পুরান ঢাকার নিমতলীতে ২০১০ সালের ৩ জুন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান ১২৪ জন। সে বছরই কেমিক্যালের গুদাম মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে একটি শিল্পপল্লি স্থাপন করে সেখানে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।
পরিকল্পনা গ্রহণের ১০ বছর পার হলেও শুধু শেষ হয়েছে জমি অধিগ্রহণের কাজ। এই পরিস্থিতিতে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে কবে চালু হবে কেমিক্যাল শিল্পপল্লি?
নিমতলীর পর যতবার পুরান ঢাকায় আগুন লেগেছে, প্রতিবারই সামনে এসেছে কেমিক্যাল শিল্পপল্লির বিষয়টি। তবে সরকারের কয়েকটি দপ্তরের দীর্ঘসূত্রতায় আটকে যায় সেটি। সবশেষে শিল্পপল্লি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় বিসিককে।
শিল্পপল্লির কাজের অগ্রগতি দেখতে সরেজমিনে নিউজবাংলার প্রতিবেদক যায় মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার তুলসিখালিতে। চিত্রকোট ইউনিয়নের চিত্রকোট, গোয়ালখালী, কামারকান্দা মৌজায় ৩১০ একর জমিতে শিল্পপল্লি নির্মাণের কথা থাকলেও গিয়ে দেখা যায় নির্ধারিত জায়গায় এ-সংক্রান্ত কোনো সাইনবোর্ডও নেই। শুধুমাত্র খাম্বার ওপর কয়েকটি লাল কাপড় টাঙানো।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এটিই শিল্পপল্লির জন্য নির্ধারিত জায়গা। সবেমাত্র জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে।
বিক্রি করে দেয়ার পরও জমির মালিকরা সেখানে চাষাবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন। দেখা যায় বিক্রি করে দেয়া জায়গায় কেউ ধান, কেউ আবার সবজির আবাদ করেছেন।
মালিকরা জমি বিক্রি করার পরও চাষাবাদ করে যাচ্ছেন। ছবি:নিউজবাংলা
২০২২ সালের জুনে এটি উদ্বোধনের কথা থাকলেও প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ এখন পর্যন্ত শুরুই করা যায়নি।
আরেক বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখার কারণে সরকারি জায়গা থেকে মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে প্রভাবশালী একটি চক্র। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে সরকার, বাড়বে প্রকল্পব্যয়। বিসিক প্রকল্পটির নিরাপত্তার জন্য এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা কলেজছাত্র রায়হান প্রধান বলেন, এখানে অনেক লোক চাকরি করার সুযোগ পাবেন। স্থানীয় বেকারদের যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া হলে এলাকার বেকার সমস্যা কমবে। সে জন্য যত দ্রুত সম্ভব শিল্প পল্লিটি চালু হওয়া প্রয়োজন।
বিসিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রকল্প এলাকায় ২ হাজার ১৫৪টি প্লট তৈরি হবে। একই সঙ্গে ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। প্রকল্পটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর ২০১ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে কেমিক্যাল পল্লির প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
২০২১ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জে কেমিক্যাল পল্লি স্থাপনের জন্য জায়গা নির্বাচন হলেও জনবহুল এবং অপেক্ষাকৃত কম জায়গা হওয়ায় এর পরিবর্তে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে এ পল্লি স্থাপন করা হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক সাইফুল আলম জানিয়েছেন, জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করা হবে। সরকারি অংশের কাজ শেষে তা বুঝিয়ে দেয়া হবে মালিকপক্ষকে। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।