করোনা মহামারিকালে কমেছে সরকারের রাজস্ব আয়, তার সঙ্গে কমেছে ব্যয় সংগতি। এমন বাস্তবতায় সব প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের সুযোগ সীমিত হয়ে এসেছে। ফলে ব্যয় সংকোচন নীতি নিয়েছে সরকার। আর তাই চলমান এই অর্থবছরে নতুন করে কোনো পূর্ত বা স্থাপনা নির্মাণের কার্যাদেশ না দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গত ২৬ এপ্রিল এক পরিপত্রে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। পরিপত্রে বলা হয়, ‘চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির আলোকে চলতি অর্থবছরের (২০২০-২০২১) অবশিষ্ট সময়ে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় নতুন কোনো পূর্ত কাজের (নির্মাণ বা স্থাপনা) কার্যাদেশ প্রদান করা যাবে না।’
সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে বুধবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্তটি নিয়ে কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে আমাদের হাতে এখন যে সময় আছে, তাতে নতুন কার্যাদেশ দিলে সেই কাজ শেষ করার আর সুযোগ নেই। আর সে কারণে এ আদেশ দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলমান ও বিদেশি সাহায্যের প্রকল্পগুলো চলমান থাকবে। তবে নতুন কোনো পূর্ত কাজের আদেশ দেয়া যাবে না।’
চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির আলোকে নেয়া সরকারের এ সিদ্ধান্ত আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলেও নিশ্চিত করেন অর্থমন্ত্রী।
সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় এ দিন গণপূর্ত বিভাগ থেকে আসা পাঁচটি দর প্রস্তাবে অনুমোদন দেননি অর্থমন্ত্রী। বলেছেন, ৩০ জুনের পর বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে।
২৬ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্রটি জারির দিনেও ছিল সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির বৈঠক। এ বিষয়টি নিয়ে সেদিন অনলাইনে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলেও সরাসরি কোনো জবাব দেননি অর্থমন্ত্রী।
সেদিন তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি অবগত নই। আমি খোঁজখবর নিয়ে জানাব।’
এরপর বুধবার ব্রিফিংয়ের শুরুতেই বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দেন সরকারের এই মন্ত্রী।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং কৃষি মন্ত্রণালয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের আওতার বাইরে থাকবে।
ওই দিনই (২৬ এপ্রিল) সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের আদলে নতুন কার্যাদেশ না দেয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগে জানানো হয়।
কোনো কোনো বিভাগে সরকারের এমন সিদ্ধান্তে হতাশা দেখা গেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, বিশেষ কোনো জরুরি কাজ বাস্তবায়নও এই সিদ্ধান্তের ফলে আটকে যেতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সড়ক বিভাগের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ধরা যাক, কোনো একটা দুর্ঘটনায় বেইলি ব্রিজ ভেঙে পড়ল। মানুষের যাতায়াতের প্রয়োজনে সেটা দ্রুত মেরামতের প্রয়োজন হবে। তবে সরকারের এমন সিদ্ধান্তের ফলে এখন কার্যাদেশ দেয়ার সুযোগ নেই।’
খুব জরুরি কাজের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রবিধান বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর আদেশে নতুন কার্যাদেশ দেয়ার সুযোগ রাখার প্রয়োজন ছিল বলে মত দেন ওই কর্মকর্তা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন সরকারের আয় কম, কিন্তু ব্যয়ের চাপটা বেশি, সেজন্য কৃচ্ছ্রসাধনের লক্ষ্যে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
অর্থবছরের শেষ সময়ে কোনো কার্যাদেশ দেয়া হলেও সেটি শেষ করা সম্ভব হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এতে চলমান উন্নয়নকাজের কোনো ক্ষতি না হলেও, সরকারের কিছু অর্থ সাশ্রয় হবে।’
কোভিড সংকটের মধ্যে এর আগেও উন্নয়নকাজে টাকা খরচে কৃচ্ছ্রসাধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। গত মার্চে অর্থ বিভাগের এক নির্দেশনায় বলা হয়, উন্নয়ন প্রকল্পের সরকারি অংশের ১৫ শতাংশ অব্যয়িত রেখে বাকি ৮৫ শতাংশ খরচ করা যাবে। এতে কোনো অনুমতির প্রয়োজন হবে না।
সে সময়ের নির্দেশনাতেও স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতকে বাদ দেয়া হয়েছিল।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অর্থ সংরক্ষণের এ বিষয়টি পুরোপুরি অর্থ মন্ত্রণালয়ের। তবে আমি নীতিগতভাবে মনে করি, কোথায় অর্থ দিতে হবে, কোথায় কাটতে হবে, তা যারা প্রজেক্ট চালায় তাদের বিচারবুদ্ধির ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত।
‘কিছু কিছু প্রকল্প আছে, যাদের আউটপুট ভালো, অগ্রগতি ভালো, বেশ গুরুত্বপূর্ণ, তাদের টাকা দেয়া উচিত। যেগুলো ভালো করছে না, খরচ করতে পারছে না বলে মনে হয়, তাদেরটা না হয় কেটে দিলাম। এটাই হওয়া উচিত।’