বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাট রপ্তানিতে অনন্য রেকর্ড

  •    
  • ৩ মে, ২০২১ ২১:৫০

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিভিন্ন দেশে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে ১০৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩১ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি এসেছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ।

মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যেই পাট রপ্তানিতে নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে বাংলাদেশ।

চলতি অর্থবছরের ১০ মাসেই (জুলাই-এপ্রিল) পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ১০৩ কোটি ৫৭ লাখ (১.০৩ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই পুরো অর্থবছরেও এই খাত থেকে এতো বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আসেনি।

এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি করে ১০২ কোটি ৫৫ লাখ (১.০২ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। ওই একবারই এ খাতের রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রোববার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিভিন্ন দেশে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে ১০৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩১ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি এসেছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে সংকটে পড়া চামড়া খাতকে (৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার) পেছনে ফেলে তৈরি পোশাকের পরের স্থান দখল করে নিয়েছে পাট খাত।

মহামারির পর থেকে পাটপণ্য রপ্তানি বেড়ে যাওয়ার মধ্যে গত বছরের জুলাই মাসে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকলে উৎপাদন বন্ধ করে ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী শ্রমিককে অবসরে পাঠায়।

বিজেএমসির আওতাধীন এই পাটকলগুলোতে উৎপাদিত চট, বস্তা, থলে বিদেশে রপ্তানি হতো। এরপরও এ খাতের রপ্তানি কমেনি; উল্টো বেড়েই চলেছে।

রপ্তানিকারকরা আশা করছেন, অর্থবছর শেষে এবার পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে বিদেশি মুদ্রা আয় ১৩০ কোটি (১.৩ বিলিয়ন) ডলারের মাইলফলকে পৌঁছাবে।

এই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর অভাব অনুভব করছেন এই খাত সংশ্লিষ্টরা।

ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ পাটপণ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিজেজিইএ) চেয়ারম্যান এম সাজ্জাদ হোসাইন সোহেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিজেএমসি পাটের তৈরি বস্তা, চট ও থলে রপ্তানি করত। আমরাও তাদের কাছ থেকে নিয়ে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করতাম। সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ না হলে হয়তো রপ্তানি আরও বাড়ত।’

তবে বেসরকারি পাটকলগুলো ভালোভাবে চালু থাকায় এ খাতের রপ্তানির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখা গেছে বলে জানান সোহেল।

‘এখন আবার সরকার বলছে, বন্ধ মিলগুলো পিপিপির মাধ্যমে দ্রুত চালু করা হবে। সেটা যদি হয়, ভালো হবে। রপ্তানি আরও বাড়বে।’

সোহেল বলেন, ‘সার্বিকভাবে পাট খাতের জন্য ভালো সময়ই যাচ্ছে এখন। বিশ্ব বাজারে দামও বাড়ছে। সব মিলিয়ে পাট নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখছি আমরা।’

তিনি মনে করেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অন্যান্য পণ্যের চাহিদা কমলেও পাটপণ্যের চাহিদা কমবে না। খাদ্যের জন্য ফসল ফলাতেই হবে, আর সেই ফসল মোড়কজাত বা বস্তাবন্দি করতে পাটের থলে লাগবে।

‘অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বেশ ভালো অর্ডার পাচ্ছি আমরা। আমার বিশ্বাস, পরিবেশের বিষয়টি সামনে আরও জোরালোভাবে আসবে। আর তাতে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়বে।’

কৃষি অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক এম আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, এই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়া ঠিক হয়নি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের পাটের রপ্তানি বাজার বরাবরই ভালো ছিল। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাটকল আদমজী বন্ধসহ একটার পর একটা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আমরা সেই বাজার ধরতে পারিনি।’

‘এখন মহামারির কারণে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানির যে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, সেটা আমরা কতটা কাজে লাগাতে পারব সেটাই এখন বড় বিষয়’ বলেন আসাদুজ্জামান।

