টানা দুই দিন চাঙাভাব শেষে দরপতন হলো ব্যাংক খাতে। তবে এর মাঝেও বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।
আগের কার্যদিবসে দুটি ছাড়া সব ব্যাংকের শেয়ারদর বৃদ্ধিতে এই খাত নিয়ে দীর্ঘ হতাশা দূর হওয়া নিয়ে আলোচনা চলছিল। তবে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বৃহস্পতিবার এক খাতের ৩১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১০টির। অপরিবর্তিত ছিল পাঁচটির দর। আর কমেছে বাকি ১৬টির।
ইবিএলের দর স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখলে অবশ্য কমেছে। ৩৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে কমে দর দাঁড়িয়েছে ৩৩ টাকা ৮০ পয়সা। এটি হয়েছে কোম্পানিটির লভ্যাংশের কারণে।
বুধবার কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়নি রেকর্ড ডেটের কারণে। এবার ব্যাংকের শেয়ারধারীরা ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ারের পাশাপাশি শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৭৫ পয়সা করে নগদ লভ্যাংশ পেয়েছেন।
রেকর্ড ডেটের দামের হিসাব সমন্বয় করা দাম হয় ৩৩ টাকা ৭০ পয়সা। এই হিসাবে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৭৫ পয়সা নগদ লভ্যাংশ ফ্রি হয়ে গেছে প্রথম কার্যদিবসেই।
ব্যাংকের এই চিত্রের দিন ব্যাপকভাবে হতাশ হয়েছেন লকডাউন শুরুর পর থেকে ঢালাও বাড়তে থাকা বিমা খাতের শেয়ারধারীরা। আগের দিনও বেশির ভাগ শেয়ারের দরপতন হয়েছিল এই খাতে। সপ্তাহের শেষ দিন এই খাতের ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ৪০টি। বেড়েছে কেবল ছয়টির দর।
ব্যাংক-বিমা খাতের এই চিত্রের পরও পুঁজিবাজারে দিন শেষে সূচক বেড়েছে ১৭ পয়েন্ট। লেনদেনও আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে ৮৮ কোটি টাকার বেশি।
এদিন পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে বাড়তি এক ঘণ্টা। গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সরকার ঘোষিত লকডাউনের মধ্যে পুঁজিবাজারে লেনদেন সময়সীমা কমিয়ে আনা হয়।
বেলা আড়াইটা থেকে লেনদেন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় দুপুর ১২টা পর্যন্ত। পরে কঠোর লকডাউনে ১৪ এপ্রিল থেকে ব্যাংকে লেনদেনের সময়সীমা বাড়ার পর পুঁজিবাজারেও আধা ঘণ্টা সময় বাড়ানো হয়।
লকডাউন তৃতীয় দফা বাড়িয়ে সরকারের প্রজ্ঞাপন শেষে ব্যাংকে লেনদেনের সময় আরও এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসার পর এখন ঠিক হয়েছে পুঁজিবাজারে লেনদেন হবে বেলা দেড়টা পর্যন্ত।
ব্যাংকে যেগুলোর দর বেড়েছে
ইবিএলের দর শেয়ারপ্রতি ৫ টাকা ৮০ পয়সা কম দেখালেও লভ্যাংশের সমন্বয়ের পর আসলে দাম বেড়েছে ১ টাকা ৮৫ পয়সা। টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এই ব্যাংকটির শেয়ারদরই।
এরপর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে রূপালী ব্যাংকের শেয়ার দর। আগের দিনের দরের সঙ্গে ১ টাকা ৫০ পয়সা যোগ হয়েছে।
তবে শতকরা হারে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে নতুন তালিকাভুক্ত এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ারদর। টাকার অঙ্কে ১ টাকা ৩০ পয়সা আর শতকরা হারে ৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়েছে দর। সার্কিট ব্রেকার অনুযায়ী এর চেয়ে বেশি দর বাড়া সম্ভব ছিল না।
এ ছাড়া ব্র্যাক ব্যাংকের ১ টাকা ২০ পয়সা, ট্রাস্ট ব্যাংকের ৯০ পয়সা, আইএফআইসি ব্যাংকের ৫০ পয়সা, এসআইবিএলের ৩০, এনসিসি ব্যাংকের ২০ এবং এবি ও সাউথ ইস্ট ব্যাংকের দর বেড়েছে ১০ পয়সা করে।
এই খাতে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে সিটি ব্যাংকের; ৬০ পয়সা, পূবালী ব্যাংকের ৪০ পয়সা, ইসলামী ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৩০ পয়সা করে এবং বাকিগুলোর ১০ থেকে ২০ পয়সা করে দর কমেছে।
পতন বিমায়
বিমা খাতের সবচেয়ে বেশি পতন হয়েছে মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৬ টাকা ১০ পয়সা। শেয়ারদর ৭৩ টাকা ২০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৬৭ টাকা ১০ পয়সা।
ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর কমেছে ৫ টাকা। ৭৯ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৭৪ টাকা ৩০ পয়সা। ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর কমেছে ৪ টাকা ৫০ পয়সা।
শেয়ারপ্রতি ৩ টাকার বেশি কমেছে বেশ কয়েকটি কোম্পানির। এর মধ্যে এশিয়ান ইন্স্যুরেন্সের ৩ টাকা ৭০ পয়সা, এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্সের ৩ টাকা ৬০ পয়সা, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৩ টাকা ৭০ পয়সা দাম কমেছে। নিটল ইন্স্যুরেন্স দর হারিয়েছে ২ টাকা ৭০ পয়সা।
বিশ্লেষকের বক্তব্য
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, এ সময় যেসব কোম্পানির শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, সেগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই থাকে খারাপ কোম্পানি। এসব খারাপ কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধিকে যাচাই করে সার্বিক বাজারের অবস্থা ব্যাখ্যা করা কঠিন।
তিনি বলেন, ‘বিমা খাতের যে পতন হয়েছে সেটিকে মূল্য সংশোধনই বলা যায়। আর মূল্য সংশোধন হওয়াও জরুরি ছিল। ব্যাংকের আরও সময় অপেক্ষা করতে হবে। দেখা যাক কী হয়।’
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৭ দশমিক ১৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬০৬ পয়েন্টে। এর আগের দুই মাস আগে গত ৮ মার্চ সূচক ৫ হাজার ৬০০ পয়েন্টে উঠেছিল।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ২ দশমিক ২৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৫২ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৫ দশমিক ১৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৩৭ পয়েন্টে।
কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৮০টির। কমেছে ১২০টির, পাল্টায়নি ৬০টির। লেনদেন হয়েছে মোট ১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৬৩ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২০৮ পয়েন্টে। মোট লেনদেন হয়েছে ৫৬ কোটি টাকা।