টানা দুই দিন ব্যাংক খাতে কিছুটা নড়চড় দেখা গেল পুঁজিবাজারে। সাধারণ বিমা খাতে বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ল আরও। নতুন যোগ হয়েছে জীবন বিমা খাত।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১২টি জীবন বিমা কোম্পানির মধ্যে ছয়টির দর বাড়ল এক দিনে যত বাড়া সম্ভব ততই। সর্বাধিক দর বৃদ্ধির ছয়টি কোম্পানিই এই খাতের। কোনো কোম্পানির দর কমেনি। তিনটির দর কেবল অপরিবর্তিত ছিল।
সাধারণ বিমা খাতের ৩৮টি কোম্পানির মধ্যে দাম কমেছে কেবল তিনটির। পাল্টায়নি দুটির। আরও বেড়েছে বেড়েছে ৩৩টির দর।
তবে ঝিমাতে থাকা ব্যাংক খাতে টানা দুই দিন বেশ কিছু কোম্পানির দর বৃদ্ধিতে এই খাত নিয়ে যে দীর্ঘ হতাশা তা কিছুটা হলেও দূর হবে কি না, এ নিয়ে কথা হচ্ছে।
গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত যে লভ্যাংশ দিয়েছে, সেটি কেবল আকর্ষণীয় নয়, অভাবনীয়ও বটে। করোনাকালে আয় কমে যাবে, লভ্যাংশ তলানিতে নামবে-এমন প্রচারের বিপরীতে ঘটেছে উল্টোটা।
যেসব ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তাদের সিংহভাগই মহামারির বছরে আয় করেছে আগের বছরের চেয়ে বেশি, লভ্যাংশও দিয়েছে ভালো। বেশ কিছু ব্যাংকে টাকা রাখলে বছর শেষে যে মুনাফা পাওয়া যায়, শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে তার চেয়ে বেশি। সঙ্গে দিয়েছে বোনাস শেয়ার।
তারপরও এই খাতে নড়চড় ছিল না গত কয়েক মাস ধরে। তবে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার কিছুটা নড়চড় দেখা গেছে, দ্বিতীয় দিন বাড়ল আরও বেশ কিছু ব্যাংকের দর।
সব মিলিয়ে এই খাতের ৩১টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫টির দর। কমেছে ছয়টির। বাকি ১০টির দর পাল্টায়নি।
টাকার অংকে সবচেয়ে বেশি প্রাইম ব্যাংকের বেড়েছে এক টাকা ১০ পয়সা।
পূবালী ও সাউথইস্ট ব্যাংকের দাম বেড়েছে ৬০ পয়সা করে।
সিটি ও এনসিসি ব্যাংকের দর বেড়েছে ৪০ পয়সা করে। ৩০ পয়সা বেড়েছে আল আরাফাহ ও ডাচ বাংলার শেয়ার দর। বাকিগুলোর দর ১০ থেকে ২০ পয়সা করে বেড়েছে।
সবচেয়ে বেশি কমেছে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের দর। ৩০ পয়সা দর হারিয়েছে কোম্পানিটি। এবি, ইবিএল, ইসলামী, মার্কেন্টাইল ও রূপালী দর হারিয়েছে ১০ থেকে ২০ পয়সা করে।
আর্থিক খাতে চাঙ্গাভাব দেখা গেছে পর পর দুই দিন। এই খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে ১২টির দাম বেড়েছে। টাকার অংকে সবচেয়ে বেশি দুই টাকা ৩০ পয়সা বেড়েছে ন্যাশনাল হাউজিং ফিনান্স্যের দর। লংকাবাংলার দর বেড়েছে ৯০ পয়সা। বে লিজিং, বিডি ফিন্যান্স, ইসলামিক ফিন্যান্সের দর বেড়েছে ৫০ পয়সা করে। বাকিগুলো ১০ থেকে ৪০ পয়সা করে বেড়েছে।
বস্ত্র খাতেরও বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। এর মধ্যে শতকরা হিসাবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ম্যাকসন্স ও মেট্রো স্পিনিং মিলসের শেয়ার দর। ১০ শতাংশের কাছাকাছি বেড়েছে দর। ডেল্টা স্পিনার্সের দরও বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেড়েছে মালেক স্পিনিং মিলসের দরও।
তারপরেও রাজা বিমা খাত
মঙ্গলবার পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির মধ্যে দুটিই ছিল বিমা খাতের। একটি রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং অপরটি সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স। দিনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ করে শেয়ার দর বেড়েছে এই দুই কোম্পানির।
এ তালিকায় ছিল সন্ধানী ইন্স্যুরেন্স, যার শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স, যার শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, যার শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, যার শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
সাধারণ বিমা খাতের মধ্যে ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। কর্ণফুলী ইন্সুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। পূরবী জেনারেল ইন্সুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লকডাউনের পুঁজিবাজারে বিমা খাতের শেয়ারের এমন উত্থান হবে তা প্রত্যাশা ছিল না। হাতে দুটি কোম্পানির বিমার শেয়ার ছিল। সেগুলো থেকে মুনাফা করে এখন অন্যান্য কোম্পানির শেয়ার ছেড়ে দিয়ে বিমা কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘বিমা খাতের শেয়ারের দর যেভাবে বেড়েছে তা অতিমূল্যায়িত হয়েছে সত্য। কিন্ত শেয়ার প্রতি দুই তিন টাকা মুনাফা নিয়ে আবার এখাতে নতুন বিনিয়োগ করছি। এতে ঝুঁকি কিছুটা কম থাকছে।’
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৪ দশমিক ১১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৩৫ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ১ দশমিক ০৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৪৯ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ২ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১১৮ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪১টির, কমেছে ১৪৭টির। দর পাল্টায়নি ৬৭টির।
লেনদেন হয়েছে মোট ১ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাস স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৩৭ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাাজর ৯৯১ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১১২টির। কমেছে ১০৭টির। দর পাল্টায়নি ৪২টির। লেনদেন হয়েছে মোট ৩৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা।