বাংলাদেশে করোনার টিকা রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার মধ্যেই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, টিকা না পেলে সিরামের কাছ থেকে টাকা ফেরত আনা হবে।
ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বুধবার এ কথা বলেন তিনি।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আলোচনা চলছে। টিকা পাওয়া যাবে কি যাবে না, তা আমরা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তাদের (সিরাম ইনস্টিটিউট) সঙ্গে আলোচনা চলছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও জানা যায়নি। শেষ পর্যন্ত টিকা না পাওয়া গেলে টাকা ফেরত আনার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে।’
টাকা কি ফেরত পাওয়া যাবে, এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই ফেরত পাব।’
কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে বৈধ (লিগ্যাল) সব ডকুমেন্ট আছে। মৌখিক কোনো কিছু করা হয়নি। আন্তর্জাতিক চুক্তির সব শর্ত মেনেই আমরা চুক্তি করেছি। কাজেই টাকা ফেরত না দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, টিকা কেনা বাবদ সিরামকে দুই ধাপে এ পর্যন্ত দেড় হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকা কোভিশিল্ড রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে ভারত সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে বাংলাদেশে গণটিকাদান কর্মসূচি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিষয়ে এরই মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ভারতের খ্যাতনামা টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৩ কোটি ডোজ টিকা কেনার বিষয়ে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সরকার, সিরাম ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়।
চুক্তি অনুষায়ী, প্রতি ডোজ পাঁচ ডলার করে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা দেয়ার কথা বাংলাদেশকে। গত ২৫ জানুয়ারি ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালান দেশে এসেছে। এর বাইরে ভারত সরকার আরও ২০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দেয়।
দেশের অভ্যন্তরে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ও চাহিদামতো পর্যাপ্ত টিকা তৈরি করতে না পারায় ভারত সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশে টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
ফলে বাংলাদেশে করোনার টিকা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে টিকা সংগ্রহের বিকল্প পথ খুঁজছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে চীন-রাশিয়া থেকে টিকা আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বুধবার ক্রয় কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। এখনই এ বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলা যাবে না।’
একজন সাংবাদিক জানতে চান ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে ‘ক্ষতিপূরণের’ বিষয়টি রাখা হয়েছে কি না? জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক চুক্তিতে যেসব বিধি-বিধান আছে, আমরা তার সবগুলো মেনেই চুক্তি সই করেছি। কাজেই অবশ্যই টাকা ফেরত পাব।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমাদের জীবন-মরণ সমস্যা। কাজেই টিকা সংগ্রহে একটি উৎসের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। আমাদেরকে বিকল্প উৎসের সন্ধান করতে হবে। আমরা চীন, রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। টিকা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’
ক্রয় কমিটির বৈঠকে চাল ও সারসহ ২ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকার আটটি দরপ্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়।