করোনাকালে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তের আর্থিক চাপ কতটা, সেটি বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রমে ফুটে উঠেছে। বাজারদরের চেয়ে কম দামে পণ্য নিতে এবার যে চেষ্টা, তা আর কখনও দেখা যায়নি।
ফলত, এবার রোজায় চলতি বছর রেকর্ড পরিমাণ পণ্য বিক্রি করেছে সরকারি সংস্থাটি।
তবে স্বল্পমূল্যে সংস্থাটির পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের ইতি টানা হচ্ছে আপাতত। আগামী বৃহস্পতিবারের পর আবার এই পণ্য বিক্রি শুরু হবে আগামী জুনে।
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১৭ মার্চ থেকে পণ্য বিক্রি শুরু করে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবি। এরপর রোজাকে কেন্দ্র করে ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয় বিশেষ পণ্য বিক্রি কার্যক্রম।
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবীর নিউজবাংলাকে জানান, ঈদের আগে শেষ বিক্রি হবে বৃহস্পতিবার। পরে জুন থেকে আবার বিক্রি কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘এবার রমজানে অন্য সব বছরের চেয়ে অনেক বেশি পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করছে টিসিবি।’
টিসিবির নিয়ম অনুযায়ী একজন ভোক্তা দুই থেকে চার কেজি চিনি, দুই কেজি ডাল, দুই থেকে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল, ছোলা দুই থেকে তিন কেজি ও খেজুর এক কেজি কিনতে পারেন।
স্বস্তি দেয় টিসিবি
গত ১ এপ্রিল থেকে সারা দেশে ৫০০ ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি হয়। রাজধানীতে ১০০টি ট্রাকসহ ঢাকা জেলায় ১৩৫ ট্রাকে বিক্রি হয়েছে পণ্য।
চট্টগ্রাম শহরে ২০টি এবং অন্যান্য বিভাগ ও জেলায় বাকি ট্রাকে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। প্রত্যেক ডিলারকে ট্রাকে ১ হাজার থেকে ১২০০ লিটার ভোজ্যতেল, প্রায় সমপরিমাণ পেঁয়াজ, ৮০০ কেজি চিনি, ৬০০ কেজি মসুর ডাল ও ৪০০ কেজি ছোলা দেয়া হয়।
প্রতি কেজি চিনি, মসুর ডাল ও ছোলা ৫৫ টাকা ধরে, সয়াবিন তেল ১০০ টাকা ও পেঁয়াজ ২০ টাকা। ভোজ্যতেলের বিক্রি মূল্য প্রথমে ছিল ৯০ টাকা। কিন্তু রোজার কারণে সেটা ১০ টাকা বাড়িয়ে লিটারপ্রতি দাম ধরা হয় ১০০ টাকা।
এর আগে এক দফায় কেজিতে চিনি, মসুর ডাল ও পেঁয়াজের দাম ৫ টাকা এবং তেল ১০ টাকা বাড়ানো হয়। তার পরেও এই দাম মানুষের জন্য অনেকটাই স্বস্তিদায়ক।
খোলাবাজারে চিনির দাম ৭০ টাকার বেশি, ডালের কেজি কমসে কম ৭০ টাকা, পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা আর ভোজ্যতেল ১৪০ টাকার কমে নয়।
চাহিদা তুঙ্গে
করোনার কারণে বাজারে পণ্যের দাম হয়েছে অস্বাভাবিক। মানুষের আয় কমে গেছে, অন্যদিকে বেড়ে চলেছে পণ্যমূল্য। এমন অবস্থায় স্বল্প আয়ের মানুষের স্বস্তি দিতে এগিয়ে আসে টিসিবি।
অন্যান্য বছর রমজানে টিসিবি পণ্য বিক্রি শুরু করলেও ক্রেতার তেমন দেখা মেলে না। কিন্তু এবার প্রথম থেকেই টিসিবির পণ্য কিনতে ক্রেতাদের লম্বা লাইন দেখা গেছে।
রমজান উপলক্ষে বাজারদরের চেয়ে অনেকটা কম দামে পণ্য বিক্রি করে টিসিবি। এসব পণ্য কিনতে দীর্ঘ লাইনে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। প্রখর রোদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে পণ্য নেন সাধারণ মানুষ। তারা জানান, সংকটের মধ্যে এমন উদ্যোগ সারা বছর চলা প্রয়োজন।
রেকর্ড পণ্য বিক্রি
১৭ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সাড়ে ৫ হাজার টন তেল বিক্রি করেছে টিসিবি। আর ১ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত ১৮ হাজার টন বিক্রি করে টিসিবি। মোট বিক্রি হয় ২৩ হাজার টন।
রমজানকে কেন্দ্র করে মোট ১৬ হাজার টন চিনি বিক্রি করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠান।
১৭ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১১ হাজার মেট্রিকটন।
প্রতি বছর ৫০০ মেট্রিকটন খেজুর বিক্রি করে এ প্রতিষ্ঠান। চাহিদা বেশি থাকার কারণে এবার রোজার ১৫ দিনেই শেষ হয়ে যায় খেজুর বিক্রি। আগামী বছর থেকে রোজার সময় খেজুর বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে।
এ সময়ে ৭ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন ছোলা বিক্রি হয়েছে।
মাস্ক বিতরণ
ঢাকায় সোমবার থেকে বিনা মূল্যে মাস্ক বিতরণও শুরু করেছে টিসিবি। করোনায় সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নিচ্ছে টিসিবি।
প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ হাজার মাস্ক দেয়া হয়েছে। কাল থেকে শুরু হবে বিতরণ কার্যক্রম।’