করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ঈদ উপলক্ষে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হলেও চাঁদপুরে রাত ২টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, লকডাউনের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে গভীর রাত পর্যন্ত দোকান খোলা হচ্ছে। তবে এমন ঘটনায় শঙ্কিত স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, নিয়ম মেনে না চললে মহামারি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
করোনা সংক্রমন রোধে সারা দেশে চলছে লকডাউন। তবে ঈদকে সামনে রেখে গত ২৫ এপ্রিল স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও বিপণিবিতান খোলার নির্দেশ দেয় সরকার।
চাঁদপুর শহরের হাকিম প্লাজা, হকার্স মার্কেট, পূরবী মার্কেট, মীর শপিং কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন শপিং সেন্টার ও বিপণিবিতান ঘুরে দেখা গেছে, গভীর রাত পর্যন্ত বেচাকেনা করছেন ব্যবসায়ীরা। রাত ১টার দিকেও শপিং সেন্টারগুলোতে ক্রেতাদেরও ভিড় দেখা গেছে।
তবে এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা খুব একটা চোখে পড়ছে না। মুখে মাস্ক পড়ছেন না ক্রেতাবিক্রেতাদের অনেকেই। কিছু কিছু দোকানে হ্যান্ড স্যানেটাইজার দেখা গেলেও সেটি খুব একটা ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।
শহরের হাকিম প্লাজার ব্যবসায়ী রিপন পাটোয়ারী বলেন, ‘আমরাও চাই সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ে দোকান খোলা রাখতে। কিন্তু গত বছর থেকে আমরা ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতির মুখে রয়েছি। এই সময় আমাদের বেচাবিক্রির মৌসুম। তাই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নির্দিষ্ট সময়ের পরেও দোকান খোলা রাখি।’
শাহ আলী সরকার নামে এক দোকানি বলেন, ‘মধ্যরাত পর্যন্ত দোকান খোলা রাখলেও আমারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করি। ক্রেতাদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছি। পুরো বছরে ঈদ বিক্রির আসল সময়। ঈদের জন্য ক্রেতারাও এখন মার্কেটে আসছেন। গ্রামের মানুষ দিনের বেলা মার্কেটে আসলেও শহরের মানুষ রাতের বেলায়ই আসেন। তাই সরকার নির্ধারিত সময় মেনে দোকান বন্ধ করছেন না ব্যবসায়ীরা।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হকার্স মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ঈদের আর সপ্তাহখানেক বাকি আছে। এই সময় ক্রেতাদের ভিড় অনেক বেশি থাকে। এখন সময় মেনে দোকান চালানো সম্ভব নয়।’
রাতে কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতা নিশাদ সরকার বলেন, ‘মূলত দিনের বেলা মার্কেটগুলোতে অনেক চাপ থাকে। এ সময়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ মার্কেটে আসেন। তাই ভিড় এড়াতে রাতে শপিং করতে এসেছি।’
চাঁদপুর সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল বলেন, ‘মার্কেটগুলোতে ক্রেতাবিক্রেতারা নিয়ম মেনে না চললে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেকই মাস্ক না পড়ে ঘোরাফেরা করছেন। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে অবশ্যই সব বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। সেক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা উচিত।’
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেন বিপণিবিতান ও দোকান খোলা হয়, সে বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে প্রশাসন। প্রতিদিনই আমাদের বিভিন্ন টিম মার্কেটসহ রাস্তায় অভিযান চালাচ্ছে। তবে ঈদ সামনে থাকায় বিক্রেতারা এখন একটু রাত পর্যন্ত দোকান খোলা রাখতে পারে। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না। ম্যাজিস্ট্রেট দেখলে মাস্ক মুখে পড়ে। মানুষ সচেতন না হলে আইন প্রয়োগ করে কিছু করা সম্ভব নয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানাই।’