বাংলাদেশে ঈদ কেনাকাটায় উচ্চবিত্তের আনাগোনা যেখানে বেশি থাকে তার মধ্যে অন্যতম জারা ফ্যাশনস। উৎসব পার্বনে ইদানীং ধনকুবেরদের মধ্যে গাউনের চল বেড়েছে। তবে করোনাকাল বলে এবার অনেক দামি গাউনগুলো আনেনি তারা।
গুলশান-১ এ প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়কেন্দ্রে এবার সবচেয়ে দামি গাউনের মূল্য দেখা গেছে ৫৫ হাজার টাকা।
বিক্রয় কর্মীরা জানান, গত বছর সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছিল গাউন। এবার করোনাকালে ক্রেতা কম হবে ভেবে ওই ধরনের পোশাক আন আনেননি তারা। বরং অরিজিনাল সেই গাউনগুলোর আদলে রেপ্লিকা এনেছেন, যেগুলোর দাম বেশ কম।
মেয়েদের পোশাকের তুলনায় ছেলেদের পোশাক জমকালো কম হয়, দামও তুলনামূলক কম দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। তবে জারা ফ্যাশনে এবার মেয়েদের যে কোনো পোশাকের চেয়ে ছেলেদের একটি শেরওয়ানির দাম বেশি।
সেখানে এবার সবচেয়ে দামি শেরওয়ানির মূল্য ৭০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে ছয় হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে।
তবে বেচাকেনা নিয়ে যারপর নাই হতাশ কর্মীরা। তারা বলছেন, এখনও ক্রেতা নেই সেভাবে।
জারা ফ্যাশন মলের জেনারেল ম্যানেজার মোশহাবিরুল রিজভী ঘুরে ঘুরে পোশাক দেখাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, ‘এমন ঈদে দেড় থেকে আড়াইল লাখ টাকার গাউনও বিক্রি হয়েছে। এখন ৫৫ হাজার টাকার গাউন-লেহেঙ্গা নিয়েই বিপাকে আমরা।’
এর কারণ কী?
তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে বন্ধ বিয়ে, সামাজিক অনুষ্ঠান। জারা ফ্যাশনে যে পোশাক আছে তার বেশিরভাগই পার্টি ড্রেস। ঈদে যে বড় বড় আয়োজন হয় সেগুলোতে এসব পোশাকের চাহিদা বেশি ছিল। এখন সবকিছু বন্ধ থাকায় বিক্রি নেই।’
এই শেরওয়ানির দাম ৪২ হাজার টাকা। লেহেঙ্গা ৫০ হাজার। তবে এর চেয়ে দামি শেরওয়ানি আছে
এখন পর্যন্ত একটিও দামি পোশাক বিক্রি হয়নি জানিয়ে মোশহাবিরুল রিজভী বলেন, ‘ধনিক শ্রেণির ক্রেতাদের আনগোনাই এখানে বেশি থাকে। তারা মূলত রাতে বেশি আসেন। কিন্ত শো-রুম খোলা রাখার ক্ষেত্রে সরকার বিধি নিষেধ দেয়া আছে। ফলে এখন রাত আটটাই শো রুম বন্ধ করে দিতে হয়। এ জন্য ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে যেসব ক্রেতারা আসেন তাদের বেশিরভাগই নিয়মিত কাস্টমার। যারা প্রায়শ আমাদের এখান থেকে কেনাকাটা করেন। কিন্ত এই অবস্থায় তারাও কেনাকাটা করছেন না। অনেকের ব্যবসায় মন্দা, আবার অনেকে করোনা আতঙ্কে কেনাকাটা থেকে নিজেকে বিরত রাখছেন।’
এই লেহেঙ্গাগুলোর দাম ৪২ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে
করোনা হানা দেয়ার আগে ঈদের আগে এই সময়ে রাতে সেহেরি পর্যন্ত শো রুম খোলা রাখতে হয়েছে। তখনও ক্রেতার আনাগোনা অনেক থাকত।
এত দাম কেন?
