করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চলা লকডাউনের প্রভাব পড়েছে ঈদ বাজারে। ঈদ সামনে রেখে রাজধানীর অধিকাংশ শপিংমলে বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। তবে এমনও শপিংমল দেখা গেছে, যেখানে ক্রেতা নেই বললেই চলে।
সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার শপিংমল ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ার শপিংমল কিছুটা জমে উঠেছে। এই শপিংমলের প্রবেশপথে রাখা হয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। তবে তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা নেই।
টোকিও স্কয়ারের বেবি জোনের ম্যানেজার আরিফ। ঈদের বাজারে আগের চেয়ে এবার প্রায় ৬০ শতাংশ বিক্রি কমেছে বলে তার দাবি।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গত দুই দিন একটু বিক্রি বেড়েছে। তবে আজ (সোমবার) কিছুটা কম। পূর্বের ঈদ বাজারের তুলনায় ৪০ শতাংশ বিক্রি হচ্ছে।’
এই শপিংমলে একটি বোরকার দোকানে দেখা গেছে কর্মরত আছেন দুজন। কাস্টমার না থাকায় দুজনই দোকানের বাইরে অলস সময় পার করছেন। তাদের একজন ম্যানেজার আলামিন বলেন, ‘আমাদের তো প্রোডাক্ট কেনা ছাড়াও অন্য খরচ আছে। গত এক বছর বেশি ব্যবসা হয় নাই। এই কয়দিন যা বিক্রি হবার তাও হচ্ছে না। লস তো এমনিতেই হবে।’
টোকিও স্কয়ার ঘুরে দেখা গেছে, বাচ্চা ও নারীদের পোশাকের দোকানে কিছুটা ভিড় আছে। তাই অন্যদের থেকে এই দোকানগুলোতে বিক্রি বেশি হচ্ছে। তুলনামূলক পুরুষের পোশাক বিক্রি কম। এই শপিংমলের একটি জেন্টস দোকানের স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন।
তিনি বলেন, ‘গত দুই দিন আমাদের এখানে বিক্রি একটু বেড়েছে, বেশি বিক্রি হচ্ছে বাচ্চা ও নারীদের পোশাক। আজ তেমন বিক্রি নাই। জেন্টস আইটেম বিক্রি বাড়তে আরও ৪-৫ দিন সময় লাগতে পারে। পুরো মার্কেটের এই অবস্থা।’
মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের সামনে ফুটপাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ভ্যানের ওপর পণ্য নিয়ে বসেন। এখানে ক্রেতাদের কিছুটা ভিড় দেখা গেছে।
এখানকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী খোকন। তিনি বলেন, ‘সারা দিন রোদে দাঁড়ায় থাকি, দুই একটা কাস্টমার পাইতে কষ্ট হয়। আইজ দুই দিন আগের চাইতে কম। মার্কেটের ভিতরেও এই অবস্থা। আগে ঈদের আগে মাইনষের ভিড়ে মার্কেটের ভিতর হাঁটা যাইত না। এখন দেহেন ভিতরেও কাস্টমার কম।’
কৃষি মার্কেটের ভিতর একটি কাপড়ের দোকানের মালিকের নাম রানা ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বেচাকেনা তেমন নাই বললেই চলে। ২৬ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়া দোকান ভাড়া নিছি, মাসে ৬৫ হাজার টাকা দোকান ভাড়া দেই। এ ছাড়া কর্মীদের বেতন ছাড়াও নানান খরচ তো আছেই। প্রতি বছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি, একটু ভালো বেচাকেনা করব। বেচাকেনা কেমন হচ্ছে আপনি তো দেখতেছেন। প্রতি বছর এই সময় নড়াচড়া করার সময় পাই না, আর এখন আপনার সাথে বসে কথা বলতেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দোকান খোলা রাখার সময় নির্দিষ্ট করে দেয়ায় আরও সমস্যা হইছে। এখন সবাই চায় এই সময়ের মধ্যে মার্কেটে আসতে, এতে তো বেশি ভিড়ের কারণে সংক্রমণ বাড়বে। ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকলে তো যে যখন সময় পায় তখন আসবে, ভিড় তো তখন কম হবে, করোনা সংক্রমণও কম হবে।’
রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমল, বিপণিবিতানে বিক্রি আগের চেয়ে বাড়লেও ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে শ্যামলী স্কয়ার শপিং কমপ্লেক্সে। এখানে প্রবেশে নেই তেমন ভিড়। ভিতরে ঘুরে দেখা গেছে, নীরব পরিবেশ, বেশির ভাগ দোকান ক্রেতাশূন্য। কেউ কেউ অলস সময় পার করছেন।
এখানকার একটি দোকানের ম্যানেজার নিজাম উদ্দিন। অন্যান্য স্থানে ঈদ বাজার জমতে শুরু করলেও এখানে ক্রেতা নেই কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে বেশি কাস্টমার হলো স্টুডেন্ট। ইউনিভার্সিটি, কলেজ বন্ধ থাকায় স্টুডেন্টরা তো অনেকে ঢাকায় নেই। আবার কেউ কেউ কেনার মতো অবস্থায় নেই। আর আমাদের এখানে আরও কাস্টমার আসে মিরপুর, আজিমপুর, মোহাম্মদপুর ও আশপাশের জায়গা থেকে। তারা তো আসতে পারতেছে না।’
ক্রেতাশূন্য থাকার আরেক কারণ বললেন এই শপিংমলের বিসমিল্লাহ ফ্যাশনের মো. জাহিদ।
তিনি বলেন, ‘মানুষ আমাদের মার্কেট থেকে শপিং করে গাবতলী থেকে গাড়িতে উঠে চলে যায় গ্রামের বাড়ি। তা ছাড়া যারা এদিক দিয়ে যাতায়াত করতেন, তারাই আমাদের এখানে কিনতে আসতেন। যারা কিনতেন তারা তো এখন আর এই মার্কেটের সামনে দিয়ে যাতায়াত করছেন না। তাই কাস্টমার নাই। অন্যান্য জায়গায় তো মোটামুটি বেচাকেনা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের অবস্থা একেবারেই খারাপ।’