একই দিনে বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ দুই সূচকে ভালো খবর এলো।
মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যেই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পাশাপাশি অর্থনীতির আরেক সূচক রপ্তানি আয়েও নতুন মাইলফলক দেখল বাংলাদেশ।
সদ্য সমাপ্ত এপ্রিল মাসে বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করে ৩১৩ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অংক গত বছরের এপ্রিল মাসের চেয়ে পাঁচ গুণেরও বেশি। শতকরা হিসেবে গত বছরের এই সময়ের চেয়ে ৫০২ দশমিক ৭৫ শতাংশ রপ্তানি আয় হয়েছে।
তবে এই বড় উল্লম্ফনের একটি কারণ আছে। আর সেটি হলো, করোনার প্রথম ঢেউয়ে গত বছরের এপ্রিলে পণ্য রপ্তানি বড় ধরনের হোঁচট খায়। রপ্তানি নেমে যায় ৫২ কোটি ডলারে। সেই বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পণ্য রপ্তানি। মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও সেটি অব্যাহত আছে।
করোনার কারণে গত বছরের এপ্রিলে সাধারণ ছুটির কারণে অধিকাংশ শিল্পকারখানা তিন সপ্তাহের মতো বন্ধ ছিল। সে কারণে রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমে যায়।
এপ্রিল মাসের এই বড় প্রবৃদ্ধির কারণে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ১০ মাসের জুলাই-এপ্রিল) হিসাবে রপ্তানি আয়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে বাংলাদেশ। অথচ নয় মাস পর্যন্ত অর্থাৎ জুলাই-মার্চ হিসাবে শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ নেতিবাচক (ঋণাত্মক) প্রবৃদ্ধি ছিল।
করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিধিনিষেধ আরোপ করলেও তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানার উৎপাদন চালানোর সুযোগ দেয়। তাই রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। যেহেতু গত বছরের এপ্রিলে রপ্তানি তলানিতে নেমেছিল, তাই এবার প্রবৃদ্ধি আকাশছোঁয়া।
লকডাউনেও এবার খোলা পোশাক কারখানা। আর পোশাক শ্রমিকদের শ্রমে ঘামেই রপ্তানিতে এসেছে প্রবৃদ্ধি
তবে ২০১৯ সালের এপ্রিলে ৩০৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। তার তুলনায় গত মাসে রপ্তানি বেড়েছে ১ দশমিক ৬২ শতাংশ।
পণ্য রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ তথ্য রোববার রাতে প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি।
তাতে দেখা যায়, তৈরি পোশাক, পাট ও পাটপণ্য, চামড়া ও চামড়াপণ্য, হোম টেক্সটাইল, প্লাস্টিক পণ্য, রাসায়নিক পণ্য ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফেরার কারণেই সার্বিকভাবে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে হিমায়িত খাদ্যের রপ্তানি কমেছে।
সার্বিকভাবে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ৩ হাজার ২০৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। এতে চলতি বছর টানা চার মাস পর ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে ফিরল পণ্য রপ্তানি আয়।
তবু লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয়
চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে আরও ৮৯৩ কোটি ডলার প্রয়োজন। মে ও জুন মাসে এই পরিমাণ রপ্তানি অসম্ভবই বলা চলে। কারণ, গত ১০ মাস গড়ে ৩২০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। তার আগের বছর রপ্তানি হয়েছিল ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলারের পণ্য।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে চলতি অর্থবছরে ৪৮ বিলিয়ন (৪ হাজার ৮০০ কোটি) ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে সরকার, যা গত অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ৪০ লাখ (৩৩.৬৭ বিলিয়ন) ডলার আয় করে, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় কম ছিল ২৬ শতাংশ।
পোশাক ও পাট খাতে সুসময়
তৈরি পোশাকের রপ্তানি আবার ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে দুই হাজার ৬০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি।
রপ্তানি আয়ে আকর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি হয়েছে পাট ও পাটজাত পণ্যেও। পোশাক খাতের পরেই প্রবৃদ্ধির হার এই খাতে বেশি
আলোচ্য সময়ে নিট পোশাকের রপ্তানি ১৫ শতাংশ বাড়লেও ওভেন পোশাকের রপ্তানি কমেছে দুই দশমিক ৭১ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ১০৩ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি।
এ ছাড়া ৯৫ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৫৪ শতাংশের বেশি।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৭৬ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়া পণ্য, ৪৩ কোটি ডলারের প্রকৌশল পণ্য, ৩৯ কোটি ডলারের হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে চামড়া ও চামড়া পণ্যে সাড়ে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
রেমিট্যান্টে বিস্ময়
রোববার সন্ধ্যায় রেমিট্যান্সের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, এপ্রিল মাসে গত বছরের এপ্রিলের রেমিট্যান্স বেড়েছে ৮৯ দশমিক ১১ শতাংশ।
প্রবাসী আয়ে এর আগে কখনও এই পরিমাণ প্রবৃদ্ধি হয়নি।