পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির দাবিহীন অবণ্টিত মুনাফার ২১ হাজার কোটি টাকা অবশেষে পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারি কেবল বাকি।
এই তহবিল পেলে পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকা তারল্য সংকটের সুরাহা হবে বলে আশা করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
সংস্থাটি আশা করছে, চলমান লকডাউন শেষেই এই প্রজ্ঞাপন জারি করা যাবে। তার তহবিলের ব্যবস্থাপনায় থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি আইসিবি ঈদের পরেই তারা কাজ শুরু করার বিষয়ে আশাবাদী।
চলতি বছরের শুরুর দিকে বাজারে তারল্য বাড়াতে এই লভ্যাংশ দিয়ে একটি তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ’ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবলাইজেশন ফান্ড’ নামে একটি তহবিল করার চিন্তা করা হয়। সেখানে জমা হবে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির অবন্টিত লভ্যাংশ।
বিএসইসির ’ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবলাইজেশন ফান্ড’ খসড়া নীতিমালার উপর মতামত জন্য উন্মুক্ত করে গত ৮ মার্চ। এরপর এ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নীতিমালার উপর মতামত দেয়।
খসড়া নীতিমালার উপর বিএসইসিতে লিখিত প্রস্তাব পাঠায় তালিকাভুক্ত কোম্পানির সমিতি বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেট কোম্পানি-বিএপিএলসি। তাদের বেশ কিছু আপত্তি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি
বিএপিএলসির সেক্রেটারি জেনারেল আমজাদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের যে সব বিষয়ে অসঙ্গতি মনে হয়েছে সেসব বিষয়গুলো কমিশনের কাছে জানিয়েছিলাম। এবং জেনেছি সেভাবেই তা সংশোধন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গেজেট প্রকাশ করার পর বলা যাবে আমাদের প্রস্তাবগুলো কতটা বিবেচনা করা হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী নীতিমালা চূড়ান্ত হলে, এ তহবিলও পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রজ্ঞাপনে দেরি
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ সংক্রান্ত প্রথমে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়। তারপর সেই নীতিমালার উপর জনসাধারণের মতামত নেয়া হয়। সেই মতামতের ভিত্তিতে নীতিমালা চূড়ান্ত করে অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। এখন সেটি গেজেট আকারে প্রকাশ করার পরই কার্যকর হবে।‘
কবে সেই প্রজ্ঞাপন জারি হবে-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে গেজেট প্রকাশে সরকারি প্রকাশনা সংস্থা বিজি প্রেসে আগের মতো কাজ হচ্ছে না। গেজেট প্রকাশের জন্য নির্ধারিত ফিও জমা দিতে হয়। সেটিও করোনার পরিস্থিতিতে করা যাচ্ছে না।
‘এমন অবস্থায় করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। এবং গেজেটে এ তহবিল কীভাবে পরিচালিত হবে তা উল্লেখ আছে। সে অনুযায়ী পরিচালিত হবে।’
এই তহবিল পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট দূর করবে বলে আশা করা হচ্ছে
কত টাকার তহবিল হবে সে সম্পর্কে রেজাউল করিম বলেন, এখনও তহবিলের পরিমাণ নির্ধারিত হয়নি। নীতিমালা অনুযায়ী কোম্পানিগুলোতে যে পরিমাণ অবন্টিত লভ্যাংশ আছে সেগুলো তহবিলে জমা হবে। জমা হওয়ার পরই তহবিলের পরিমাণ সম্পর্কে বলা যাবে।
ঈদের পরেই কাজ শুরুর আশা
এই তহবিলের ট্রাস্টি হিসেবে থাকবে বিনিয়োগে রাষ্ট্রায়াত্ত কোম্পানি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ-আইসিবি।
প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র বিভাস সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটি কবে থেকে পুঁজিবাজারে কার্যকর হবে সেটি গেজেট জারি না হওয়া পর্যন্ত স্পষ্ট করে বলা কঠিন। তবে ঈদের পরই আশা করা যায় সেটি বাস্তবায়ন করা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আইসিবি হয়তো তহবিলের ট্রাস্টি হিসাবে থাকবে। তবে তহবিলের সার্বিক তদারকি করবে বিএসইসি। ক্ষতিগ্রস্ত তহবিল পরিচালনা জন্য আইসিবিকে যেভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সেভাবে এ তহবিলে থাকবে আইসিবি।’
তহবিল পুঁজিবাজারের কী উপকার করবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তহবিল যেহেতু পুঁজিবাজারের জন্য ব্যবহার করা হবে সেহেতু বলা যায় এতে কিছু না কিছু উপকার তো থাকবেন। তবে প্রজ্ঞাপনের পর এ বিষয়ে বৈঠকের পর আরও ভালোভাবে বলা যাবে।’
অবণ্টিত লভ্যাংশের হিসাবনিকাশ
কোম্পানিগুলো প্রতি বছর যে লভ্যাংশ ঘোষণা করে, তার একটি অংশ কখনও বিনিয়োগকারীদের কাছে যায় না। বহু বিনিয়োগকারী শেয়ার রেখে বিও হিসাব নবায়নে ফি দেন না। ফলে হিসাবগুলো স্থগিত হয়ে যায়। আবার অনেক সময় তারা ঠিকানা নবায়ন করেন না। ফলে যারা ডিভিডেন্ট ওয়ারেন্ট পাঠিয়ে লভ্যাংশ দেয়, সেগুলো ফেরত চলে আসে।
বিনিয়োগকারীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে অনেক সময় তার মনোনীত উত্তরাধিকারী সেই টাকা আর দাবি করেন না তথ্য বা কাগজপত্রের অভাবে।
বিএসইসি দেখেছে, টাকার অংকে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অবণ্টিত বোনাস লভ্যাংশের পরিমাণ ১১ হাজার কোটি টাকা ও নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ ৬৩৪ কোটি টাকা।
সিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে অবণ্টিত বোনাস লভ্যাংশের পরিমাণ আট হাজার ৮৮১ কোটি টাকা ও নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ ৩২১ কোটি টাকা।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আট হাজার ৮০৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকার অদাবিকৃত লভ্যাংশ রয়েছে তামাক খাতের বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড-বিএটিবিসির। এরমধ্যে ৮ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা বোনাস লভ্যাংশ এবং ছয় কোটি ৪৫ লাখ টাকা নগদ লভ্যাংশ।