সিগারেটসহ সব তামাকজাত পণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে দাম বাড়ানোর দাবিতে দেশব্যাপী ভার্চুয়াল মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বুধবার দুপুর ১২টায় একযোগে দেশের সব বিভাগের শতাধিক নাগরিকের উদ্যোগে অভিনব এই ভার্চুয়াল মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের অবস্থান থেকে ‘তামাকপণ্যে বাড়লে কর, বাঁচবে তরুণ, দেশ হবে স্বনির্ভর’ এবং ‘দাম বাড়ান তামাকের, জীবন বাঁচান আমাদের’ ফেস্টুন হাতে ছবি তুলে তাদের নিজস্ব ফেসবুকে #RaiseTax Save Lives হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে আপলোড করেন।
মানববন্ধন থেকে সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে তামাকপণ্যের দাম তরুণ ও স্বল্প আয়ের মানুষদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নেয়ার দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিংয়ের চেয়ারম্যান ও সাংসদ অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত বলেন, ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ও সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্তি পেলে অর্থনৈতিকভাবে আমরা আরও বেশি স্বাবলম্বী হতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্যেও তামাক নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে সব তামাকপণ্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর পদ্ধতি বাস্তবায়ন একটি কার্যকরী পদক্ষেপ হবে।’
বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয়ের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘তামাকপণ্যে আরও কার্যকর করারোপের মাধ্যমে এসব ক্ষতিকর পণ্যকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে হবে। বিশেষত দরিদ্র মানুষ যেন তামাকপণ্য ক্রয় করতে না পারেন তা নিশ্চিত করতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এমন উদ্যোগ নিতে হবে।’
এই মানববন্ধন কর্মসূচির অন্যতম আয়োজক গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি সংস্থা প্রজ্ঞা’র (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, ‘আমাদের তামাক-কর কাঠামো ঢেলে সাজাতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে তামাকপণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতি হতে পারে একটি কার্যকর উপায়।’
তামাকবিরোধী সংগঠন ঢাকা আহছানিয়া মিশন, ভয়েস, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন, উন্নয়ন সমন্বয়, ডর্প এবং প্রজ্ঞা সম্মিলিতভাবে এই কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করছে। এতে সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছে ‘টোব্যাকো ফ্রি উই’।
তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর দাবি, তামাক-কর ও দাম বাড়ানো হলে প্রায় ১১ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবেন। দীর্ঘ মেয়াদে তিন লাখ ৯০ হাজার বর্তমান ধূমপায়ী এবং ৪ লাখ তরুণের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে এবং সিগারেট থেকে সম্পূরক শুল্ক, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ এবং ভ্যাট বাবদ সরকারের অতিরিক্ত তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে।
এ ছাড়া বিড়ি, জর্দা এবং গুলের দাম বাড়ালে স্বল্প আয়ের মানুষ এসব পণ্যের ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হবেন এবং এসব খাতে সরকারের রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে।