বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চাকরি হারিয়ে ‘নিজেরাই কিছু করার চেষ্টায়’

  •    
  • ৮ মে, ২০২১ ২১:২৩

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রথম ধাক্কায় গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যেসব পোশাকশ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন, তাদের অনেকেই বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন। কারখানা বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের মাত্র ১৫ শতাংশ কোনো না কোনো কাজ পেয়েছেন।’

করোনাভাইরাস মহামারির প্রথম ধাক্কায় যে সব পোশাকশ্রমিক চাকরি হারিয়েছিলেন তাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে তিন জন নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে কিছু করার চেষ্টা করছে বলে সিপিডির এক জরিপে উঠে এসেছে।

এই জরিপে দেখা গেছে, ২০ শতাংশের মতো শ্রমিক দিনমজুরি করে সংসার চালাচ্ছেন। ২০ শতাংশ কাজ করছেন অনানুষ্ঠানিক খাতে। আরও ২০ শতাংশ শ্রমিক পোশাক খাতের বাইরে বিভিন্ন কারখানায় কাজ নিয়েছেন।

নিজেরাই কিছু করার চেষ্টা করেছেন, এমন শ্রমিক প্রায় ২৭ শতাংশ। মাত্র ৬ দশমিক ৭ শতাংশ শ্রমিক তৈরি পোশাক খাতেই কাজ ফিরে পেয়েছেন। বাকি কয়েক শতাংশ অন্যান্য খাতে গেছেন।

শনিবার ‘পোশাক খাতে করপোরেট জবাবদিহিতা- প্রেক্ষিত কোভিড-১৯ মহামারী’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জরিপের এই তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘মহামারি করোনাভাইরাসের প্রথম ধাক্কায় গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যেসব পোশাকশ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন, তাদের অনেকেই বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন। কারখানা বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের মাত্র ১৫ শতাংশ কোনো না কোনো কাজ পেয়েছেন।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও সজাগ কোয়ালিশন যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে।

একটি সমীক্ষার ভিত্তিতে মূল প্রবন্ধটি তৈরি করা হয়। এতে আরও বলা হয়, নতুন কাজে শ্রমিকদের আয় কমে গেছে। আগে যেখানে শ্রমিকেরা মাসে ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করতেন, সেখানে চাকরি হারানোর পর নতুন কাজে তারা এখন মাসে গড়ে সাত হাজার টাকা আয় করেন। তা ছাড়া চাকরি হারানোর সময়ে অনেকেই তাদের পাওনা পাননি।

সিপিডির ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা

১০২ জন গার্মেন্টস মালিক, ৩০১ জন পোশাকশ্রমিক ও ১০০ জন বেকার পোশাকশ্রমিকের ওপর এই সমীক্ষা করা হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, শ্রমিকদের পাওনা দিতে হবে। এ জন্য মালিকপক্ষের দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। শ্রমিকশ্রেণির প্রাপ্য পরিশোধে মালিকেরা যেন নজর দেন। শ্রমিকনেতাদেরও শুধু শ্রমিকস্বার্থ নয়, মালিকদের যৌক্তিক পরিস্থিতিও বিবেচনা করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘গত বছর বিদেশি ক্রেতারা যে পোশাক ১৫ ডলারে কিনত, সেই পোশাক এখন ১২ ডলার দিতে চাচ্ছে। তাই ক্রেতাদের কাছ থেকে উপযুক্ত দাম পাওয়ার বিষয়ে আওয়াজ তুলতে হবে।’

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, করোনার কারণে বিদেশি ক্রেতাদের অনেকে ব্যাংকে ঋণখেলাপি হয়ে গেছেন। তাই দামও পড়ে গেছে। এ ছাড়া ২০১৫ সালের পর পোশাকের বৈশ্বিক বাজার বাড়েনি।

করপোরেট সুশাসন জোরদারের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘আট বছর পর বিজিএমইএর নির্বাচন হয়েছে। এবার নতুন প্রজন্মের অনেক প্রতিনিধি কমিটিতে এসেছে। তাদের নিয়ে করপোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেব।’

‘তবে আশার কথা হচ্ছে, আমাদের খাতটি ঘুঁরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে আমরা কিছু লক্ষণ দেখছি। আগামী বছর এই খাত ভালো মত ঘুরে দাঁড়াতে পারে’-বলেন তিনি।

নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘মুনাফার অর্থ নিয়ে কারখানার সম্প্রসারণ করে থাকি। বরং যা মুনাফা করি তার চেয়েও বেশি পুনঃবিনিয়োগ করি। তাই আমাদের হাতে ৪-৫ মাস বেতন দেয়ার মতো অর্থ থাকে না।’

কর্মীদের বেতন কমানোর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার দাবি কোথাও বেতন কমানো হয়নি।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার বলেন, ‘মজুরি কমে গেলে বিপদে পড়েন শ্রমিকেরা। বাড়িওয়ালারা টাকা কম নেয় না, ওষুদের দামও কম নেয় না। তখন শ্রমিকেরা খাওয়া কমিয়ে দেয়…। এভাবে দুর্বিসহ জীবনযাপন করেন তারা।’

তিনি বলেন, ‘পোশাকশিল্প মালিকদের শুধু ক্রেতামুখী জবাবদিহি নয়; শ্রমিকমুখী জবাবদিহিও নিশ্চিত করতে হবে।’

বিজিএমইএর পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, করোনার সময়ে বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদার কথাও বিবেচনা করতে হবে। তাদেরও বিক্রি নেই। তারা পোশাক নিয়ে কোথায় রাখবে? তাই উভয় পক্ষের কথা চিন্তা করতে হবে।

আলোচনা সভায় শ্রমিক নেতা মন্টু চন্দ্র ঘোষ, নমিতা নাথ, আহসান হাবিব বুলবুল, বাবুল আক্তারসহ শ্রমিক প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।

এ বিভাগের আরো খবর