জারা ফ্যাশনের জেনারেল ম্যানেজার বলেন, ‘এগুলো মূলত অর্ডার করে আনতে হয়। একটি ডিজাইন একটিই। আপনি যেটা পড়বেন, সেটা আরও কেউ পড়বে না। ফলে প্রতিটি তার জন্যই আলাদা করে প্রস্তুত হয়। কপি প্রোডাক্ট হলেও এর হয়ত দুই থেকে তিন পিস থাকবে বাজারে। তখন জামা তৈরির খরচ কম হয়। আবার একই ডিজাইন অনেক হলে আরও কম হয়। এ কারণেই এই পোশাকগুলো এত দাম।’
৫৫ হাজার টাকার গাউনটি দেখিয়ে জারার ম্যানেজার বলেন, ‘এখানে যে কাজটি দেখছেন, সেটি রেশমি ও জরি সুতার কাজ করা। নিখুত ডিজাইনের কাজ হওয়ায় খুবই দুর্লভ। এটিও হয়ত বাজারে দুই একটিই পাওয়া যাবে।’
তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত পিস নিতে চাইলে দুই থেকে তিন মাস আগে অর্ডার দিতে হবে। এটার আরও যে বিশেষত্ব আাছে সেটি হচ্ছে এটি গ্রাউন স্ট্যাইলের টেল কাটিং। উড়নায় স্টোনের কাজ করা।’
বিধিনিষেধের কারণে জারায় এবার ক্রেতা কম। বিক্রিও নিয়ে হতাশ কর্মীরা
লেহেঙ্গাও দেখা গেল ৫২ হাজার টাকার। আনা হয়েছে ভারতের রাজস্থান থেকে। বিভিন্ন ধরনের এসব লেহেঙ্গা পাওয়া সর্বনিম্ম ৩৫ হাজার টাকায়। এগুলোরও বেশিরভাগই কপি করা। অরিজিনালগুলোর দাম আরও কয়েক গুণ বেশি।
এবার রেপ্লিকা কেন?
জেনারেল ম্যানেজার বললেন, ‘আগে আমাদের এগুলোর অরজিনাল পিস ছিল। তখন এগুলোর অনেক কাস্টমার ছিল। এখন কাস্টমার নেই। তাই অরজিনাল থেকে কপি করে দাম কিছুটা কমে বিক্রি করছি। তবে মানের দিক দিয়ে কোনো হেরফের নেই।’
আছে মাল্টি কাজের লেহেঙ্গা। যেখানে পাঁচ ধরনের সুতা দিয়ে কাজ করা। রেশমি জারি, মোঙ্গ সুতা আর কোটা পাত্তির কাজ আছে। পুরোটাই স্টোর দিয়ে মোড়ানো। এমন একটির দাম রাখা হচ্ছে ৩৮ হাজার টাকা। শারারা লেহেঙ্গার দাম রাখা হচ্ছে ৪৮ হাজার টাকা।
শুধু পোশাক নয়, পোশাকের সঙ্গে মানানসই লেডিস পার্সেরও কালেকশন আছে জারা ফ্যাশনে। বোম্বে থেকে আসা এসব পার্সের দাম সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে।
এই পার্সগুলো পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে চার থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকার মধ্যে
পুরুষের জন্য কটনের পাঞ্জাবিও আছে এখানে। দাম সর্বোচ্চ সাড়ে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত। আরও আছে সিল্ক বা রেশমি সুতার কাজ করা পাঞ্জবি। সেগুলোর দাম বেশি।
বিভিন্ন ধরনের কাজ করা শেরওয়ানি আছে জারা ফ্যাশনে। করোনার আগে আরও এক্সক্লুসিভ শেরওয়ানি ছিল ডিসপ্লেতে। সেগুলোর দাম ছিল প্রায় ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত। সেটি কেউ চাইলে এখনও নিতে পারেন। তবে বিক্রি হবে না ভেবে ডিসপ্লেতে রাখা হয়নি।
ডিসপ্লেসে যেগুলো রাখা হয়েছে, সেগুলোর সর্বোচ্চ ৪২ হাজার টাকা।
দামের বিষয়ে জারার জেনারেল ম্যানেজার বলেন, ‘এর পুরোটাই কাজ করা। মূলত এ কারণেই দাম এত। আর এটির প্রোডাকশনও এক পিস। আর কোথাও পাওয়া যাবে না।’
শিশুদের জন্য আছে প্যান্ট শার্ট, রেডিমেন্ট গার্মেন্টস। মেয়ে বাচ্চাদের জন্য আছে শারারা গারারা। এক থেকে দেড় বছরের শিশুদের পোশাকের সর্বনিম্ন দাম দেড় থেকে দুই হাজার টাকা।