বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঈদ কেনাকাটার ধুম

  •    
  • ৭ মে, ২০২১ ১৮:২২

দুই দিন ধরে বাস ছাড়ার পর ক্রেতা বেড়েছে। মাসের শুরু, অনেকেই বেতন পেয়েছেন। আবার ঈদের আগে শেষ শুক্রবার। সামনে ছুটির দিন আর দুইটি। শনিবার ও শবে কদরের দিন সোমবার। বিক্রেতাদের এখনও একটাই চাওয়া, এমন ভিড় যেন থাকে ঈদের আগ পর্যন্ত।

‘দশ দিন অইলো দোকান খুলছি, কাস্টমার পাইতাছিলাম না। যারা আসত, তারাও দাম বলে চলে যাইত। দুই দিন ধরি কাস্টমার বাড়ছে। আইজ কাস্টমার বেশি, বেচাকিনাও বেশি। এতদিনে মনে হইতাছে ঈদ আসতাছে। এই রকম বেচাবিক্রির তো আশায় ছিলাম। চানরাত পর্যন্ত যেন এমন থাকে।’

শুক্রবার বিকেলে উচ্ছ্বাস আর তৃপ্তিমাখা কথাগুলো বলছিলেন নিউ মার্কেটের সামনের ফুটপাতে কাপড় বিক্রেতা রাজু মিয়া। ক্রেতার চাপে কথা বলার সুযোগ নেই তার। জানালেন একা একা পেরে উঠছেন না তিনি।

‘শুক্কুর বার, মানুষের ছুটি। মানুষ বেতন পাইছে, বাড়িও যাইব। জামাকাপড় কিনতাছে, আমিও খুশি।’

একই চিত্র প্রায় প্রতিটি দোকানে। দম ফেলার ফুরসত নেই, ক্রেতা দরদাম করছেন, ফুটপাতের বিক্রেতাদের হাঁকডাক, রাস্তায় মানুষ আর নানা যানবাহনে একাকার। ফুটপাত তো বটেই, রাস্তার উপর ফুটওভারব্রিজেও হাঁটার জো নেই।

এই অবস্থা পুরো নিউমার্কেট, নীলক্ষেত মোড়, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় পর্যন্ত। মানুষের ভিড়ে পুরো এলাকা যেন এক হয়ে আছে। ঈদ কেনাকাটা যা বলে। তাতে হাসি ফুটেছে বিক্রেতাদের।

চলমান লকডাউনে ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে গত ২৫ এপ্রিল থেকে ঢাকার দোকানপাট ও বিপণিবিতান খুলে দেয় সরকার। কিন্তু তখন বন্ধ ছিল গণপরিবহন। তাই ক্রেতাও ছিল কম। তবে, গতকাল থেকে বাস চালুর পর পরিস্থিতি অনেকটা পাল্টেছে।

বিক্রেতারা বলছেন, প্রায় দুই সপ্তাহ হলো দোকান খুলেছে। কিন্তু এতদিন কোনো রকম দোকান খরচ উঠত। এর মধ্যে গত শুক্র-শনিবার দুই ছুটির দিনেও ছিল না তেমন ক্রেতা।

তবে দুই দিন ধরে বাস ছাড়ার পর ক্রেতা বেড়েছে। মাসের শুরু, অনেকেই বেতন পেয়েছেন। আবার ঈদের আগে শেষ শুক্রবার। সামনে ছুটির দিন আর দুইটি। শনিবার ও শবে কদরের দিন সোমবার। বিক্রেতাদের এখনও একটাই চাওয়া, এমন ভিড় যেন থাকে ঈদের আগ পর্যন্ত।

নিউমার্কেটের জুতা বিক্রেতা মো. সবুজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগেও অনেক কাস্টমার ছিল। তবে তার মধ্যে কেনার কাস্টমার ছিল কম। আজ কিন্তু বেশি লোক কিনতেছে। দামাদামিও করার সুযোগ কম।’

গাউছিয়ায় বাচ্চাদের পোশাক বিক্রেতা মোহাম্মদ শামীম বলেন, ‘আগে ১০ জন দরদাম করলে তিনজন কিনত। আজ ১০ জনের আটজনই কিনছে। ভিড় যেমন বেচাকেনাও তেমন।’

