পুঁজিবাজারে বিমা খাতের শেয়ারে উল্লম্ফন-এটি পুঁজিবাজারের এক নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই খবরটি এখন আর সেভাবে চমকও তৈরি করছে না।
তবে বেশ কিছু দিন পর ঝিমাতে থাকা ব্যাংকিং খাতে নড়চড় দেখা গেছে। ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেখা গেছে আরও চাঙ্গাভাব।
এটি পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক সময়ের নতুন প্রবণতা হবে কি না, সেটি আরও কিছুদিন পর বোঝা যাবে।
সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত যে হারে লভ্যাংশ বিতরণ করেছে, সেটি অন্য কোনো খাত থেকে পাওয়া যায়নি। তবু এই খাত নিয়ে বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহ কিছুটা বিস্ময়ও জাগিয়েছে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।
অন্যদিকে বিমা খাতে উত্থান চলছে ৫ এপ্রিল লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসেও দেখা গেছে এই চিত্র। সবচেয়ে বেশি দাম বাড়া ১০টি কোম্পানির সাতটিই এই খাতের।
বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনায় যে মনযোগী হয়েছেন, সেটি লেনদেনের চিত্রও বলছে। চার মাস পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন ছাড়িয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা।
লকডাউনের কারণে বিনিয়োগকারীরা ব্রোকারেজ হাউজে যেতে পারছেন না, আদেশ দিতে হচ্ছে অনলাইনে
সব মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। এর আগে এক হাজার ৫১৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল ২৫ জানুয়ারি জানুয়ারি।
আবাও চাঙ্গা বিমাখাত
ডিএসইর লেনদেনে সোমবার সবচেয়ে বেশি শেয়ারের দর বেড়েছে সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর ৭০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৭ টাকা ৭০ পয়সা।
প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। লেনদেনে ৪৬ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫১ টাকা ৫০ পয়সা।
তাকাফুল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। শেয়ার দর ৫৬ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬১ টাকা ৯০ পয়সা।
স্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ। শেয়ার দর ৪৫ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৯ টাকা ৭০ পয়সা।
নিটল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। শেয়ার দর ৬২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৭ টাকা ৮০ পয়সা।
ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। শেয়ার দর ৫২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৬ টাকা ৫০ পয়সা।
অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। শেয়ার দর ৬১ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৬ টাকা ৩০ পয়সা।
এদিন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৫০টি বিমা কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২৫টির। কমেছে ২১টির। এবং দর পাল্টায়নি ৪টির।
দর বেড়েছে ব্যাংক ও নন ব্যাংকের শেয়ারের
তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের ৩১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে এমন ব্যাংকের সংখ্যা ছিল বেশি। এদিন দর বেড়েছে ১৩টি প্রতিষ্ঠানের। দর পাল্টায়নি আটটির। আর কমেছে ১০টির।
টাকার অংকে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার দর। বেড়েছে এক টাকা। ৩০ পয়সা করে বেড়েছে মার্কেন্টাইল ও প্রাইম ব্যাংকের শেয়ার দর।
বাকিগুলোর দর ১০ থেকে ২০ পয়সা করে বেড়েছে।
শেয়ার কেনাবেচার অর্ডার এখন দিতে হচ্ছে অ্যাপে বা ফোনে
উত্তরা ব্যাংকের শেয়ার দর দুই টাকা ৮০ পয়সা কমলেও এটি মূলত লভ্যাংশের সঙ্গে সমন্বয় হয়েছে দাম। কোম্পানিটি গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য সাড়ে ১২ শতাংশ বোনাস ও এক টাকা ১৫ পয়সা করে নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
২৫ টাকা ৪০ পয়সা দাম ছিল রেকর্ড ডেটে। বোনাস লভ্যাংশ হিসাব করলে সমন্বয় করা দাম দাঁড়ায় ২২ টাকা ৬০ পয়সা। সেই হিসাবে শেয়ারধারীদের নগদ লভ্যাংশের পুরোটাই মুনাফা হয়েছে।
তালিকাভুক্ত ২৩টি নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬টির। কমেছে তিনটির। দর পাল্টায়নি ৪টির।
টাকার অংকে সবচেয়ে বেশি শেয়ার প্রতি এক টাকা ২০ পয়সা বেড়েছে বিডিফিনান্সের শেয়ার দর। লংকাবাংলা ফিনান্সের দর বেড়েছে এক টাকা। এ ছাড়া আইডিএলসি, আইসিবি, মাইডাস ফিনান্সের দর বেড়েছে এক টাকা করে।
প্রকৌশল খাতের ৮টি কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে। তালিখাভুক্ত ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর কমেছে ১৯টির। আর দর পাল্টায়নি ১৫টির।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরে উত্থান দেখা গেলেও একদিনের ব্যবধানে তা আবারও কমে এসেছে।
এ খাতের ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে সোমবার দর বেড়েছে ১২টির। কমেছে ৩২টির। পাল্টায়নি ১২টির।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫১১ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৬ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৪৮ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৭ দশমিক ২৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১১৬ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০৫টির। কমেছে ১৭৯টির। দর পাল্টায়নি ৭০টির।
লেনদেন হয়েছে মোট ১ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৯ দশমিক ২৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৯৫৩ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৮৯টির। কমেছে ১২৫টির। দর পাল্টায়নি ৪৮টির। লেনদেন হয়েছে মোট ৬২ কোটি টাকার।