রাজধানী বাসীর অধিকাংশের ক্ষেত্রেই ঈদের কেনাকাটা মানেই নিউ মার্কেট। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি ও চলমান বিধিনিষেধের কারণে এবার মার্কেটটিতে তেমন আমেজ নেই। অবশ্য বরাবরের মতো ভিড় আছে আশপাশের ফুটপাতগুলোতে।
বুধবার সকাল বেলা সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত নিউ মার্কেট অনেকটাই ফাঁকা দেখা গেছে। তবে মার্কেটের সামনের রাস্তা ও তার আশপাশের সায়েন্সল্যাব থেকে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত রাস্তার ফুটপাত ও দোকানগুলোতে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। বিশেষ করে গাউছিয়া মার্কেটের সামনে ও ফুট ওভারব্রিজের উপর ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়।
ফুটপাতগুলোতে বসেছে বাহারি রঙের পোশাকের পসরা। রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে চলছে জমজমাট বেচাকেনা। তবে এখানে নারী ক্রেতাদের আধিক্য বেশি।
তবে রাস্তার বিপরীত দৃশ্য নিউ মার্কেটের ভেতরে। এখানে আশানুরূপ ক্রেতা পাচ্ছে না বিক্রতারা। কোনো রকম খরচ তোলাই এখন তাদের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে ফুটপাতের ভিড় আছে বরাবরের মতোই
নিউ মার্কেটের ২ নম্বর গেটের বামদিকের রাস্তায় মেয়েদের পোশাকের দোকান নিয়ে বসেছেন মোহাম্মদ হোসেন। এই দোকানি জানালেন, করোনার আগে যে বেচাকেনা হতো এখন তার থেকে ৭০ শতাংশ কমে গেছে। কোনো রকম খরচটা উঠছে।
গণপরিবহন না চলায় আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না বলে জানালেন মোহাম্মদ হোসেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ থেকে সবচেয়ে বেশি ক্রেতার আসে নিউ মার্কেটে। কিন্তু যানবাহন না চলার কারণে এই সব ক্রেতারা এখন আর আসতে পারছে না।
‘আগে যেখানে দিনে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বেচাকেনা করতাম এখন সেখানে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা করি।’
১ নং গেটের পাশেই কেয়া ফ্যাশন। এর স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম বলেন, ‘গতবারের থেকে প্রায় শেষ ৬০ শতাংশ বিক্রি তার কমে গেছে। কোনো রকম খরচটা উঠছে। তা ছাড়া, এবার বাজারে খুব একটা নতুন ডিজাইনের পোশাক আসেনি। সেজন্যও মানুষের কেনাকাটায় আগ্রহ কম।’
কাপড়ের দোকানে কিছুটা ক্রেতা দেখা গেলেও জুয়েলার্সের দোকানগুলো একেবারেই ফাঁকা। রূপম জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী সুমন ঘোষ জানান, তাদের বিক্রি গতবারের থেকে এবার প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে।
‘করোনার কারণে মানুষের হাতে টাকা কম, যা আছে সেটা দিয়ে কেউ স্বর্ণ কিনছে না, প্রয়োজনীয় জিনিস কিনছে। সব মিলিয়ে খুব খারাপ সময় যাচ্ছে ভাই।’
জুয়েলারির দোকানগুলো একেবারেই ফাঁকা
ঈদ সামনে রেখে নিউ মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মুরাদ আহম্মেদ তার পাঁচ বছরের ছেলের জন্য গেঞ্জি, প্যান্ট এবং এক বছরের মেয়ের জন্য জামা খুঁজছিলেন।
তিনি বলেন, ‘অনেক ঘুরাফেরা করে ক্লান্ত হয়ে কিছু প্রয়োজনীয় পোশাক কিনলাম। কিছু করার নাই ভাই, গত ঈদে পরিবারের কাউকে কিছু কিনে দিতে পারিনি করোনার কারণে। এবার না দিলে বাচ্চাদের সামনে মুখ দেখাতে পারব না।’
মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে কেনাকাটা করতে হাজারিবাগ থেকে আসা খাদিজা বেগম বলেন, ‘মেয়ের জন্য ড্রেস কিনতে এসেছি। কিন্তু নতুন কোনো ডিজাইন পাচ্ছিনা, দোকানদাররা বলছে এবার নতুম ডিজাইন করোনার কারণে কম এসেছে। দেখি আরেকটু ঘুরে যদি না পাই তাহলে অন্য জায়গায় কিনতে যাব।’
করোনার বিস্তার রোধে দোকানিদের বেশ সতর্ক দেখা গেছে। তারা ক্রেতাদের মাস্ক পরতে অনুরোধ করছে। তবে মার্কেটের ভেতরের রাস্তার ধারে অস্থায়ী দোকানগুলোতে কম সতর্কতা দেখা গেছে। ছিল ক্রেতা-বিক্রেতাদের গাদাগাদি।
নিউ মার্কেট এলাকায় ফুটপাতে ভিড়
নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট চালাতে। কিন্তু ক্রেতার ভিড় বেশি হলে তখন কঠিন হয়ে পড়ে। তাই আমরা সরকারকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা রাখার জন্য অনুরোধ করেছি, যাতে মানুষ এক সময়ে না এসে ভাগে ভাগে মার্কেটে আসতে পারে।’
মার্কেট কেমন চলছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবারের ঈদে মার্কেটের বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর মূল উদ্দেশ্য হলো কর্মচারীদের বতন বোনাস দিয়ে কোনো রকম খরচ তুলে আনা। তাও উঠছে না গণপরিবহন না চলায়। দূরের ক্রতা আসতে পারছে না, তাই বিক্রিও কম।’