তবে বেচাকেনা বাড়লেও হতাশার কথা জানালেন গাউছিয়া মার্কেটের বিক্রেতা আবু বকর। তিনি জানান, ঈদের বেচাকেনা বলতে যা বোঝায় তা গত দুই বছর নেই।

‘আজ বেচাকেনা ভালো। কিন্তু তাতে দোকানের তিন ভাগের এক ভাগ মালও বিক্রি হবে না। এবারও ধরা খেলাম। এখন ঈদের বাকি কয়দিন যদি আজকের মতো বেচাকেনা হয় তাহলে হয়তো অর্ধেক মাল বিক্রি হবে।’

শপিং মল দোকানপাট খোলা রাখার সময় আরও বেশি রাখতে পারলে ব্যবসাটা ভালো হতো বলে জানালেন অপর বিক্রেতা মোখলেস।

তিনি বলেন, সরকার তো ২৫ তারিখ থেকেই মার্কেট খুলল। কিন্তু বাস ছাড়ে নাই। নিউমার্কেটের বেশির ভাগ কাস্টমার কম টাকাপইসার মালিক। ৫০০ টাকা খরচ করে সিএনজি দিয়ে আসা লোক কম। আরও আগে বাস খুলে দিলে ভালো হতো।

‘এখন বাস চলা শুরু হয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যার পর বিক্রি করা যাচ্ছে না। ঈদবাজারে বিক্রি হয় সন্ধ্যার পর থেকে রাত পর্যন্ত। তাই অন্তত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকলে আরও ভালো বিক্রি হতো।’

নূর ম্যানশনের বিক্রেতা আসিফ বলেন, ঈদের কেনাকাটা হয় রোজার ১০ দিন থেকেই। এবার তার কোনো দেখা নাই। আজ বেচাকেনা বেশ ভালো। কিন্তু এক দিনের বিক্রি দিয়ে কি বছর যাবে। ঈদের বিক্রির ওপর অনেকেরই সারা বছরের ব্যবসা টিকে আছে। এক বছর থেকেই বিক্রি বন্ধ। কিন্তু ভাড়া তো আর বন্ধ না। এখন সবার পথে বসার অবস্থা। অন্তত ১০ দিন এমন বিক্রি হলেও চালান উঠানো যেত।

ফার্মগেট থেকে কেনাকাটা করতে এসেছেন আরিফ হোসেন। তিনি বলেন, করোনার কারণে আয় আগের চেয়ে কমেছে। কিন্তু স্ত্রী অনেক দিন ধরে একটি ভালো শাড়ির জন্য বলছিল। তাই কষ্ট করে হলেও একটা কাতান শাড়ি কিনলাম। দাম খুব বেশি না, ২২০০ টাকা নিল। এ ছাড়া, ছেলে-মেয়ের জন্যও কিছু জামা কিনেছি।’

ঈদের কেনাকাটার ভিড়ে যেন হারিয়ে গেছে স্বাস্থ্যবিধি। অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। ক্রেতাদের মধ্যে যারা মাস্ক পরে আছেন, তাদের মধ্যে অধিকাংশের মাস্ক থুতনির নিচে। এ ছাড়া, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার প্রবণতা কোথাও নেই। অনেকে কেনাকাটা করতে এসেছেন সপরিবারে।

অনেকে বাসার কাছে শপিং মল রেখেও তুলনামূলক কম দামের আশায় এসেছেন নিউ মার্কেটে। তেমনই একজন বেসরকারি চাকুরে পারভেজ আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘মিরপুরেও অনেক শোরুম রয়েছে। সেখানে দাম একটু বেশি। তাই নিউ মার্কেটে এসেছি, একটু কম দামের আশায়। শোরুমগুলোতে দামাদামির সুযোগ কম। নিউমার্কেট এলাকায় দামাদামি করে কেনা যায়। এখানে সব দামের কাপড়ই পাওয়া যায়। আমরা স্বামী-স্ত্রী এ ঈদে কিছু কিনব না। মা-বাবা ও মেয়ের জন্যই শুধু কিনব।’

এ বিভাগের আরো খবর