মহামারির ধাক্কা লেগেছে রপ্তানি খাতের প্রায় সব সেক্টরে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তৈরি পোশাক, চামড়া, হিমায়িত মাছসহ সব খাতেই রপ্তানি আয় যখন কমছিল, সেখানে একমাত্র ব্যতিক্রম পাট।

চলতি অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ১১৬ কোটি ৭০ লাখ আয় করার লক্ষ্য ধরেছে সরকার। ১০ মাসে অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল সময়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ৯৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার। সেই লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ।

গত অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে চামড়াকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করে নিয়েছে পাট খাত।

সামগ্রিকভাবে এই অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ মোট ৩ হাজার ২০৭ কোটি ডলার আয় করেছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।

খাতভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, এই ১০ মাসে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে পাট রপ্তানিতে।

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে পাট সুতা (জুট ইয়ার্ন) রপ্তানি হয়েছে ৭১ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার ডলারের; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৩ দশমিক ২৯ শতাংশ। কাঁচা পাট রপ্তানি হয়েছে ১২ কোটি ১০ লাখ ডলারের।

পাটের তৈরি বস্তা, চট ও থলে রপ্তানি হয়েছে ১২ কোটি ৫১ লাখ ২০ হাজার ডলারের, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩১ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। পাট ও পাট সুতা দিয়ে হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৯ কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার।

এ ছাড়া এই ১০ মাসে পাটের তৈরি অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৭ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার ডলারের।

বস্তা বা ব্যাগের পাশাপাশি কার্পেটের জন্যও বাংলাদেশের পাটের চাহিদা বেড়েছে জানিয়ে বিজেজিইএ চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসাইন সোহেল বলেন, ‘কার্পেট তৈরিতে আমাদের জুট ইয়ার্ন ব্যবহৃত হয়। কোভিড-১৯ আতঙ্কে অনেকেই বাসা বা অফিসের কার্পেট পরিবর্তন করছেন। তাই আমাদের পাটের কদর বাড়ছে।’

বিশ্বব্যাপী পলিথিনের ব্যবহার কমায় পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বেড়েছে বলে জানান সাজ্জাদ হোসাইন।

‌‘ভবিষ্যতে চাহিদা আরও বাড়বে। আমরা আমাদের ‘‘সোনালি আঁশ” পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পারি, যদি এ খাতের দিকে একটু নজর দিই। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ ছাড়া আর মাত্র একটি-দুটি দেশে পাট উৎপন্ন হয়। বিশ্ব যত বদলাবে পাটপণ্যের চাহিদা ততই বাড়বে। পরিবেশের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশগুলো এ পথে অগ্রসর হবে।'

এ বিষয়ে বেসরকারি পাটকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান জাহিদ মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন শুধু বস্তা, চট ও থলে নয়, পাটসুতাসহ পাটের তৈরি নানা ধরনের পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘মহামারির কারণে পরিবেশের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসায় বিশ্বে পাটপণ্যের চাহিদা নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে। এই সুযোগটি যদি আমরা নিতে পারি, তাহলে আমাদের এ খাতের রপ্তানি অনেক বাড়বে; এই মহামারির মধ্যেই আমরা আমাদের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হব।

‘তবে আমাদের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, কাঁচা পাটের দাম খুবই চড়া। এবার ভরা মৌসুমেও প্রতি মণ পাটের দাম আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা ছিল। এখন পাঁচ হাজার টাকার বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বেশি দামে কখনোই পাট বিক্রি হয়নি।

‘চড়া চামে পাট কিনে পাটপণ্য রপ্তানি করে বাজার ধরে রাখা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। সে কারণেই আমরা সরকারের কাছে কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধের দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু এখনও বন্ধ হয়নি।’

পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিতে কয়েক বছর ধরেই খারাপ সময় যাচ্ছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাত থেকে ৮১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ২০ শতাংশ কম।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি করে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বিদেশি মুদ্রা আয় করেছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ইতিহাসে ওই একবারই এ খাতের রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৯৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। তার আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এসেছিল ৯২ কোটি ডলার।

এ বিভাগের আরো খবর