করোনা মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণের জন্য সোমবার থেকে আবেদন করতে পারবেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা।
প্রাথমিক পর্যায়ে আগ্রহীদের ব্র্যাক ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক এবং আইডিএলসি ফাইন্যান্স-এ আবেদন করতে হবে।
পরবর্তীতে এসএমই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে চুক্তি সই হওয়া বাকি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও আবেদন করা যাবে। আবেদনপত্র পাওয়া যাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান রোববার নিউজবাংলাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা এবং পল্লি এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকারের দ্বিতীয় দফার প্রণোদনার আওতায় এই ঋণ দেয়া হবে।
কর্মসূচির আওতায় মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের ৩০০ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার লক্ষ্য রয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশনের। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা এবং আগামী অর্থবছরে ২০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে।
এই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই ১১টি ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
গত ২১ মার্চ ২০২১ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পরিচালক পর্ষদের ১২০তম সভায় এই ঋণ কর্মসূচি বিতরণবিষয়ক নীতিমালা ও নির্দেশিকা অনুমোদন করা হয়।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় উদ্যোক্তারা ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন। গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের পরিমাণ হবে সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ২৪টি সমান মাসিক কিস্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করা যাবে।
নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকের চাহিদাকৃত ডকুমেন্টসহ ‘সম্পূর্ণ বা পরিপূর্ণ ঋণ আবেদনপত্র’ ব্যাংকের কাছে দাখিল করতে হবে। এরপর ঋণ মঞ্জুর হলে গ্রাহকের অনুকূলে বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক।
সাধারণভাবে একক ও যৌথ মালিকানাধীন উদ্যোগের অনুকূলে ঋণ বিতরণ করা হবে। তবে প্রান্তিক ক্ষুদ্র, বিশেষ করে নারী-উদ্যোক্তাদের ঋণের আওতায় আনার লক্ষ্যে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্ক ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ পাঁচজন উদ্যোক্তার অনুকূলেও গ্রুপভিত্তিক ঋণ বিতরণ করা যাবে।
এ প্রসঙ্গে ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, উৎপাদনশীল ও সেবা এ দুই খাতের উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করা হবে মোট ঋণের ৫০ শতাংশ। এর আগে এসএমই ফাউন্ডেশনের ক্রেডিট হোলসেলিং কর্মসূচির আওতায় সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হয়। তবে নতুন প্যাকেজের আওতায় একজন উদ্যোক্তা সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ পর্যন্ত ঋণ পাবেন। বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বার থেকে পাওয়া সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়া হবে। তবে উদ্যোক্তারা সরাসরি ব্যাংকেও ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই ফাউন্ডেশন অংশীদার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুবিধাজনক এক বা একাধিক শাখায় ফোকাল কর্মকর্তা নির্ধারণ করা হয়েছে। উদ্যোক্তারা ফোকাল কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। ফোকাল কর্মকর্তা এসএমই ফাউন্ডেশন, ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও শাখা এবং উদ্যোক্তাদের সাথে ঋণের বিষয়টি সমন্বয় করবেন।
এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক নাজিম হাসান সাত্তার জানান, দেশের বিভিন্ন এসএমই ক্লাস্টার, অ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বারের সদস্যসহ সারা দেশের সব শ্রেণির নারী-উদ্যোক্তারা এই প্যাকেজের আওতায় ঋণ পাবেন।
এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক ফারজানা খান জানান, ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য, যেকোনো মূল্যে বেশিসংখ্যক নারী-উদ্যোক্তার ঋণ পাওয়া নিশ্চিত করা। প্যাকেজের আওতায় বরাদ্দকৃত অর্থের ন্যূনতম ২৫ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করার লক্ষ্য রয়েছে। কিন্তু ফাউন্ডেশন আশা করছে নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যেই ৫০ শতাংশের বেশি ঋণ বিতরণ সম্ভব হবে।