বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চালের দাম না কমার আভাস মিলমালিকদের

  •    
  • ৭ মে, ২০২১ ১৪:২২

কুষ্টিয়া চালকলমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন, ‘এবার ধান নিয়ে কৃষকদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস দেখা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে একটা প্রবণতা হয়েছে কম দামে বেচবেন না। গত বছর তারা ভালো ধানের দাম মণে ১৪০০ টাকাও পেয়েছেন।’

ধান কাটা শুরু হওয়ার পর কয়েক দিন দাম কিছুটা কম হলেও আবার বেড়ে গেছে ধানের দাম। এ কারণে চালের দাম খুব একটা কমবে না বলে আভাস দিয়েছেন কুষ্টিয়ার চালকলমালিকরা।

কুষ্টিয়ার চালকলগুলোর গেটে সরু মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫১ টাকা কেজিতে। শহরের খুচরা বাজারে সেটি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায়। নতুন ধান ওঠায় এরই মধ্যে কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামের ৭০ ভাগ মিল চালু হয়েছে। বন্ধ মিল চালু করার পর সবাই একযোগে ধান কিনতে যাওয়ায় বাজারে দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে দাবি মিলমালিকদের।

কুষ্টিয়ার খাজানগরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধানচালের মোকাম। মোকামটিতে প্রায় ৩৫০টি চালকল রয়েছে। এর মধ্যে বড় অটো রাইস মিল আছে ৫৫টি। বাকিগুলো হাসকিং মিল। ধান সংকটে গত মার্চ-এপ্রিলে বন্ধ হয়ে যায় প্রায় সব মিলের কার্যক্রম। এক মাস বন্ধ থাকার পর নতুন ধানে এরই মধ্যে ৭০ ভাগ চালকল চালু হয়েছে বলে জানান কুষ্টিয়া চালকলমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান।

কুষ্টিয়ার মিলে বস্তাবন্দি চাল

সরেজমিনে দেখা যায়, খাজানগর মোকামে আবার বেড়েছে কর্মচাঞ্চল্য। পুরোদমে উৎপাদন শুরু হয়েছে অনেক মিলেই।

বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘মৌসুম পুরোপুরি শুরু হলে খাজানগর মোকাম থেকে প্রতিদিন ৩০০ ট্রাক চাল যাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।’

ফ্রেশ এগ্রো নামের একটি অটোমেটিক রাইস মিলের মালিক মো. ওমর ফারুক। একই সঙ্গে তিনি জেলা মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।

মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘আমার মিল চালু হলো দুই মাস পর। মিলগেটে এখন ভালো মানের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫১ টাকা কেজি দরে।’

তিনি বলেন, ‘এবার প্রথম থেকেই ধানের দাম বেশি। আটাশ ধান কিনেছি ১১০০ টাকা মণ। মিনিকেট পড়ছে ১১৩০ থেকে ১১৪০ টাকা মণ।’

কুষ্টিয়া চালকলমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন, ‘এবার ধান নিয়ে কৃষকদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস দেখা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে একটা প্রবণতা হয়েছে, কম দামে বেচবেন না। গত বছর তারা ভালো ধানের দাম মণে ১৪০০ টাকাও পেয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতেই দক্ষিণবঙ্গ থেকে ১১৬০ টাকা আর উত্তরাঞ্চল থেকে ১১৪০ টাকা মণ মিনিকেট ধান কিনতে হচ্ছে।’

ফোর স্টার রাইস মিলের পরিচালক শরিফুল ইসলাম জানান, বন্ধ মিল চালু করতে মালিকরা একযোগে ধান কিনছেন। কিন্তু কৃষকরা ধান বিক্রির ক্ষেত্রে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। প্রয়োজন মেটানোর জন্য অল্প করে ধান বিক্রি করছেন তারা।

কুষ্টিয়া সদরের সোনাইডাঙ্গা গ্রামের কেরু মণ্ডল শনিবার স্থানীয় উজানগ্রাম হাটে ধান বিক্রি করেছেন। তিনি একাশি জাতের ধান বাজারে ১০৭০ টাকা মণ বিক্রি করেছেন।

কেরু মণ্ডল জানান, বাজারে মিনিকেট ও আটাশ জাতের ধান ১১০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে।

সোনাইডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ধান কাটা চলছে। এখনও বিক্রি শুরু করিনি। ভালোমতো শুকিয়ে দেখেশুনে বিক্রি করলে দাম পাওয়া যায়।’

ধানের বাজার এবার ভালো চলছে বলেও জানান তিনি।

ফোর স্টার রাইস মিলের পরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ধানের দাম বেশি থাকায় কমছে না চালের দামও। খাজানগরে অটোমেটিক মিলের মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৫৫০ থেকে ২৬০০ টাকায়।’

তিনি জানান, হাসকিং মিলের মিনিকেট চালের ৪০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ টাকায়। হাসকিং মিলের চালও কালার সর্টার মেশিন দিয়ে পলিশ করে এক নম্বর হিসেবে বিক্রি করা হয়।

চালের দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না জানান আরও কয়েকজন মিলমালিক।

কুষ্টিয়া পৌর বাজারের ব্যবসায়ী মো. আরিফ বলেন, ‘পুরাতন মিনিকেট চাল ৬২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে নতুন আসা মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৬ টাকা কেজিতে। ভাত ভালো হয় না বলে এখনও নতুন চালের বিক্রি বাড়েনি।

একই রকম দাম জানিয়েছেন বাজারের অন্য বিক্রেতারাও।

এবার সরকারিভাবে সংগ্রহ করা ধানচালের দামও বাড়ানো হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এসএম তাহসিনুল হক বলেন, ‘এবার মিলমালিকদের কাছ থেকে ৪০ টাকা কেজি চাল কিনবে সরকার। গতবার এই দর ছিল ৩৬ টাকা।’

তিনি জানান, এই দামে খুশি হয়েছেন মিলমালিকরা। জেলায় মোট সিদ্ধ চাল কেনা হবে ৩৪ হাজার ৪৪৬ টন। আর ২৭ টাকা কেজি দরে কৃষকদের কাছ থেকে ৪ হাজার ৯৭৭ টন ধান কেনা হবে। গত বছর ধানের দাম ছিল ২৬ টাকা কেজি।

এসএম তাহসিনুল হক বলেন, ‘এখনও বাজারে ধানের দাম বেশি। পুরোপুরি ধান কাটা শুরু হলে দাম কমে আসবে। তখন কৃষকদের কাছ থেকে ১০৮০ টাকা মণে ধান কেনা হবে।

তিনি বলেন, ‘ধান ও চালের বাজার যাতে স্থিতিশীল থাকে সে বিষয়ে শুরু থেকেই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’

কুষ্টিয়া জেলা বাজার কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘কোথা থেকে কত করে ধান কিনছেন মিলমালিকরা আর চাল কী দামে বিক্রি করছেন তা মনিটরিং করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘মিলগুলো উৎপাদনে গেলেও নতুন চাল বিক্রি বাড়েনি। কোনো অনিয়ম দেখা দিলে বা মুনাফা বাড়ালে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর