মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের যুক্ত করে কাজ করতে চাই। ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীর মাঝে ঐক্য সুদৃঢ় করতে চাই। ব্যবসা, বাণিজ্য ও অর্থনীতি বিকাশ এবং সুরক্ষার ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়নে বেসরকারি খাতের অংশীজনদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। দেশের অর্থনীতিকে টেকসই ও শক্তিশালী করার এই যাত্রা আরও বেগবান করতে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্থপতি, আমাদের মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০, ভিশন ২০৪১ ও একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে বলিষ্ঠ ভূমিকায় এগিয়ে যাচ্ছে দেশ ও মানুষ।’
‘নতুন নতুন সম্ভাবনায় প্রতিনিয়ত সাড়া দিয়ে এক নির্ভয় দূরদর্শী নেতৃত্ব সমৃদ্ধ করে চলেছে আমাদের অর্থনীতি। এক্ষেত্রে সাফল্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচনেই আগামী দিনে মনোযোগ দিতে চাই।’
জসিম বলেন, ‘এফবিসিসিআইকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে বেসরকারি খাতের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তৈরি করে ব্যবসায়ী, একাডেমিক এবং থিংক-ট্যাংকদের নিয়ে একটি বিশ্বমানের দরকষাকষি কমিটি গঠন করতে হবে। এফবিসিসিআই হওয়া উচিত গবেষণাভিত্তিক। যারা প্রকৃত ব্যবসায়ী তাদের সংগঠনই হবে এফবিসিসিআই।’
‘আন্তদেশীয় যোগাযোগের মাধ্যমে আমদানি, রপ্তানি ও বিনিয়োগ সহজ করতে হবে। বাংলাদেশকে এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে অর্থনৈতিক সুবিধা নিতে হবে। এশিয়া বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এফবিসিসিআইকে এশিয়ার সব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্নয়নে সঠিক ভূমিকা রাখতে হবে। বিশ্বের প্রায় সব দেশ দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সংস্থাসমূহের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ করছে। আমাদের এই সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘অবকাঠামো উন্নয়ন হলেই শিল্পায়ন হবে। দেশ শিল্পায়নের দিকে এগোচ্ছে। এ মুহূর্তে সেবা খাতকে গুরুত্ব দেয়া খুবই দরকার। সেবা খাত নিয়েও কাজ করতে হবে। সেখানে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। একটি দেশ যখন মধ্যম আয়ের হয়, তখন সেবা খাত অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।’
এর আগে কয়েকবার চেষ্টা করেও দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের সবচেয়ে বড় এই সংগঠনটির প্রধান হতে পারেননি জসিম উদ্দিন।
শেষ মুহূর্তে তীরে তরী ভেড়াতে না পেরে বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান জসিমের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে আশীর্বাদ পেয়ে অন্য কেউ বসে গেছেন ওই চেয়ারে।
তবে হাল ছাড়ছিলেন না সংগঠনটির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জসিম। এবার তার স্বপ্ন পূরণ হলো। শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) ২০২১-২৩ মেয়াদের সভাপতি হলেন তিনি।
নির্বাচিত নতুন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু সংগঠনটির সাবেক সহসভাপতি। বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) এবং রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি।
অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে নির্বাচিত তিন জন সহসভাপতি হলেন, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি এম এ মোমেন, এক্সিম ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বারভিডা’র সাবেক সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন ও মুদ্রণশিল্পের উদ্যোক্তা আমিন হেলালী।
চেম্বার গ্রুপ থেকে নির্বাচিত তিন জন সহসভাপতি হলেন, ময়মনসিংহ চেম্বারের সভাপতি ও সড়ক পরিবহন সমিতির সহসভাপতি এবং রয়েল টিউলিপ হোটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল হক শামিম, মিনিস্টার হাই টেক পার্কের চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক খান রাজ এবং পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান লাবিব গ্রুপের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আলমগীর।
গতবারের মতো এবারও এফবিসিসিআিই’র নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সবাই পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। গত ৫ মে পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরিচালক পদে ৭৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় আর নির্বাচনের প্রয়োজন হয়নি।
জানা গেছে, সরকারের উচ্চপর্যায়ের সবুজ সংকেতে কোনো ভোট ছাড়াই সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন জসিম উদ্দিন। বিগত কয়েকটি নির্বাচনেও সভাপতি পদে সরকার-সমর্থিত প্রার্থীর বিপরীতে অন্য কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। এমনকি সহসভাপতির পদগুলোও ঠিক হয়েছে সরকারের সমর্থনে। একইভাবে এবারও জসিম উদ্দিনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের উত্তরসূরি হলেন।
জসিম উদ্দিন ২০১০-১২ মেয়াদে এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ছিলেন। তার মালিকানাধীন বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্লাস্টিক পণ্য, আবাসন, গণমাধ্যম, তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা রয়েছে। বর্তমানে সুইসটেল নামে গুলশানে একটি পাঁচ তারকা হোটেল করছে এই শিল্পগোষ্ঠী। বেঙ্গল কমার্শিয়াল নামে নতুন কার্যক্রম শুরু করা ব্যাংকের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন। তার ভাই বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম একজন সংসদ সদস্য, যিনি এখন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান।